—প্রতীকী চিত্র।
একচালা বাড়ির পিছনে কয়েক কাঠা চাষের খেত। সে দিকে তাকিয়ে চোখ ভিজে আসছিল বছর তিরিশের গৃহবধূর। দুই শিশুকে সামলাতে সামলাতে বললেন, "ওই জমিতে আনাজ চাষ হয়। বর্ষা শুরুর এই সময়টাই চাষের উপযুক্ত। এইসময়টা কাজে লাগাতে না পারলে সারা বছর ফসল মিলবে না। কিন্তুকরবে কে? বাড়িতে তো পুরুষ মানুষই নেই।"
কুলতলির এই পশ্চিম গাবতলা গ্রামে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে এক তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে মারা হয়। সেই ঘটনার পর থেকে তেতে আছে এলাকা। ভয়ে বিরোধী দলের অনেকে ঘরছাড়া। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এই গ্রামে ভোট ঘিরে আগে তেমন গোলমাল হয়নি কখনও। গ্রামের মানুষকেও ঘরছাড়া হতে হয়নি কোনও দিন। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে ভোটের দিন থেকে।
এই বুথে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হয় বিজেপি। অভিযোগ, এ বার বিজেপিকে আটকাতে শেষবেলায় ছাপ্পা মারার চেষ্টা করে তৃণমূল। তাই নিয়ে গোলমাল বাধে ভোটকেন্দ্রে। বিজেপির কয়েক জনকে মারধর করা হয়। পাল্টা মারে মৃত্যু হয় পাশের গ্রামের এক তৃণমূল কর্মীর।ওই বুথে পুনর্নির্বাচন হয়। কিন্তু অভিযোগ, পুনর্নির্বাচনের আগের রাতে গুণ্ডাবাহিনী তাণ্ডব চালায় এলাকায়। হুমকি, বোমাবাজি চলে। ভয়ে এলাকা ছাড়েন বিরোধী দলের অনেকে। সেই থেকে এখনও এলাকায় ফিরতে পারেননি তাঁরা। তৃণমূল কর্মী খুনের মামলায় অনেক বিরোধী কর্মী-সমর্থকের নাম জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁরাও প্রায় কেউ এলাকায় নেই।
এ বার ওই বুথে জিতেছে তৃণমূল। বিজেপির বিদায়ী সদস্য মাধবী মহলদারকে সে দিন বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে। কয়েক দিন হাসপাতালে থেকে দু'দিন হল এলাকায় ফিরেছেন মাধবী। তিনি বলেন, "শ'খানেক মানুষ এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি। এ দিক ও দিক আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে আছেন। চাষবাস বন্ধ। চেষ্টা করছি সকলকে ফেরাতে। কেউ কেউ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি যা ছিল— বিক্রি করে চলে গিয়েছেন। জানি না আর ফিরবেন কি না।" তার কথায়, "শাসক দলের গুন্ডা বাহিনীর ভয় তো আছেই, মিথ্যা মামলায় ফেঁসে যাওয়ার ভয়ও রয়েছে। এলাকার এক শিক্ষক সে দিন ভোটের ডিউটিতে অন্য এলাকায় ছিলেন। খুনের মামলায় তাঁর নামও জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।"
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অনেকেই বারুইপুরে বিজেপির জেলা দফতরের আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে গিয়ে খোঁজ মিলল গ্রামের কয়েক জন যুবকের। ভীত-সন্ত্রস্ত চোখমুখ। স্বপন মণ্ডল নামেএক জন বলেন, "এই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে কোনও দিন ভাবিনি। পুনর্নির্বাচনের আগের রাতে বাড়ি ছাড়ি। কয়েক দিন গ্রামের বাইরে বাদায় লুকিয়ে ছিলাম। তারপরে এখানে এসে উঠি। জানি না, আগামিদিনে কপালে কী আছে!"
শুধু ওই গ্রাম নয়, কুলতলির অন্যান্য অনেক এলাকাতেই বিরোধী কর্মী-সমর্থকদের ঘর ছাড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। কুলতলিতে কর্মীরা ঘরছাড়া বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম, এসইউসিও। তৃণমূল অবশ্য কোনও অভিযোগই মানেনি। তাদের দাবি, বিরোধীদের প্রতি সৌজন্য দেখানো হচ্ছে সর্বত্রই।