Child Marriage

স্কুলে ভর্তির সময়েই বাল্যবিবাহ রুখতে অঙ্গীকার

স্কুলটিতে পড়ুয়া ৩২৫ জন। ছাত্রী প্রায় ১৬০ জন। ৯০ শতাংশ পড়ুয়াই তফসিলি জাতি বা জনজাতির। স্কুল সূত্রের খবর, গত শিক্ষাবর্ষে বেশ কয়েক জন পড়ুয়া স্কুল ছেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যায়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:০৬

— প্রতীকী চিত্র।

স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই নাবালিকার বিয়ে ঠিক করেছিল পরিবার। খবর পেয়ে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে নাবালিকা বিয়ের কুফল বোঝান শিক্ষক, শিক্ষিকারা। বিয়ে বন্ধ হয়। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয় ওই ছাত্রী।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ভাল্কীপটি আশুতোষ উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ঘটনা একেবারেই বিচ্ছিন্ন নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, অনেক সময় স্কুলের ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর কাছে এ ধরনের খবর পোঁছয় না। টের পায় না সমাজকল্যাণ দফতর বা প্রশাসন। আবার বিয়ে রোখার পরেও নজরদারির অভাবে কয়েক দিন পরে বিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এ বার তাই স্কুলে ভর্তির সময়েই অভিভাবকদের কাছ থেকে মেয়ের কম বয়সে বিয়ে না দেওয়ার অঙ্গীকার করিয়ে নিচ্ছে ওই স্কুল। ভর্তির আবেদনের সঙ্গেই অঙ্গীকারপত্র দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বাল্যবিবাহ না দেওয়ার সঙ্গে নিয়মিত স্কুলে পাঠানোরও উল্লেখ রয়েছে। অন্যথা হলে, স্কুল ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়েছে। এ পর্যন্ত তেমন অঙ্গীকারপত্র জমা দিয়েছেন ৬৫ জন অভিভাবক। জেলা শিশুকল্যাণ কমিটির সদস্য শৌভিক বিশ্বাস বলেন, “এই উদ্যোগ সাধুবাদযোগ্য। অভিভাবক ও পড়ুয়া, দু’তরফেই সচেতনতা জরুরি।”

স্কুলটিতে পড়ুয়া ৩২৫ জন। ছাত্রী প্রায় ১৬০ জন। ৯০ শতাংশ পড়ুয়াই তফসিলি জাতি বা জনজাতির। স্কুল সূত্রের খবর, গত শিক্ষাবর্ষে বেশ কয়েক জন পড়ুয়া স্কুল ছেড়ে ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যায়। কৃষিকাজে যোগ দেয় কয়েক জন। বাড়িতে গিয়ে বোঝানোয় কিছু পড়ুয়া স্কুলে ফেরে। অভিভাবকেরা দাবি করেন, অভাবের সংসারে মেয়ের বিয়ে দিতে পারলে তাঁরা নিশ্চিন্ত। অভিভাবক সুকল মাড্ডি, সঙ্গীতা সাহারা বলেন, “লিখিত অঙ্গীকার করা থাকলে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে ঠিক করার আগে দু’বার ভাবতে হবে। স্কুল খুব ভাল করছে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, পূর্ব বর্ধমানে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ২০৫টি নাবালিকার বিয়ে আটকানো হয়েছিল। ২০২৩-২৪-এ সংখ্যাটা ১২৯। চলতি অর্থবর্ষে অক্টোবর পর্যন্ত ৭৭টি বিয়ে আটকেছে সমাজকল্যাণ দফতর ও পুলিশ। আউশগ্রামের স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুদীপকুমার দে বলেন, “স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবে নাবালিকা বিয়ের কুফল নিয়ে সচেতন করা হয়। শিক্ষক, শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করেন। তার পরেও কিছু ঘটনা ঘটে। এ বার অভিভাবকদের দিয়ে অঙ্গীকারপত্রে সই করানোর পাশাপাশি, বোঝানোও হচ্ছে। আমরা আশাবাদী।”

গুসকরা ২ চক্রের স্কুল পরিদর্শক সোমনাথ সেনের দাবি, ওই স্কুল যে ভাবে উদ্যোগী হয়েছে, তাতে স্কুলছুট ও বাল্যবিবাহ দুই-ই ঠেকানো সম্ভব হবে। মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “এই উদ্যোগের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আমি দেখতেও যাব।” রাজ্যের নানা জেলায় বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই প্রশাসন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সেই প্রেক্ষিতে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, মনে করছেন শিক্ষাবিদেরা।

Advertisement
আরও পড়ুন