Mamata Banerjee

‘সব বিরোধীকে একসঙ্গে লড়তে হবে, বিজেপিকে কুর্সি থেকে হটাতে হবে’, এ বার বললেন মমতা

লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের ‘একলা চলো’ নীতি ঘোষণা করে দিয়েছেন নেত্রীই। শুধু তা-ই নয়, বিরোধী শিবিরে বার বার কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৩ ০৬:২৫
Picture of Mamata Banerjee and Abhishek Banerjee

সমীকরণ কি সত্যিই বদলাচ্ছে? ইঙ্গিত দিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

জাতীয় স্তরে সব বিরোধী দলের জোট চেয়ে এ বার সরব হলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ধর্মতলার ধর্না মঞ্চ থেকে তিনি বলেন, ‘‘সব বিরোধীদের বলব, এমন কোনও বিরোধী দল নেই, যাদের বিরুদ্ধে অত্যাচার হচ্ছে না। কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে! কে বাকি রয়েছে? সবাই বলতে পারে না, চুপচাপ থাকে।’’ তার পরই তাঁর মন্তব্য, ‘‘সব বিরোধীদের একসঙ্গে লড়তে হবে। বিজেপিকে কুর্সি থেকে হটাতে হবে।’’

লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের ‘একলা চলো’ নীতি ঘোষণা করে দিয়েছেন নেত্রীই। শুধু তা-ই নয়, বিরোধী শিবিরে বার বার কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর দলের বক্তব্য, জোট রাজনীতির ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ‘বড়দা সুলভ’ আচরণ তারা মানবে না। এ দিন অবশ্য মমতার বক্তব্য ছিল অনেকটাই আলাদা। তিনি কংগ্রেসের নাম করে কোনও ‘কটাক্ষ’ করেননি। শুধু জানিয়ে রেখেছেন, ‘‘কে নেতা হবেন, এটা তার লড়াই নয়। দেশের সব নাগরিক নেতা। এটা দেশ বাঁচানোর লড়াই। মানুষের সঙ্গে বিজেপির লড়াই।’’

Advertisement

তাৎপর্যর্পূর্ণ ভাবে এ দিন রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুলের মোদী-মন্তব্য সমর্থন করেন না জানিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে যে আইনে পদক্ষেপ করা হয়েছে, সেই পথেই প্রধানমন্ত্রীর পদ খারিজের দাবি তুলেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, রাহুল কোনও অংশের মানুষকে অসম্মান করে থাকলে, প্রধানমন্ত্রীও এ রাজ্যে ভোটের প্রচারে এসে ‘দিদি দিদি’ সম্বোধন করে মহিলাদের অসম্মান করেছেন।

বিরোধী ঐক্য নিয়ে মমতার এই অবস্থান নিয়ে অবশ্য কটাক্ষই করেছে অন্যতম প্রধান দুই বিরোধী কংগ্রেস ও সিপিএম। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই আহ্বানে উনি নিজে যথার্থ ভাবে বিশ্বাস করেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। যে সব রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে কংগ্রেস লড়াই করছে, সেখানে গিয়ে তৃণমূলের ভূমিকা তো বিজেপিকেই সাহায্য করেছে।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে তো বটেই। আমাদের দল অনেক আগেই এই অবস্থান নিয়েছে।... কিন্তু গোয়া, ত্রিপুরা বা অন্য রাজ্যে তৃণমূলের ভূমিকা কাদের সাহায্য করেছে, সেই প্রশ্ন তো আছেই।’’ দুই দলই জানিয়েছে, রাজ্য স্তরে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই থাকবে।

রাজ্যের প্রতি ‘বঞ্চনা’ ও কেন্দ্রীয় এজেন্সির ‘অত্যাচার’-এর অভিযোগে এ দিন জোড়া কর্মসূচিতে পথে নেমে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস। মেয়ো রোডে অম্বেডকর মূর্তির পাশে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না এবং শহিদ মিনারের পাদদেশে অভিষেকের জনসভা থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে দলের নিশানা। সেই সূত্রেই এ দিন বিজেপিকে নিশানা করে বিরোধী ঐক্যের ডাক দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘এরা দেশের অহংকারী, দুঃশাসন, দুর্যোধন। এদের হটান। গণতন্ত্র, দেশ, মানুষকে বাঁচান।’’ একের পর এক রাজ্যের নাম করে মমতা দাবি করেন, বিজেপি কোথাও ভোট (লোকসভায়) পাবে না।

তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী পর পর সিবিআই ও ইডির মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তের মুখে পড়েছেন। বিভিন্ন সময়ে সেই তদন্তকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে উল্লেখ করেছেন মমতা-সহ দলের নেতৃস্থানীয় সকলেই। এ দিন শহিদ মিনার ময়দানে দলের ছাত্র-যুবদের সমাবেশে সেই অভিযোগ করে অভিষেক বলেন, ‘‘এই যে মদন মিত্র, কুণাল ঘোষেদের সারদা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাঁদের বলা হত, অভিষেকের নাম বলো। ছেড়ে দেব।’’ মঞ্চে উপস্থিত মদন মাথা নেড়ে সায় দিলেও পা ভাঙা থাকায় কুণাল অনুপস্থিত ছিলেন। সেই সূত্রেই বিরোধীদের অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করে অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘টেট, এসএসসি, গরু, কয়লা কোথাও আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে, আমি এই ময়দানে ফাঁসির দড়ি গলায় পরে নেব।’’

ধর্না মঞ্চে অভিষেকের উপস্থিতিতে একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অভিষেককে বলছিলাম, কাল তোর বাড়িত ইডি-সিবিআই পাঠাবে। ও বলল, পাঠায় পাঠাক। আমাদের বাড়ির মেয়েদেরও ডেকে পাঠাতে শুরু করেছে। আমি বলি, বাচ্চারাই বা বাদ কেন?’’

আরও পড়ুন
Advertisement