—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গত মরসুমে (নভেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর) ১৬ লক্ষ চাষির কাছ থেকে ৫৫ লক্ষ টন ধান কিনেছিল রাজ্য সরকার। এই মরসুমে মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটা বেশি ধান কেনার কথা জানিয়েছি খাদ্য দফতর। হাতে আর মাত্র ৪৫ দিন সময় রয়েছে (সেপ্টেম্বরে ধান কেনা কার্যত বন্ধ থাকে)। তার মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ তো দূর, গত বছরকে ছাপানো যাবে কি না, সে নিয়েই সন্দেহ রয়েছে খাদ্য দফতরের একাংশের। এ দিকে, গত সপ্তাহে খাদ্য ভবনে একটি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সামনের মরসুমে ৬৮ লক্ষ টন ধান কেনা হবে। ধান বিক্রির পরিমাণ জেলা ঠিক করবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। খাদ্য দফতরের গুদামের কাছে সিপিসি খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই মরসুমে রাজ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ১৩ লক্ষের বেশির চাষির কাছ থেকে ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। গত বছর এই সময় ধান কেনা হয়েছিল সাড়ে ৫৪ লক্ষ টন। হাতে মাত্র দেড় মাস, এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না, তা বৈঠকেই মন্ত্রী থেকে দফতরের অন্য কর্তারা মেনে নিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেন, “ভোটের জন্য মূল লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অসুবিধা হচ্ছে। তবে গত বছরের চেয়ে বেশি ধান কেনা যাবে বলেই মনে হচ্ছে। ভোটের সময়েও আমরা ধান কিনেছি। চাষিরা যাতে সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারে, তার জন্যে সব রকম চেষ্টা করছি।”
ধান কেনার গতি কম কেন? খাদ্য দফতরের দাবি, গত মরসুমে আমন ধান ওঠার পর থেকেই বাজার ‘চাঙ্গা’ ছিল। সহায়কমূল্যে কুইন্ট্যাল প্রতি ধানের দামের (২১৮৩ টাকা) তুলনায় খোলা বাজারে ধানের দাম ১০০-১৫০ টাকা বেশি ছিল। ফলে চাষিদের সহায়কমূল্যে ধান বিক্রিতে জানুয়ারি মাসের পরে সে ভাবে আগ্রহ ছিল না। দফতরের দাবি, এ মাসে খোলা বাজারে চালের চাহিদা কম থাকায় চালকল মালিকেরা খোলা বাজারে ধান কম কিনছে। সে জন্য সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রিতে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা, পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “প্রাথমিক চাহিদা পূরণ হয়ে গিয়েছে। পরের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণের জন্যে চেষ্টা করা হচ্ছে।”
৫৪ লক্ষ টন ধান কিনতেই সরকার যেখানে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে এ বছরে ৬৮ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রাখার কারণ কী? দফতরের কর্তাদের দাবি, খোলা বাজারে ধানের দাম কম থাকলে, সহায়কমূল্যে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেত। কোনও চাষি যাতে ধান বিক্রি করতে এসে ফিরে না যান, সে জন্যই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে রাখা হয়। রাজ্যে গণবন্টন ব্যবস্থা, মিড-ডে মিল ও সরকারি প্রকল্পের জন্য ৫২ লক্ষ টন ধানের প্রয়োজন। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এ বছর একজন চাষি আমন ও বোরো–দু’টি মরসুমেই ধান সহায়ক মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। দুই বর্ধমান, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, কোচবিহারের মতো জেলা বেশি চাষিকে সহায়কমূল্যে ধান বিক্রি করার সুযোগ দেওয়ার জন্য একবারের বেশি ধান একজন চাষির কাছে কিনত না। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কোনও জেলা এ রকম আলাদা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।