Girl Crossed North Channel

জেলিফিশের আক্রমণেও অবিচল ‘জলকন্যা’ সায়নী

২০১৭-এ ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন সায়নী। তখনই, কালনার ‘জলকন্যা’ জানিয়েছিলেন, ‘লক্ষ্য সপ্তসিন্ধু জয়’।

Advertisement
কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫০
নর্থ চ্যানেল জয়ের পরে জাতীয় পতাকা হাতে সায়নী।

নর্থ চ্যানেল জয়ের পরে জাতীয় পতাকা হাতে সায়নী। নিজস্ব চিত্র।

কনকনে ঠান্ডা জলে সাঁতার কাটতে কাটতে শরীর অসাড় হয়ে এসেছিল। প্রায় ৪৮ কিলোমিটার জলপথে জেলিফিসের আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়েছে। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ। সব প্রতিকূলতাকে হারিয়ে কালনা শহরের সায়নী দাস শুক্রবার মধ্যরাতে জয় করলেন নর্থ চ্যানেল। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা সাঁতারু যিনি এই কৃতিত্বের অধিকারী হলেন। নর্দান আয়ারল্যান্ড থেকে স্কটল্যান্ড পর্যন্ত এই চ্যানেলটি অতিক্রম করতে সায়নীর সময় লেগেছে ১৩ ঘণ্টা ২২ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড।

Advertisement

২০১৭-এ ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন সায়নী। তখনই, কালনার ‘জলকন্যা’ জানিয়েছিলেন, ‘লক্ষ্য সপ্তসিন্ধু জয়’। পরে একে একে তিনি অতিক্রম করেছেন ক্যাটালিনা, রটনেস্ট, মলোকাই, কুকস্টেট চ্যানেল। কখনও উত্তাল ঢেউ ভেঙে, কখনও হাঙরের আক্রমণ সামলে পৌঁছেছেন লক্ষ্যে। গত ৩০ এপ্রিল নিউজিল্যান্ডের কুক স্ট্রেট অতিক্রম করে সায়নী জানিয়েছিলেন, এ বছরই নর্থ চ্যানেল অতিক্রম করতে চান তিনি।

সম্প্রতি মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে সায়নী উড়ে যান আয়ারল্যান্ডে। কনকনে ঠান্ডা জলে কিছুদিন অনুশীলনের পরে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। স্থানীয় চিকিৎসকেরা অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে তাঁর জ্বর কমান। আয়ারল্যান্ডে ২২ অগস্ট থেকে দুর্যোগ শুরু হয়। ব্যাপক ঝড় বৃষ্টির কারণে ২৭ অগস্ট পর্যন্ত চ্যানেলে নামা নিষেধ ছিল।

অভিযান শুরুর আগে জলকন্যাকে ভাবিয়ে তুলেছিল নর্থ চ্যানেলের কনকনে ঠান্ডা জল। তিনি জানতেন, সেই জলেই দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে সাঁতার কাটতে হবে। সায়নীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নর্থ চ্যানেলের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য বিশেষ অনুশীলন করতে হয়েছে তাঁকে। বাড়িতে বরফ গলা জলে দীর্ঘ সময় শরীর ডুবিয়ে রাখতে হয়েছে।

শুক্রবার নর্থ চ্যানেল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে জলে নামার অনুমতি দেয়। সকাল ৭টা ৪৯ মিনিটে শুরু হয় সাঁতার কাটা। ভারতের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সায়নীকে অনুসরণ করেছে বোট। তাতে ছিলেন মা-বাবা। অভিযান দেখার জন্য সমাজমাধ্যমে একটি লিঙ্ক দিয়েছিলেন সায়নীর বাবা অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রাধেশ্যাম দাস। অনেকেই তাতে চোখ রেখেছিলেন। সায়নীর পরিবার জানিয়েছে, সাঁতার শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরে নিজের অনুকূলে স্রোত পেয়ে সাঁতারে গতি বাড়িয়ে দেন জলকন্যা। তার পরে কয়েক কিলোমিটার তাঁকে স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার কাটতে হয়েছে। শেষ তিন কিলোমিটার ছিল সব থেকে কঠিন। অভিযান কালে তাঁকে দেওয়া হয় কলা, ফলের জুস এবং প্রোটিন পাউডার।

রাধেশ্যাম বলেন, ‘‘মেয়ের সাফল্য চেয়ে বহু মানুষ গভীর রাত পর্যন্ত জেগে ছিলেন। তাঁদের হতাশ করেনি মেয়ে। একই বছরে দু’টি চ্যানেল অতিক্রম করল সায়নী। এ বার ঢেউ না থাকলেও মেয়েকে অজস্র জেলিফিসের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। ওর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়েছে।’’ তিনি জানান, ৬ সেপ্টেম্বর তাঁদের দেশে ফেরার বিমানের টিকিট রয়েছে। সপ্তসিন্ধুর পাঁচটি চ্যানেল অতিক্রম করেছে মেয়ে। বাকি জাপানের সুগারু এবং স্পেনের জিব্রাল্টা। তাঁর বিশ্বাস, ‘‘ওই দুই চ্যানেলও সফল ভাবে অতিক্রম করবে সায়নী।’’ সফল অভিযান শেষে ক্লান্ত বিধ্বস্ত
সায়নী জানান, দেশের প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে এই চ্যানেল জয় করতে পেরে ভাল লাগছে। আরও ভাল লাগছে এশিয়ার প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসেবে পাঁচটি চ্যানেল জয় করতে পেরে।

শুক্রবার গভীর রাতে সায়নীকে ফোনে শুভেচ্ছা জানান শিল্পদ্যোগী তথা এস কে এম স্পোর্টস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুশীল মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘পাঁচটি চ্যানেল জয়ের রেকর্ড এশিয়ার কোনও মহিলা সাঁতারুর নেই। কালনায় ফিরলে সায়নীকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement