Justice Amrita Sinha

সম্পত্তি মামলায় বিধবাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ! বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামীকে সিআইডির তলব

সিআইডি সূত্রে খবর, আগামী শনিবার বেলা ১১টায় ভবানী ভবনে বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামীকে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, তাঁকে আগেও এক বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৫১
According to CID sources, they summoned husband of Justice Amrita Sinha to interrogate him in a case

বিচারপতি অমৃতা সিংহ। —ফাইল চিত্র।

একটি মামলার সূত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামীকে ডেকে পাঠাল সিআইডি। সিআইডি সূত্রে খবর, আগামী শনিবার বেলা ১১টায় ভবানী ভবনে তাঁকে হাজির হতে বলা হয়েছে। ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আগেও এই মামলায় বিচারপতির স্বামীকে এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিআইডির আধিকারিকেরা।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, বিচারপতি অমৃতা সিংহের এজলাসে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি চলছে। তার মধ্যে একটি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা। এই মামলায় কিছু দিন আগেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি সিংহ। অভিষেকের সংস্থা ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’ নিয়ে হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। শুক্রবার মুখবন্ধ খামে সেই রিপোর্ট জমা দেয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি।

সিআইডি সূত্রে খবর, যে মামলায় বিচারপতির স্বামীকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, সেটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। সম্প্রতি বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মামলায় কোনও বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানায় শীর্ষ আদালত। তবে গত ১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি অপরাধের মামলায় অবৈধ ভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ ওঠে বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে। পেশায় তিনিও আইনজীবী। ৬৪ বছরের এক বিধবা এবং তাঁর মেয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরে অবশ্য এই মামলায় বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট। তবে গত ১ ডিসেম্বর শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে পুলিশ।

আইন সংক্রান্ত বিষয়ে খবরাখবর পরিবেশনকারী সংবাদমাধ্যম ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসের শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডিকে ‘ভয়ডরহীন’ ভাবে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি এলভিএন ভাট্টির ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি, কোনও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হলে সেটাও শীর্ষ আদালতকে জানানোর কথা বলা হয়। তদন্ত শেষ করে ডিসেম্বরের মধ্যে মুখবন্ধ খামে তথ্য পেশের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ওই বিধবার সঙ্গে তাঁর কয়েক জন আত্মীয়ের বিরোধ শুরু হয়। মামলা গড়ায় আদালতে। আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে জানান, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করার জন্য বাপের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন দাদা এবং অন্যান্য আত্মীয়। সুপ্রিম কোর্টে ওই বিধবার আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলকে একাধিক বার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এমনকি, বৃদ্ধাকে যে মারধর করা হয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। এর প্রেক্ষিতে ওই বৃদ্ধা আত্মীয়দের বিরুদ্ধে দুটি ফৌজদারি অভিযোগ করেন।

‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিবাদী পক্ষের আইনজীবী তদন্তকারীদের উপর বেআইনি ভাবে প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ করেন বিধবা। অভিযোগ, দু’টি মামলার তদন্ত যাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তার সব রকম চেষ্টা করেছেন বিচারপতি সিংহের স্বামী। ফলস্বরূপ, ওই দুটি মামলার তদন্তপ্রক্রিয়াই বাধাপ্রাপ্ত হয়। শুধু তাই নয়, বিচারপতি সিংহের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন মামলাকারীরা।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, আবেদনকারীরা তার পর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁরা আর্জি জানান, আইনজীবী কিংবা তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই দু’টি ফৌজদারি অভিযোগের যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, তার নির্দেশ দিক শীর্ষ আদালত। তদন্ত নিশ্চিত করার নির্দেশও চেয়েছিলেন। আবেদনে এ-ও অভিযোগ করা হয় যে, ওই দুই মামলার প্রাথমিক তদন্তে এক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হওয়ার পরেও তদন্তের গতি রুদ্ধ হয়েছে। হলফনামায় জানানো হয়েছে, সংশ্লিষ্ট তদন্তকারীকে এক বার ডেকে তিরস্কার এবং ভর্ৎসনা করেছেন বিচারপতি। তিনি নাকি বলেছেন, ওই দু’টি দেওয়ানি মামলায় কেন ফৌজদারি মামলার তদন্ত হচ্ছে? ‘বার অ্যান্ড বেঞ্চ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি মামলাকারীর আবেদনে প্রার্থনা জানানো হয় যে, শীর্ষ আদালত যেন বিচারপতি এবং আইনজীবী স্বামীর ওই কাজের জন্য তদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, মামলাকারীরা পর্যাপ্ত পুলিশি সুরক্ষার আবেদন জানিয়েছেন।

অন্য দিকে, রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টে বলা হয়, তদন্তের অবস্থা এবং অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আগেই কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি রিপোর্ট গিয়েছে। ন্যায়সঙ্গত ভাবেই তদন্ত পরিচালনা হচ্ছে। আবেদনকারীদের সমস্ত অভিযোগ বিবেচনা করে সতর্কতার সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে। যদিও তার পরেও এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্ট চেয়েছে বলে প্রকাশ ওই প্রতিবেদনে।

Advertisement
আরও পড়ুন