পেট্রাপোলে ফাঁকা দোকানপাট। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একের পর এক বাস। যাত্রীর দেখা নেই। ফলের দোকানে থরে থরে সাজানো আপেল, কমলালেবু, আঙুর ক্রেতার নামগন্ধ নেই। ফাঁকা অটো, ছোট গাড়ি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে। হ্যান্ড কুলিদের বাঁশের মাচায় কেউ ঘুমোচ্ছেন। কেউ তাস খেলছেন। হোটেল, খাবারের দোকানগুলি খাঁ খাঁ করছে। মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র শুনশান।
বুধবার এমন ছবি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর পেট্রাপোলের!
বাংলাদেশে অশান্তির জেরে এখন দু’দেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত অনেকটাই কম। তারই প্রভাব পড়েছে পেট্রাপোল বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে। বনগাঁ মহকুমায় বড় কোনও শিল্প-কলকারখানা নেই। এলাকার বহু মানুষের রুজি-রোজগার পেট্রাপোল বন্দরকে ঘিরে। কয়েক হাজার মানুষ এখানে নানা কাজকর্মে জড়িয়ে। ৬ অগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন এবং তাঁর দেশত্যাগের পর থেকেই বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব পেট্রাপোলের অর্থনীতির উপরে পড়েছিল। মাঝে কয়েক দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। হিন্দু ধর্মগুরু চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের পরে ফের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে দৈনিক কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। এখন তা কমে গিয়েছে অনেকাটাই। ভারত সরকার এখন বাংলাদেশিদের মেডিক্যাল ভিসা ছাড়া আর কোনও ভিসা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।
সাধারণ সময়ে বাংলাদেশ থেকে যাত্রীরা পেট্রাপোলে এসে এখান থেকে অনেকে বাসে ধরে সরাসরি কলকাতা পৌঁছতেন। পেট্রাপোলে একাধিক বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার বাস আছে। গত কয়েক দিন ধরে যাত্রীর অভাবে বাসগুলি সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকছে। ‘সোহাগ’ পরিবহণ কর্তৃপক্ষের তরফে দীপক ঘোষ বলেন, ‘‘পেট্রাপোল থেকে কলকাতার মধ্যে ৩৭টি বাস যাতায়াত করে। এখন যাত্রী নেই বলে সারা দিনে তিন-চারটি বাস যাতায়াত করছে।’’ পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে অনেক বাংলাদেশি অটো ধরে বনগাঁ স্টেশনে এসে ট্রেনও ধরেন। পেট্রাপোল থেকে বনগাঁ স্টেশন পর্যন্ত শ’খানেক অটো যাতায়াত করে। এখন যাত্রীর অভাবে অটো চালকদের কাজ কমেছে অনেকটাই। সুশান্ত মণ্ডল নামে এক অটো চালক বললেন, ‘‘সাধারণ সময়ে দিনে প্রায় ১৪০০ টাকা আয় করতাম। এখন তা ৪০০ টাকায় নেমে গিয়েছে!’’ ছোট গাড়ির চালকদেরও একই অবস্থা। পেট্রাপোল বন্দরে প্রচুর ফলের দোকান, কসমেটিক্সের দোকান, স্টেশনারি দোকান, চায়ের দোকান, খাবারের দোকান আছে। বাংলাদেশিরা এখান থেকে কেনাকাটা করেন। এখন দোকানগুলিতে ক্রেতার অভাব চরম। ফলের দোকানি দিলীপ অধিকারীর কথায়, ‘‘কার্যত কোনও ক্রেতারই দেখা মিলছে না।’’
যাত্রীদের ব্যাগ, মালপত্র বহন করার জন্য প্রচুর ‘হ্যান্ড কুলি’ আছে। তাঁদেরও রুজিরোজগার বন্ধ। এক জন জানালেন, ৬ অগস্ট থেকে অনেকেই যাত্রীর অভাবে কাজ ছেড়ে চাষের খেতে কাজ ধরেছেন। এ ভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।’’ যাত্রীরা দু’দেশের মধ্যে যাতায়াতের সময়ে টাকা ভাঙিয়ে নিয়ে যান। সে জন্য আছে বেশ কিছু মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র। একটি কেন্দ্রের মালিক কার্তিক ঘোষ বলেন, ‘‘৬ অগস্টের পর পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হয়েছিল। কিন্তু এখন তো কার্যত কোনও যাত্রী নেই। ফলে আমাদেরও হাত খালি।’’
বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনীতির উপরে নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ চাইছেন, দ্রুত বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক।