Bhangar Police

পঞ্চায়েত ভোট থেকে কি শিক্ষা নেয়নি পুলিশ, প্রশ্ন উঠল ভাঙড়ে

৩০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে খুনের চেষ্টা, অবৈধ জমায়েত, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৪৯
ভাঙা গাড়ি নিয়েই শোনপুর বাজারে পুলিশের টহলদারি।

ভাঙা গাড়ি নিয়েই শোনপুর বাজারে পুলিশের টহলদারি। —নিজস্ব চিত্র।

ভাঙড়ে পুলিশের উপরে আক্রমণ, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধিকাংশের বাড়ি উত্তর কাশীপুর থানা এলাকায়। এঁদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম ও আশিক ইকবালের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানা এলাকায়। ৩০ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে খুনের চেষ্টা, অবৈধ জমায়েত, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বারুইপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। শোনপুর বাজারে ওই ঘটনার পরে এ দিন সকাল থেকে অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। থমথমে পরিবেশে বসেছে পুলিশ পিকেট।

Advertisement

গত পঞ্চায়েত ভোটে ভাঙড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল সাত জনের। গণনা কেন্দ্রে হামলা চালানোর অভিযোগে পুলিশের সঙ্গে আইএসএফের বোমা-গুলির লড়াই বাধে। সেই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তাঁর দেহরক্ষীর গুলি লাগে। তিন জন আইএসএফ কর্মীর মৃত্যু হয়। তার পরেই ভাঙড় কলকাতা পুলিশের অধীনে আসে। সোমবার ওয়াকফ বিল সংশোধনের দাবিতে আইএসএফ ও বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের ডাকা কর্মসূচি ঘিরে ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়। আন্দোলনকারীদের আটকাতে গিয়ে পুলিশ কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ। ভাঙড় ডিভিশনের পোলেরহাট থানার বৈরামপুর ও শোনপুর বাজারে দফায় দফায় রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটে। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) দেখা যাচ্ছে, উন্মত্ত জনতা শোনপুর বাজারে পুলিশকে তাড়া করে মারছে, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করছে। ওই ঘটনায় উত্তর কাশীপুর থানার অতিরিক্ত ওসি ফিরোজ তামাং, সাব-ইনস্পেক্টর দেবব্রত শিকদার-সহ প্রায় আট-দশ জন পুলিশকর্মী গুরুতর জখম হন। চন্দনেশ্বর থানার ওসি অতনু মজুমদার জখম হন ইটের আঘাতে। পাল্টা পুলিশের লাঠিতে ১০-১২ জন আইএসএফ কর্মী জখম হন। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে রেহাই পাননি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও।

সোমবারের ঘটনার পরে ভাঙড়ে গোলমালের ইতিহাস থেকে পুলিশ-প্রশাসন শিক্ষা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতার কথাও বলছেন অনেকে। বিশাল জমায়েতের কথা পুলিশ যে আন্দাজ করতে পারেনি, তা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। হাজার হাজার আন্দোলনকারীকে আটকাতে পুলিশ কার্যত ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে লালবাজারের এক পুলিশকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও সদুত্তর দেননি। ঘটনার পরে এলাকায় এসেছিলেন গোয়েন্দা-প্রধান রূপেশ কুমার। কী ভাবে এত লোক জড়ো হল, তা নিয়ে ভাঙড় ডিভিশনের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বাসন্তী হাইওয়েতে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল করা হয়। উত্তেজনা ছড়ানোর ইন্ধন ছিল তাতে। পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়ানোর ডাক দেওয়া হয়। এর পরেই চার দিক থেকে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যান।’’ কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশনের জন্য আলাদা রিজ়ার্ভ ফোর্সের আবেদন করছেন নিচুতলার কর্মীরা। কারণ, ভাঙড়ে কোনও গন্ডগোল হলে লালবাজার থেকে রিজ়ার্ভ ফোর্সের পৌঁছতে অনেক সময় লেগে যায়।

সোমবার কর্মসূচি ছিল মূলত আইএসএফের। তাদের ডাকে এত লোক জড়ো হল কী ভাবে, তা নিয়েও জল্পনা চলছে। কারণ, লোকসভা ভোটের আগে ভাঙড়ে আইএসএফের প্রথম সারির নেতাদের অনেকেই তৃণমূলে যোগদান করেন। সেই সঙ্গে ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী ও তাঁর দলের লোকজনকে সে ভাবে ভাঙড়ে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেখা যাচ্ছিল না। ভাঙড়ে আইএসএফ ‘নির্মূল’ হয়ে গিয়েছে— এমন প্রচারও শুরু করে তৃণমূল। তাই ভাঙড়ে আইএসএফের ডাকে আন্দোলন সে ভাবে দানা বাঁধবে না বলে পুলিশ-প্রশাসনের একাংশও মনে করতে শুরু করেছিল।

আইএসএফের জেলা পরিষদ সদস্য রাইনুর হক বলেন, ‘‘আমরা পুলিশের উপরে আক্রমণ সমর্থন করি না। যারা করেছে, তারা আমাদের দলের নয়। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে পরিকল্পিত ভাবে বাইরের লোক ঢুকিয়ে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, পুলিশ যাঁদের গ্রেফতার করেছে, তাঁদের মধ্যে দু’-তিন জন মাত্র আইএসএফ কর্মী, বাকিরা বহিরাগত। তাঁরা কারা, জানেন না বলে দাবি রাইনুরের।

Advertisement
আরও পড়ুন