— প্রতীকী চিত্র।
জরিমানা মেটানোর ‘ছুতোয়’ জেলে বসেই খাগড়াগড় বিস্ফোরণে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি তারিকুল ওরফে সাদিক সুমন টাকা সংগ্রহ করেছিল বলে দাবি করছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, জেলের মেয়াদ শেষে জরিমানার টাকা মেটানোর কথা মাথায় ছিল তারিকুলের। সেই জরিমানা না মেটালে তার পক্ষে জেল থেকে বার হওয়া মুশকিল। দ্রুত বাংলাদেশে ফিরতেও পারত না। সে জন্যই এর মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিল তারিকুল। একই সঙ্গে গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, একাধিক লোককে জঙ্গি মতাদর্শে উদ্বুদ্ধও করছিল সে। জেরায় তারিকুল জানিয়েছে, জেলে কয়েক জনকে ‘ধর্মান্তরিত’ করার কাজও সে করেছে। অসম পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া মহম্মদ আব্বাস আলিকে বিভিন্ন জঙ্গি নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের পরামর্শও দিয়েছিল তারিকুল।
সোমবার বহরমপুর জেলে বন্দি তারিকুলকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। তাকে জেরা করার পরে গোয়েন্দাদের একাংশের মনে হয়েছে, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছুই সাজিয়ে বলছে সুমন। জেলে বসে সংগ্রহ করা টাকা জরিমানার, নাকি জঙ্গি সংগঠনের কাজ চালানোর— তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাই অসম পুলিশের হাতে ধৃত আব্বাস এবং মিনারুল শেখকেও জেরা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এসটিএফ জানিয়েছে, তারিকুল ওরফে সুমন ধরা পড়ার পরে কলকাতার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ছিল। ২০১৯ সালে তাকে বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। একটি পকসো মামলায় গ্রেফতার হয়ে ওই জেলে বন্দি ছিল আব্বাস। সেখানেই দু’জনের আলাপ।
তদন্তকারীরা জানান, আলাপ এবং ঘনিষ্ঠতার সুযোগে আব্বাসকে সে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত করে। তার পরে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মামলায় পুলিশি ধরপাকড়ের ভয়ে গা-ঢাকা দেওয়া জেএমবির নেতাদের সঙ্গে আব্বাসকে দেখা করতে বলে। যার মধ্যে ছিল অসমের নুরও। সূত্রের দাবি, আব্বাস জেল থেকে বেরিয়ে মিনারুলকে নিয়ে অসমে গিয়ে নুরের সঙ্গে দেখা করে। নুরের মদতেই আব্বাস এবং মিনারুলের নেতৃত্বে মুর্শিদাবাদ-সহ এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সক্রিয় হয়ে ওঠে এবিটি।
তবে শুধু আব্বাস, নাকি আরও কাউকে তারিকুল জেলে বসে সংগঠনের কাজে সক্রিয় ভাবে লাগিয়েছিল, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। এক গোয়েন্দা অফিসার জানান, এ পর্যন্ত আব্বাসের নামই সামনে এসেছে। বাকিদের ব্যাপারে তারিকুল স্পষ্ট কিছু বলতে চাইছে না। তবে এবিটি চক্র ভাঙতে এ ব্যাপারে বিশদ তথ্য প্রয়োজন। তাই আব্বাস, মিনারুল এবং শাব রাডিকে অসম থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসতে চাইছে এসটিএফ। একটি সূত্রের দাবি, ওই তিন জনকে হাতে পেলে এসটিএফের অফিসারেরা যেমন বিশদ জেরার সুযোগ পাবেন, তেমনই চার জনকে একসঙ্গে বসিয়ে মুখোমুখি জেরাও করা যাবে।