Sagore Dutta Hospital

বিক্ষোভে শামিল সাগর দত্ত হাসপাতালের নার্সেরাও! সব রোগীই অমর, এটা ভাবা অন্যায়: সুপার

সাগর দত্ত হাসপাতালে এ বার নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা। পুলিশের ভূমিকাতেও ক্ষুব্ধ তাঁরা। শুক্রবার রাতে হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন হাসপাতালের এমএসভিপিও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কামারহাটি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৬
সাগর দত্ত হাসপাতালে নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের বিক্ষোভ।

সাগর দত্ত হাসপাতালে নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত।

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর উপর হামলার ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন হাসপাতালের নার্স ও মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিতে শনিবার সকাল থেকে সরব হয়েছেন তাঁরাও। সাগর দত্তের এমএসভিপির ঘরের সামনে স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখান নার্সেরা। তাঁদের দাবি, যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকলে রোগীর এত পরিজন একসঙ্গে কী ভাবে হাসপাতালের উপরের তলে উঠলেন, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিক্ষোভরত নার্সেরা। হাসপাতালের এমএসভিপি সুজয় মিস্ত্রির কাছে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলি তুলে ধরেন তাঁরা।

Advertisement

সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগরে নিয়ে সাগরদত্তের এক নার্সের প্রশ্ন, “কর্তৃপক্ষ বলছেন নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়া হলে এত জন লোক উপরে উঠলেন কী করে?” পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ঘটনার সময় পুলিশ কার্যত দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে দাবি ওই নার্সের। তিনি বলেন, “আমাদের যখন মারছিলেন (রোগীর পরিজনেরা), পুলিশকর্মীরা দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন।” বস্তুত, এই একই অভিযোগ তুলেছেন সাগর দত্তের জুনিয়র ডাক্তারেরাও।

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে শুক্রবার রাতের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজের দৃশ্য।

সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে শুক্রবার রাতের ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

শুক্রবার রাতের ঘটনার পর জুনিয়র ডাক্তারদের মতো নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন সাগর দত্তের নার্সেরাও। তাঁরা বলছেন, “আমরা চাকরি করতে এসেছি মানে এই নয় আমরা সাধারণ মানুষের হাতে মার খেতে এসেছি। আমরা মানুষকে পরিষেবা দিতে এসেছি। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?” হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত চেঞ্জিং রুম নেই বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। পাশাপাশি, শুক্রবার রাতের ঘটনায় পুলিশ ঠিক মতো এফআইআর দায়ের করেছে কি না, তা নিয়েও সংশয় বিক্ষুব্ধ নার্সদের মনে। নিরাপত্তা ও পরিকাঠামোগত এমন বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে শনিবার সকালে হাসপাতালের এমএসভিপির ঘরের সামনে চলে বিক্ষোভ, স্লোগান।

হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগের সঙ্গে সহমত সাগর দত্ত হাসপাতালের এমএসভিপি চিকিৎসক সুজয় মিস্ত্রিও। শুক্রবার রাতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “সব রোগী অমর হবেন, এটা ভাবা খুব অন্যায়। কোনও রোগী যদি ৫-৭ দিন ধরে অসুখে ভোগেন এবং মৃতপ্রায় অবস্থায় হাসপাতালে আসেন, তাঁকেও সুস্থ করে বাড়ি পাঠাতে হবে এমন ভগবান এখানে নেই। এখানে যাঁরা আছেন, তাঁরা ডাক্তার এবং নার্সিং স্টাফ। তাঁরাও মানুষ।”

পাশাপাশি নিরাপত্তা বিষয়ক দিকগুলিও দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এমএসভিপি। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই নিরাপত্তার দিকটি দেখা হবে। সেই জন্যই চেষ্টা চলছে। এখানে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। চেঞ্জিং রুম অপর্যাপ্ত রয়েছে, এ কথা বলতে পারেন। তবে আরজি করের ঘটনার পর আমরা স্বাস্থ্য ভবন থেকে অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু নির্মাণকাজ তো রাতারাতি হয়ে যায় না। সেই কাজগুলো শুরু হবে।”

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তার বিষয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন সাগর দত্ত মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানও। শুক্রবার রাতের ওই ঘটনাকে ‘নিন্দনীয়’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। অধ্যক্ষের মতে, হাসপাতালের চিকিৎসক, পড়ুয়া ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। তবে, একই সঙ্গে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরার জন্যও জুনিয়র ডাক্তারদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

সাগর দত্ত হাসপাতালে শুক্রবার রাতে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযোগ, রোগীর পরিবারের সদস্যেরা হাসপাতালের চার তলায় উঠে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের উপর হামলা চালান। ভাঙচুর করা হয় মহিলাদের ওয়ার্ডে। এমনকি, মহিলা চিকিৎসকদের ঘর থেকে টেনে বার করে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। শুক্রবার রাতের ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে কামারহাটি থানার পুলিশ। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সদর্থক পদক্ষেপ না পাওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শনিবার তাঁদের কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকের পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
Advertisement