Saket Gokhale

‘ভয়হীন প্রতিবাদে ভয় পেয়েছে বিজেপি!’ গুজরাতে তৃণমূল মুখপাত্রের গ্রেফতারি নিয়ে অভিষেক

সাকেত লিখেছিলেন, ‘‘মোরবী সেতু ভাঙার পর গুজরাতে মোদীর পরিদর্শনের জন্য ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি শুধু খরচ হয়েছে মোদীর ছবি তোলা এবং অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে।’’

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪১
সাকেতকে গ্রেফতার করানোর নেপথ্যে কাজ করেছে বিজেপির ভীতি। জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সাকেতকে গ্রেফতার করানোর নেপথ্যে কাজ করেছে বিজেপির ভীতি। জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার ভয়েই তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সাকেত গোখলেকে গ্রেফতার করেছে গুজরাতের পুলিশ, এমনটাই মনে করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তৃণমূল মুখপাত্রের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তিনি টুইট করেন, ‘‘মানুষের জীবনের বিনিময়ে নিজের আখের গোছানো শাসকের বিরুদ্ধে নির্ভীক ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সাকেত। ভয় পেয়ে বিজেপি গুজরাত পুলিশকে দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছে আমাদের জাতীয় মুখপাত্রকে।’’

মঙ্গলবার ভোররাতেই সাকেতকে রাজস্থানের বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তৃণমূল মুখপাত্র জয়পুরে এসে পৌঁছনোর আগেই তাঁর জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল গুজরাতের পুলিশ। ঘটনাচক্রে সোমবারই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে মোদীর। আবার মঙ্গলবার সকালে রাজস্থানে এসে পৌঁছেছেন মমতা। সাকেতকে গ্রেফতার করা হয় মমতার রাজস্থান সফরের কয়েক ঘণ্টা আগে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ গ্রেফতারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করে ঘটনাটি জানান। সাকেতের গ্রেফতারি নিয়ে এর পরই টুইট করে বিজেপির সমালোচনা করেন অভিষেক। তবে একই সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ লেখেন, ‘‘ওরা যদি ভেবে থাকে এ ভাবে তৃণমূলের মাথা ঝোঁকানো যাবে, তা হলে খুব ভুল ভাবছে।’’

Advertisement

রাত ২টোর সময় সাকেতকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাত পুলিশ। তার তার আগে দু’মিনিট ফোন করার সময় দেওয়া হয়েছিল সাকেতকে। ডেরেক তাঁর টুইটে সে কথা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, শেষ কলটিতে মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সাকেত। তিনি মাকে জানিয়েছিলেন, পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। তাঁকে আমদাবাদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে মঙ্গলবার দুপুরে আমদাবাদে পৌঁছবেন তিনি। সেই ফোনের পর থেকে সাকেতের তরফে আর কোনও যোগাযাগ করা হয়নি। যদিও তৃণমূল তাঁর সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগের চেষ্টা করে চলেছে। সাকেতকে কোথায় রাখা হয়েছে, তার খোঁজ পেতে গুজরাতে যাচ্ছেন ডেরেকের নেতৃত্বে তৃণমূলের এক প্রতিনিধি দল। দলের তরফেও জানানো হয়েছে, তৃণমূল সবরকম ভাবে সাকেতের পাশে থাকবে। সাকেতের সমর্থনে ইতিমধ্যেই টুইট করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব, লোকসভার সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারেরা।

প্রসঙ্গত, যে টুইটের জন্য সাকেতকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব, সেটি গত ১ ডিসেম্বর নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছিলেন সাকেত। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘গুজরাতে মোরবী সেতু ভাঙার পর সেখানে মোদীর পরিদর্শনের জন্য ৩০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ৫ কোটি খরচ হয়েছে শুধু মাত্র মোদীকে অভ্যর্থনা জানানোর অনুষ্ঠান এবং ছবি তোলার জন্য। যেখানে মোরবী সেতু ভেঙে মৃত ১৩৫ জনকে মোট ৫ কোটি টাকার এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।’’ সাকেত ওই টুইটে আরও স্পষ্ট করে লিখেছিলেন, ‘‘শুধু মোদীকে স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানের দাম ১৩৫ জনের জীবনের থেকে বেশি!’’ সম্প্রতি ওই টুইটটিকে ভুয়ো বলে দাবি করে একটি পাল্টা টুইট করেছিল পিআইবি ফ্যাক্ট চেক নামে টুইটারের একটি ব্লু টিক দেওয়া ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট।

এর পাশাপাশি সম্প্রতি মোদীর জন্মদিন উপলক্ষে নামিবিয়া থেকে চিতাবাঘ আনানো নিয়েও একটি টুইট করেছিলেন সাকেত। আরটিআই (তথ্য জানার অধিকার আইন)-এর মাধ্যমে পাওয়া তথ্য এবং একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে সাকেত লিখেছিলেন, ওই চিতার চুক্তির বিনিময়ে হাতির দাঁতের ব্যবসা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে কেন্দ্র।

সাকেতের গ্রেফতারির পর তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন, সাকেত বরাবর কেন্দ্রীয় সরকারের নানা জনবিরোধী নীতির কড়া সমালোচনা করে এসেছেন। নির্ভীক ভাবে করা তাঁর ওই সমালোচনাই নেতিবাচক ভাবে দেখেছে শাসকদল। তাই তার বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সাকেতকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিয়ে ডেরেক লিখেছেন, ‘‘গুজরাতের মোরবী সেতু ভেঙে পড়া নিয়ে টুইট করেছিলেন সাকেত। সেই টুইট নিয়েই আমদাবাদের সাইবার সেলে দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হয়।’’ তবে একই সঙ্গে ডেরেক জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা তৃণমূলকে চুপ করাতে পারবে না। ডেরেক লিখেছেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটানোর বিষয়টিকে ক্রমশ আলাদা স্তরে নিয়ে যাচ্ছে বিজেপি।’’

পরে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ লেখেন, ‘‘সাকেতের গ্রেফতারি স্পষ্ট করে দিল বিজেপি দেশে একনায়কতন্ত্র চালাতে চায়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement