TMC MLA Manik Bhattacharya

কাঞ্চনের পর মানিক! ফের মেডিক্যাল বিল নিয়ে বিতর্ক, জেল সুপারকে ডেকে বৈঠক বিধানসভার স্পিকারের

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে মানিক ভট্টাচার্যের মেডিক্যাল বিলটি স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হয়। সেই বিল খতিয়ে দেখার পর স্পিকার ডেকে পাঠান প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৩:৩২
Assembly Speaker Biman Banerjee held a meeting with the Superintendent of Presidency Jail regarding TMC MLA Manik Bhattacharya\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s medical bill

কাঞ্চন মল্লিক-মানিক ভট্টাচার্য। —ফাইল ছবি।

তৃণমূলের অভিনেতা বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের স্ত্রীর ছ’লক্ষ টাকার মেডিক্যাল বিল বিধানসভায় জমা পড়া নিয়ে বিস্তর শোরগোল হয়েছিল। তার পর আবার তৃণমূলের এক বিধায়কের মেডিক্যাল বিল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।

Advertisement

এই বিধায়ক পলাশিপাড়ার। নাম মানিক ভট্টাচার্য। যিনি ঘটনাচক্রে, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। বহু দিন কারাবাসের পর সম্প্রতি জামিন পেয়েছেন। পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিকের মেডিক্যাল বিল জমা পড়া নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিধানসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি তিনি কয়েকটি মেডিক্যাল বিল বিধানসভার টিএ-ডিএ সেকশনে জমা দেন। বিলগুলি খতিয়ে দেখার পর একটি বিল নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি জানানো হয় বিধানসভার সচিবালয়ে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে তা স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হয়। বিলটি খতিয়ে দেখার পর স্পিকার ডেকে পাঠান প্রেসিডেন্সি জেলের সুপারকে। সোমবার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করতে বিধানসভা ভবনে এসেছিলেন প্রেসিডেন্সি জেলার সুপার।

স্পিকারের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠকের পর নিঃশব্দে বিধানসভা ছাড়েন ওই আধিকারিক। কিন্তু কী কারণে জেল সুপারকে বিধানসভায় ডাকা হয়েছিল, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি বিধানসভার স্পিকার। তবে বিধানসভা সূত্রের খবর, বিধায়ক মানিক যে সব বিল বিধানসভায় জমা দিয়েছিলেন, তার একটি হল তাঁর কারাবন্দি থাকাকালীন সময়ের। নিয়মানুযায়ী, কোনও বন্দি জেলে থাকাকালীন তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় দায়ভার জেল কর্তৃপক্ষেরই। তাই সেই সময় জেলে কোনও চিকিৎসা হলে তা বহন করার দায় অন্য কারও নেই। সেই সূত্রেই বিধানসভার অন্দরে প্রশ্ন উঠছে, কারাবন্দি থাকার সময় চিকিৎসার খরচের বিল মানিক কী ভাবে বিধানসভায় জমা দিতে পারেন? তবে বিধানসভার অন্য একটি সূত্রের বক্তব্য, মানিক যদি জেলযাত্রার আগে কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, ধারাবাহিক ভাবে সেই রোগের চিকিৎসা চলতে থাকে এবং তিনি জেলে যাওয়ার পরেও বাইরে থেকে সেই সংক্রান্ত চিকিৎসা বা ওষুধের বন্দোবস্ত তাঁর পরিবারকে করতে হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিধানসভায় বিধায়ক হিসেবে মানিক নিজের সেই মেডিক্যাল বিলও জমা দিতেই পারেন। প্রসঙ্গত, বিধানসভার তরফে বিলের সাপেক্ষে বিধায়কদের চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ বহন করা হয়। সেই জন্যেই বিল জমা দেওয়া। যেমন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীর সন্তানপ্রসবের সময়ে।

কাঞ্চনের ক্ষেত্রে বিলের পরিমাণ নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল। মানিকের ক্ষেত্রে যে ভাবে স্পিকার জেলের সুপারকে ডেকে পাঠিয়ে মেডিক্যাল বিলের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন, তাতেই জল্পনা তৈরি হয়েছে বিধানসভার সচিবালয়ে। সাধারণত কোনও বিধায়ক মেডিক্যাল বিল জমা দিলে টিএ-ডিএ সেকশন থেকেই তা অনুমোদন পেয়ে যায়। যদি না তাতে কোনও বড় ধরনের ‘অসঙ্গতি’ ধরা পড়ে। কাঞ্চনের বিলের ক্ষেত্রে ‘অস্বাভাবিকতা’ থাকায় বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়েছিল স্পিকারকে। এ ক্ষেত্রে তেমনই হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে খবর। বিলে ‘অসঙ্গতি’ লক্ষ করার পরেই সচিবালয়ের তরফে স্পিকারের ‘হস্তক্ষেপ’ প্রার্থনা করা হয়। তাই তড়িঘড়ি জেল সুপারকে ডেকে স্পিকার বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।

মেডিক্যাল বিল নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে জানতে মানিককে ফোন করা হয়েছিল। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাবের অপেক্ষা করছে আনন্দবাজার অনলাইন। মানিক ফোন ধরেননি। তাঁর বক্তব্য পাওয়া গেলে সেটি এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।

উল্লেখ্য, পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক এবং পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত। ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তিনি প্রায় ২৩ মাস প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি ছিলেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কলকাতা হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে। ছাড়া পেয়েই মানিক বিধানসভায় নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেছেন। অধিবেশন ছাড়াও নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন বিধানসভার কমিটির বৈঠকে। তার মধ্যেই ওই বিল জমা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন