সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি। ছবি: সংগৃহীত।
কামারহাটিতে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি। হাসপাতাল চত্বরে চলছে ধর্নাও। চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে রোগীমৃত্যুর অভিযোগে শুক্রবার সন্ধ্যায় রোগীর আত্মীয়েরা হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর চড়াও হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার প্রতিবাদে মোট ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এই দাবিগুলি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তালিকায় যেমন রয়েছে হাসপাতালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবিদাওয়া, তেমনই রয়েছে পুরনো বেশ কিছু অভিযোগের প্রসঙ্গও।
শনিবার দুপুরে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে গিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন তিনি। শুক্রবার রাতের ঘটনার পর শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়েছেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতেই তাঁর পরিদর্শন বলে সূত্রের খবর।
সাগর দত্ত মেডিক্যালের জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবি—
দাবি ১- শুক্রবারের ঘটনা কী কারণে ঠেকানো গেল না, কোথায় ঘাটতি, সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিত জবাবদিহি করতে হবে।
দাবি ২- ঘটনার সময় যে পুলিশকর্মী ও বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের শোকজ় করতে হবে। এঁদের প্রত্যককে লিখিত ভাবে ঘটনায় দায় নিতে হবে।
দাবি ৩- হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে এবং মহিলা ওয়ার্ডের বাইরে অন কল রুমের কাছে কী কারণে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা নেই, সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা থাকলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর এই ধরনের নিগ্রহের ঘটনার প্রমাণ রাখা সম্ভব হয়।
দাবি ৪- সিসিটিভি ফুটেজ দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীও ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না বলে অভিযোগ। তিনি থাকলে এই ঘটনা এড়ানো যেত বলে মনে করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কী কারণে ওই কর্মী অনুপস্থিত ছিলেন, সে বিষয়েও লিখিত জবাবদিহি চাইছেন তাঁরা।
দাবি ৫- চলতি মাসের শুরুর দিকেও হাসপাতালে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় কয়েক জন ইন্টার্ন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ। জুনিয়র ডাক্তারদের প্রশ্ন, যাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে এবং শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি যাঁদের বিরুদ্ধে এখনও তদন্ত চালাচ্ছে, তাঁদের কেন কাজে যোগ দিতে দেওয়া হল? ওই ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করার দাবি জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
দাবি ৬- হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠলেও কেন এখনও অভ্যন্তরীণ কমিটি তদন্ত শুরু করেনি, সেই নিয়েও প্রশ্ন কর্মবিরতিতে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের। এই বিষয়েও কর্তৃপক্ষের লিখিত জবাবদিহি চাইছেন তাঁরা।
দাবি ৭- মেডিক্যাল কলেজের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে, সেটি নিয়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ লিখিত আকারে জানানোর দাবি তুলেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
দাবি ৮- চলতি মাসের শুরুতে হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় অনুসন্ধান কমিটির কী অগ্রগতি, সে বিষয়েও তথ্য জানতে চেয়েছেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরা।
দাবি ৯- অবিলম্বে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠন তৈরির অনুমোদন দিতে হবে।
দাবি ১০- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতালের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সে বিষয়েও কর্তৃপক্ষের থেকে লিখিত জবাব চেয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।
প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার পর থেকেই ডাক্তারদের নিরাপত্তার দাবি আরও জোরদার হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টেও এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। রাজ্য সরকারও ইতিমধ্যে সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে। তবে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারেরা চান, সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার বাস্তবায়ন।