গোসাবার পাঠানখালি কলেজ মাঠের জনসভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
এত দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘তৃণমূলনেত্রী’ কিংবা ‘বাংলার জননেত্রী’ বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের তাবড় নেতারা। গোসাবায় উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে সেই মমতাকেই ‘দেশনেত্রী’ হিসেবে অভিহিত করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘গোটা ভারত আজ তাকিয়ে দেশনেত্রী মমতার দিকে। কারণ একমাত্র তিনি-ই পারেন বিজেপি-কে হারিয়ে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।’’
আগামী ৩০ অক্টোবর গোসাবা, খড়দহ, শান্তিপুর এবং দিনহাটায় উপনির্বাচন। তার মধ্যে গোসাবা ও খড়দহে জয়ী প্রার্থীর মৃত্যুতে এবং শান্তিপুর ও দিনহাটায় জয়ী প্রার্থীরা বিধায়কপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ায় উপনির্বাচন হচ্ছে। এই আবহে শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় দলীয় প্রার্থী সুব্রত মণ্ডলের সমর্থনে জনসভা করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক।
বিধানসভা ভোটে প্রচারের সময় যে মমতাকে তৃণমূল তুলে ধরেছিল ‘বাংলার মেয়ে’ হিসেবে, ঠিক ৬ মাস বাদে উপনির্বাচনের প্রচারে তিনিই হয়ে উঠলেন ‘দেশনেত্রী’। অভিষেক বললেন, ‘‘যেখানে গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করছে বিজেপি, সেখানেই প্রতিবাদের ধ্বজা ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন মমতা। গোটা ভারত আজ দেশনেত্রী মমতার দিকে তাকিয়ে। গোয়া ও ত্রিপুরায় সংগঠন কাজ শুরু করে দিয়েছে।’’ তাঁর ঘোষণা, ‘‘আগামী ৩ মাসের মধ্যে গোয়া এবং দেড় বছরের মধ্যে ত্রিপুরায় তৃণমূলের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন হবে। বিজেপি-র ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক।’’ পাশাপাশি বিজেপি নেতৃত্বকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি অভিষেক। বিজেপি-র শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নাম করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বিধানসভা ভোটের আগে এখানে এসে বলে গিয়েছিলেন, সুন্দরবনকে আলাদা জেলা করে তার উন্নয়নে ২ লক্ষ কোটি টাকা দেব। আজ যখন আবারও একটা ভোটের সামনে দাঁড়িয়ে গোসাবা, কোথায় গেলেন বিজেপি-র নেতারা? দিল্লি, মধ্যপ্রদেশের নেতাদের কথা না হয় ছেড়ে দিলাম, করোনা বা আমপানের সময় বিজেপি-র স্থানীয় নেতাদেরও দেখেছেন কি? এটাই হল তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র পার্থক্য।’’ গত সাত বছর ধরে তৃণমূলই যে বিজেপি-কে হারিয়ে আসছে, সেই দাবি তুলে ধরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের মূল পার্থক্যও ফের একবার জানিয়ে দেন অভিষেক।
একুশের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর অন্য রাজ্যের দিকে নজর দিয়েছে তৃণমূল। ত্রিপুরায় সরাসরি বিজেপি-র মোকাবিলায় নেমে পড়েছেন সুস্মিতা দেবরা। তৃণমূল পাখির চোখ করেছে দক্ষিণের রাজ্য গোয়াকেও। আগামী সপ্তাহে গোয়া যাচ্ছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। এই প্রেক্ষিতেই মমতাকে দেশনেত্রী হিসেবে তুলে ধরলেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের যে সমস্ত বিজেপি শাসিত রাজ্যে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত, মানুষের স্বাধীনতা নেই, সেখানেই বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবেন মমতা। কারণ তিনিই আসল দেশনেত্রী।’’ একই সঙ্গে কংগ্রেস, সিপিএমকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট না করারও আহ্বান জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেস, সিপিএমের একটাই লক্ষ্য, যে করে হোক, মমতাকে হারাও। তাতে বিজেপি সুবিধা পেয়ে গেলেও ওঁদের ভ্রুক্ষেপ নেই। ওদের দিয়ে ভোটটা নষ্ট করবেন না।’’