TMC

দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই বিস্তর অভিযোগ তৃণমূল বিধায়কের

সম্প্রতি সন্দেশখালির বিধায়ক দলীয় কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হন। হামলার অভিযোগ ওঠে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হাটগাছি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে।

Advertisement
নবেন্দু ঘোষ 
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৬:২৩
(বাঁ দিকে)সুকুমার মাহাতো, শাহজাহান আলি (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে)সুকুমার মাহাতো, শাহজাহান আলি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

ঘরের অন্দরে কোন্দল সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতাদের। সন্দেশখালিতে স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছেন শেখ শাহজাহানের অনুগামী তৃণমূল নেতারা। পাল্টা সরব হয়েছেন সন্দেশখালির বিধায়কও। দলের একাংশের অভিমত, সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ককে এখন বিরোধীদের আক্রমণ সামলানোর থেকে বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দলীয় নেতা-নেত্রীদের তোপ সামাল দিতে!

Advertisement

সম্প্রতি সন্দেশখালির বিধায়ক দলীয় কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হন। হামলার অভিযোগ ওঠে শাহজাহান ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত হাটগাছি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এরপরেই তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল সামনে চলে আসে। সূত্রের খবর, সন্দেশখালি হাটগাছি পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তার পাশ দিয়ে একটি বেসরকারি টেলিকম সংস্থা ফাইভ-জি কেবল নিয়ে যাওয়ার কাজ করছে। এই কাজ নিয়ে উপপ্রধান ও বিধায়কের গোষ্ঠীর বিবাদ বাধে। সুকুমার বলেন, “ওই কাজের জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা পঞ্চায়েতের নাম করে নিয়েছেন উপপ্রধান।’’ আব্দুলের কথায়, “টেলিকম সংস্থা নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চায়েতকে চেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। তবে সেই টাকা থেকে আমি এক পয়সা নিয়েছি বিধায়ক প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।”

বিধায়কের গোষ্ঠীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুধু সন্দেশখালি ১ ব্লকে নয়। সন্দেশখালি ২ ব্লকেও বিধায়কের গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধী গোষ্ঠীর বিবাদ তুঙ্গে। কিছু দিন আগে সন্দেশখালি ২ ব্লকের বেড়মজুরে একটি বিজয়া সম্মিলনী হয় তৃণমূলের তরফে। সেখানে বিধায়ক বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা ছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, সন্দেশখালি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রৌফান ইয়াসমিন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামীও ছিলেন। কিন্তু বিধায়ক সেখানে যাননি। ব্লক তৃণমূলের তরফে কয়েক দিন পরে ধামাখালিতে ফের একটি বিজয়া সম্মিলনী করা হয়। যেখানে রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসু ছিলেন। সুকুমার ছিলেন সেখানে। কিন্তু রৌফান গরহাজির।

সুকুমারও এক হাত নিয়েছেন নিজের দলের লোকেদের বিরুদ্ধেই ভোট লুটের অভিযোগ তুলে। তিনি বলেন, ‘‘শাহজাহানের সময়ে পঞ্চায়েত ভোটে লুট হত সন্দেশখালিতে। শাহজাহান ইচ্ছে মতো বিভিন্ন পদে লোক বসিয়েছে। রৌফান সে ভাবেই সভাপতি হয়েছেন। কোনও যোগ্যতা নেই, অশিক্ষিত। এঁরা শাহজাহানের তৃণমূল করতেন। এখনও শাহজাহানের কথায় চলছেন। রৌফান সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানেরা ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। রৌফান মণিপুর এলাকায় জোর করে ভেড়ি দখল করে প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে মাছ চাষ করছেন। ফেরিঘাটগুলি থেকে টাকা তছরুপ হচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে।’’ সুকুমারের দাবি, “আমি এই পরিস্থিতির বদল করতে চাইছি। দুর্নীতিমুক্ত করতে চাইছি, তাতেই আমাকে পছন্দ হচ্ছে না ওঁদের। তবে মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।”

রৌফানের বক্তব্য, “আমাকে ডাকা হয়নি ওই অনুষ্ঠানে। বিধায়ক নিজের মতো করে গোষ্ঠী তৈরি করেছেন আইএসএফ ও বিজেপির লোকদের নিয়ে। আমরা পুরনো তৃণমূল উপেক্ষিত হচ্ছি। শেখ শাহজাহান ভাল নেতৃত্ব দিতেন এবং সবাইকে নিয়ে চলতেন। বিধায়ক তা পারছেন না। ওঁকে সরিয়ে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিতে উপরমহলে আবেদন করেছি।”

এ সব দেখে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্র বলেন, “শাহজাহান যে ক্ষমতার জোরে অত্যাচার করেছে মানুষের উপরে। সে জেলে যেতে সেই ক্ষমতা দখলের জন্য সুকুমার আর কাদেরের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। মানুষ ওদের পাশে নেই।”

সিপিএম নেতা নিরাপদ সর্দারের কথায়, “আমরা বহু দিন ধরে বলে আসছি, সন্দেশখালিতে জমি, ভোট লুট হচ্ছে, দুর্নীতি হচ্ছে। এই অভিযোগ বিধায়ক যখন মেনে নিচ্ছেন, তা হলে পুলিশ গ্রেফতার করুক অভিযুক্তদের।’’

আরও পড়ুন
Advertisement