অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্রকে ঘিরে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ। — নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার ন’দিনের মাথায় ক্যাম্পাসে এলেন যাদবপুরের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তথা তৃণমূল প্রভাবিত অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্র। বিভাগে ঢোকার মুখেই তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার দিন দু’জন ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছেন ওমপ্রকাশ। পড়ুয়াদের সঙ্গে অভব্য আচরণও করেছেন। ছাত্রছাত্রীদের আরও দাবি, ‘‘ওঁর আচরণ শিক্ষকসুলভ নয়। ওমপ্রকাশের মতো অধ্যাপকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে ক্যাম্পাসে এ ধরনের আরও ঘটনা ঘটবে।’’
যদিও এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অধ্যাপক। ওমপ্রকাশের কথায়, ‘‘আমি বর্ষীয়ান একজন অভিজ্ঞ অধ্যাপক। আমাকে ঘটনার দিন আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কেন তাঁরা একজন অধ্যাপককে মারধর করেছিলেন, আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন, তার জবাব ওঁদেরকে দিতে হবে। আমাকে কালিমালিপ্ত করতে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।’’ তবে এ সব যুক্তিতে টলছেন না ছাত্রীরা। ওমপ্রকাশের ঘরের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে মাটিতে বসে পড়েছেন তাঁরা। পড়ুয়াদের দাবি, তাঁদের মাড়িয়ে বিভাগে ঢুকতে হবে অধ্যাপককে।
বিশৃঙ্খলা এড়াতে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ওমপ্রকাশ ঢোকার মুখে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশপাশে সাদা পোশাকেও প্রচুর পুলিশকর্মী ছিলেন। অথচ, মাত্র দিন কয়েক আগে এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই পুলিশ ঢোকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল! গত শনিবার খোদ শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন যে তিনি শিক্ষাঙ্গনে পুলিশি নিরাপত্তা চান না। অথচ, ওমপ্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার দিন বদলে গেল সেই চিত্র।
অন্য দিকে, যাদবপুরের পড়ুয়াদের দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বৈঠক ডেকেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল পড়ুয়াদের দুই প্রতিনিধিকেও। সোমবার যথাসময়ে শুরু হয়ে গিয়েছে সেই বৈঠক। তবে প্রশাসনিক এই বৈঠকে রয়েছেন সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত, রেজিস্ট্রার কণিষ্ক সরকার, ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়-সহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধানেরা। তবে বৈঠকে অনুপস্থিত পড়ুয়াদের প্রতিনিধিরা। ছাত্র সংগঠনগুলি থেকে কেউই এখনও এসে পৌঁছোননি। পড়ুয়াদের যুক্তি, ঘটনার ন’দিনের মাথায় সোমবার বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষায় বসেছেন ছাত্রছাত্রীরা। পঠনপাঠনও শুরু হয়েছে নিজস্ব গতিতে। তাই পরীক্ষা দেওয়ার পর বিকেল ৩টে নাগাদ একেবারে বৈঠকে আসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তার আগে অবশ্য জিবি বৈঠক করে তাঁরা নিজেদের বক্তব্য স্থির করবেন।
সোমবারের বৈঠকের পর যাদবপুরে গত ন’দিন ধরে চলা অচলাবস্থা কাটতে পারে বলে আশাবাদী অনেকে। পড়ুয়ারা সোমবার দুপুর ১টার মধ্যে এগ্জ়িকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছিলেন। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন স্তব্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই কর্তৃপক্ষের বৈঠকে বসার পদক্ষেপকে পড়ুয়াদের ডাকে সাড়া দেওয়ার ইঙ্গিত বলেই মনে করা হচ্ছে।