Kanyashree Scheme

ট্যাবের পরে কন্যাশ্রীর টাকা নিয়েও হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা, সব জেলাকে সতর্ক করে ছয় নির্দেশ বিকাশ ভবনের

চিঠিতে বলা হয়েছে, কন্যাশ্রী পোর্টালে জালিয়াত চক্র হানা দিতে পারে বলে রাজ্যকে জানিয়েছে ন্যাশনাল ইনফর্মেটিকস সেন্টার (এনআইসি)। এর ফলে অনেক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে সমস্যা হতে পারে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:২৮
After Tab row Nabanna alerts education department about Kanyashree project

—ফাইল ছবি।

এক জনের ট্যাবের টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়াকে প্রথমে সাধারণ গোলমাল বলেই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে এর নেপথ্যে একটি চক্র রয়েছে। আশঙ্কা, একই ধরনের চক্র অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কন্যাশ্রীর টাকাও হাতানোর চেষ্টা করতে পারে। আর তা জানার পরেই নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর সব জেলাশাসককে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেছে। গত মঙ্গলবার পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কন্যাশ্রী পোর্টালে জালিয়াত চক্র হানা দিতে পারে বলে রাজ্যকে জানিয়েছে ন্যাশনাল ইনফর্মেটিকস সেন্টার (এনআইসি)। এর ফলে অনেক গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে সমস্যা হতে পারে। সেটা রুখে দেওয়ার জন্য কী কী পদক্ষেপ প্রয়োজন, তা-ও এনআইসি রাজ্যকে জানিয়েছে। সেই মতো ছ’দফা নির্দেশ পাঠানো হয়েছে রাজ্যের পক্ষে। জেলাশাসক ছাড়াও সব জেলার সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ডিরেক্টরকে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

নির্দেশে সবার আগে বলা হয়েছে, যে সব অ্যাকাউন্টে বিপদ হতে পারে সেগুলির পাসওয়ার্ড বদলে নিতে। এর পরে অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজ়ার, প্লাগ-ইন এবং বিভিন্ন সফ্‌টঅয়্যার সর্বশেষ ভার্সনে আপডেট করে নিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তৃতীয় নির্দেশে বলা হয়েছে, কম্পিউটারে যদি এমন কোনও সফ্‌টঅয়্যার থাকে, যা থেকে বিপদ হতে পারে, তা সরিয়ে ফেলতে হবে। ফায়রওয়াল সক্রিয় করার পাশাপাশি চতুর্থ নির্দেশে যথাযথ অ্যান্টি-ম্যালঅয়্যার, অ্যান্টি-র‌্যানসমঅয়্যার এবং অ্যান্টি-এক্সপ্লয়েট সফ্‌টঅয়্যার ইনস্টল করার কথা বলা হয়েছে। পঞ্চম নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে, কম্পিউটার নিয়মিত স্ক্যান করতে হবে। সর্বশেষ তথা ষষ্ঠ নির্দেশে বলা হয়েছে, কোনও ভাবেই কেউ কম্পিউটারে ব্যবহারের পাসওয়ার্ড-সহ কোনও ক্রেডেনশিয়াল ওয়েব পেজে সেভ করে রাখবেন না। এই ছয় নির্দেশ পালন করার পরে সেটা জানাতেও বলা হয়েছে। কারণ, রাজ্য সেটা এনআইসিকে জানাবে।

রাজ্য সরকারি স্কুলগুলির একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার্থে ট্যাব কেনার জন্য সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প চালু করেছিল। এই প্রকল্পের অধীনে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সেই টাকা ঢুকে যায়। স্কুলের মাধ্যমেই করা হয় আবেদন। কিন্তু অভিযোগ, এ বছর রাজ্যের অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি। বরং তা চলে গিয়েছে অন্য কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে এটিএম থেকে সেই টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে কৃষক, সকলেই রয়েছেন। তদন্তকারীদের মতে, মূলত বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে থেকে স্কুলের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর বদলে দেওয়া হয়েছে। যারা ট্যাবের টাকা পায়নি, তাদের ট্যাব কেনার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

তরুণের স্বপ্নের থেকেও অনেক বেশি বিস্তৃত কন্যাশ্রী প্রকল্প। তরুণের স্বপ্নে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদেরই শুধু ট্যাব কেনার টাকা দেওয়া হয়। সেখানে কন্যাশ্রীর টাকা দেওয়া হয় অনেক বেশি ছাত্রীকে। এই প্রকল্পে অর্থ প্রাপকের সংখ্যা তিন কোটিরও বেশি। একটি পোর্টাল থেকেই গোটাটা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই সেই পোর্টালে কোনও ভাবে জালিয়াতেরা থাবা বসালে বিপদ অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা। এ নিয়ে প্রধানশিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘আগেই এই ধরনের উদ্যোগ দরকার ছিল। প্রত্যেক ছ’মাস অন্তর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা উচিত। স্কুলের আধিকারিকদের দিয়ে নয়, সরকারের তত্ত্বাবধানে এটি হওয়া উচিত।’’ সুরক্ষার বিষয়টিকে আরও বেশি করে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস। তিনি বলেন, ‘‘কোনও স্কুলকে যাতে সাইবার কাফেতে গিয়ে পোর্টালের ডেটা আপলোড করতে না হয়, সেটা দেখা উচিত। তার জন্য কমপক্ষে এক জন কম্পিউটার শিক্ষিত ক্লার্ক এবং নেট কানেকশন সম্বলিত কম্পিউটার প্রতিটি স্কুলকে দেওয়া উচিত।’’

আরও পড়ুন
Advertisement