Kanyashree

খানিক থিতিয়েছে আরজি কর পরিস্থিতি, ‘সময়’ বুঝে মুক্তি পাচ্ছে ‘কন্যাশ্রী’ নিয়ে নির্মিত ছবি

ছবিতে বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার মমতার যে যাত্রাপথ, তা দেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে একটি কন্যাসন্তানকে নিয়ে একা মায়ের লড়াই এবং সেই কন্যার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কাহিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৮
The movie based on Kanyashree project is to release on Friday after RG Kar situation calms down

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প কন্যাশ্রী নিয়ে নির্মিত ছবিতে অভিনয় করেছেন তৃণমূলের এক নেতা এবং মন্ত্রী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে যে নাগরিক আন্দোলন তৈরি হয়েছিল, তা প্রায় থিতিয়ে গিয়েছে। ‘সময়’ বুঝে তখন মুক্তি পাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ নিয়ে নির্মিত ছবি ‘সুকন্যা’। শুক্রবার মুক্তি পেতে চলেছে সমীর মণ্ডল প্রযোজিত এবং উজ্জ্বল মিত্র পরিচালিত এই ছবি। যে ছবিতে অভিনয় করেছেন এক তৃণমূল নেতা এবং রাজ্যের এক মন্ত্রী।

Advertisement

পরিচিত শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর নাগেরা। কনীনিকা অভিনয় করেছেন মমতার চরিত্রে। রাজ্য পুলিশের ডিজি-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। ঘটনাচক্রে, যাঁর সঙ্গে আরজি করের ‘যোগসূত্র’ বার বার সামনে এসেছে। শান্তনু নিজে আরজি করের প্রাক্তনী। তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের পরে তিনি প্রকাশ্যে ওই হাসপাতালের বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন একাধিক বার। দাবি জানিয়েছিলেন আরজি করের অধুনা প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের শাস্তির। প্রকাশ্যে বিরোধিতা এবং সমালোচনা করেছিলেন আরজি করের রোগীকল্যাণ সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা নিজের দলের বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের। খোলাখুলি বলেছিলেন আরজি কর হাসপাতালে ‘দুর্নীতি’র কথাও। শান্তনুকে আরজি কর পর্বেই দলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল তৃণমূল।

শান্তনু ছাড়াও এই ছবির সঙ্গে আরও একটি ‘শাসক-যোগ’ রয়েছে। ছবিতে অন্য একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।

২০২৩ সালের পুজোর সময়ে শেষ হয়েছিল ‘সুকন্যা’র শুটিং। সম্পাদনা, ডাবিং এবং অন্যান্য কাজ শেষ করে গত ৩০ অগস্ট মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ৯ অগস্ট ঘটে যায় আরজি করের ঘটনা। রাজ্য উত্তাল। রাস্তায় রাস্তায় নাগরিক আন্দোলন। মিছিল-মিটিং-পথসভা এবং জুনিয়ার ডাক্তারদের কর্মবিরতি— সব মিলিয়ে পরিস্থিতি শাসকের পক্ষে ‘অনুকূল’ নয়। সেই কারণেই কি ছবির মুক্তি পিছিয়ে নভেম্বরে নিয়ে আসা হল? প্রযোজক সমীর অবশ্য ‘রাজনৈতিক’ নয়, ‘বাণিজ্যিক’ কারণের কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাণিজ্যিক কারণে সেই সময়ে ছবিমুক্তির ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ, পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল।’’ তা হলে এখন কেন? সমীরের জবাব, ‘‘এখন পরিস্থিতি বদলেছে। মানুষও স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরেছেন। তাই এই সময়েই ছবি মুক্তি পাচ্ছে।’’ রাজ্যের ৩৫টি হলে ছবিটি মুক্তি পাবে বলে জানিয়েছেন সমীর।

একেবারেই কি ‘রাজনৈতিক’ কারণ নেই? বিশেষত, যখন শাসকদলের সঙ্গে জড়িত দু’জন এই ছবির অভিনেতা?

আছে। জানিয়েছেন ছবির এক অভিনেতা। কিন্তু নিজের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি। নাম গোপন রাখার শর্তে তাঁর জবাব, ‘‘তখন সরকারি প্রকল্প নিয়ে তৈরি ছবি মুক্তি পেলে লোকে পর্দায় জুতো ছুড়ত!’’ পাশাপাশিই তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘অগস্টের শেষে আরজি কর-কাণ্ড ছিল দগদগে। শহর এবং মফস্সলের বড় অংশের মানুষের ক্ষোভ ছিল সরকারের বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক ভাবেই তখন এই ছবি মুক্তির ঝুঁকি নেওয়া হয়নি।’’

তবে আরজি করের ঘটনার পরে উত্তাল নাগরিক আন্দোলনের আবহে অনেক ছবিরই বাণিজ্যিক মুক্তি পিছিয়ে গিয়েছিল। অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেব যেমন তাঁর পরবর্তী ছবি ‘খাদান’-এর ‘ট্রেলার’ মুক্তি পিছিয়ে দিয়েছিলেন। কলকাতায় কনসার্ট স্থগিত করে দিয়েছিলেন শ্রেয়া ঘোষাল। আরও কয়েকটি ছবির প্রযোজকেরাও ‘ট্রেলার’ মুক্তি বা গান ‘রিলিজ়’ পিছিয়ে দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হওয়ার পর সেগুলি আবার শুরু করা হয়েছিল। যেমন শ্রেয়া কনসার্ট করেছেন নভেম্বরের গোড়ায়। সেখানেও অবশ্য তিনি আরজি করের ঘটনা নিয়ে একটি গান গেয়েছিলেন। এখন নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন মাস পরে মুক্তি পেতে চলেছে ‘সুকন্যা’।

ছবিতে বিরোধী নেত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠার মমতার যাত্রাপথ দেখানো হয়েছে। সেই সঙ্গে দেখানো হয়েছে একটি কন্যাসন্তানকে নিয়ে একা মায়ের লড়াই। সেই সন্তানই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। হয়ে উঠছেন এক জন আইপিএস অফিসার। পরিচালক উজ্জ্বলের বর্ণনায়, ‘‘নারীদের অধিকার এবং নারী ক্ষমতায়নের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement