Pisciculture

বর্জ্যমিশ্রিত নদীর জলে মাছ চাষের ক্ষতি, অভিযোগ সরকারি অনীহার

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে চরম ক্ষোভ রয়েছে মাছ চাষিদের মধ্যে। সমস্যা সমাধানে পঞ্চায়েত তথা প্রশাসনের উদাসীনতা রয়েছে বলেও অভিযোগ অনেকের।

Advertisement
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২৩ ০৭:৪৮
An image of fish

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জল পড়ে, মাছ মরে।

বৃষ্টির জল নয়। আবাসিক এলাকার আবর্জনাময় জল। গ্রামের পাশ দিয়ে বইছে বিদ্যাধরী নদীর শাখা। বছরের পর বছর সেই জলই ভরসা ছিল বারাসত-২ ব্লকের বহু গ্রামের মাছ চাষিদের। কিন্তু এখন আবাসিক এলাকার দূষিত জল সেই শাখা নদীতে মিশে সেখানকার ভেড়িগুলিকেও দূষিত করছে। যার জেরে গত কয়েক বছর ধরেই চিংড়ি-সহ একাধিক ধরনের মাছের চাষ ধাক্কা খাচ্ছে। চাষিরা জানাচ্ছেন, সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ। কারণ ওই মাছ মরে গেলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়। যার জেরে ব্যবসায়ীরা এখন ওই ধরনের মাছ চাষে অনীহা দেখাচ্ছেন। ফলে মার খাচ্ছে রফতানির ব্যবসাও।

Advertisement

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই নিয়ে চরম ক্ষোভ রয়েছে মাছ চাষিদের মধ্যে। সমস্যা সমাধানে পঞ্চায়েত তথা প্রশাসনের উদাসীনতা রয়েছে বলেও অভিযোগ অনেকের। চিংড়ির বাজার ধরতে গলদা-বাগদার বদলে মেদিনীপুরের ভেনামি চিংড়ির চাষ করে গত কয়েক বছর ধরে হারানো বাজার ধরার চেষ্টা করছেন চাষিরা। যদিও প্রশাসনের দাবি, বহু ভেড়ির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কারণেই চাইলেও চাষিদের সাহায্য করা যাচ্ছে না।

বারাসত ব্লক-২ এর শাসন, ফলতি বেলিয়াঘাটা, দাদপুরের একটি অংশ, কীর্তিপুর ১ ও ২, রোহন্ডা চণ্ডীগড় ও কেমিয়া খামারপাড়া অঞ্চলেমাছের চাষ হয়। চাষিরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ভাবে লক্ষাধিক মানুষ ওই মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। ১৪-১৫ হাজার বিঘা জুড়ে ভেড়িতে চলে মাছের চাষ। তাঁরা জানাচ্ছেন, কামদুনিখাল, হাড়োয়া খাল, ভুবনপুর খাল-সহ বিভিন্ন বড় বড় খাল ওসেগুলির শাখার মাধ্যমে বিদ্যাধরী থেকে মাছের ভেড়িতে জল আসে। অতীতে যখন দূষণের সমস্যা ছিল না, তখন সরাসরি নদীর জল ভেড়িতে ঢুকিয়ে চাষ করা হত। কিন্তুবর্তমানে শহরের বর্জ্য জল ওই খালে পড়ায় ভেড়িতে নদীর জলের সঙ্গে বিষাক্ত বর্জ্যও ঢুকে পড়ছে। তাতে এক দিকে যেমন পলি জমে ভেড়ি উঁচু হয়ে যাচ্ছে, তেমনই অন্য দিকেজমির ক্ষতিও হচ্ছে। এক সময়ে বৈদেশিক মুদ্রা লাভের জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিংড়ির চাষ মূলত এর জেরেই ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চাষিরা জানাচ্ছেন, গলদা কিংবা বাগদা চিংড়ি গরমে সহজেই মরে যায়। ভেড়ির জমি পলি পড়ে উঁচু হয়ে যাওয়ায় যতটা গভীর জল রাখা দরকার, তা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তার জেরে চিংড়ি মাছ জলের উপরিতলের গরম থেকে বাঁচতেগভীরে যেতে না পেরে মরে যাচ্ছে। চাষিদের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে জলের দূষণ মাপার পরিকাঠামো থাকলেও তা কার্যত অকেজোঅবস্থায় পড়ে রয়েছে। চাষিরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে আন্দাজ করে চুন, মহুয়ার খোলের মতো উপাদান দিয়ে ভেড়ির জল শোধন করে মাছের চাষ করেন। ওই সব উপাদানের অনুপাতে গোলমাল হলেই মাছ মরে যায়। এক চাষির কথায়, ‘‘জলেরদূষণ নিয়ন্ত্রণ করে মাছ চাষ করতে গিয়ে চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আর গলদা-বাগদার মতো মাছ বাঁচিয়ে রাখার খরচ বেশি। ফলে ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে গলদা-বাগদা চাষ করাতে চাইছেন না। তার জেরে গত কয়েক বছর ধরে ভেনামি নামে এক ধরনের চিংড়ির চাষ শাসন অঞ্চলে হচ্ছে। তবে সেটা গলদা-বাগদার মতো বিদেশের বাজার সহজে ধরতে পারছে না।’’

একই সঙ্গে, ভেড়ি থেকে তুলে নেওয়া মাছ জমিয়ে রাখার হিমঘরের সুবিধাও তেমন নেই বলেই চাষিদের অভিযোগ। তাঁদের অভিযোগ, কাচকল মোড়ের কাছে সোনা টিকারিয়ায় দু’দশক ধরে বন্ধ হিমঘর খোলার কোনওউদ্যোগও কোনও মহলেই দেখা যায়নি। অবশ্য বারাসত-২ ব্লকের প্রশাসন জানাচ্ছে, সিংহভাগ ভেড়িই সরকারি ভাবে নথিভুক্ত নয়। যে কারণে প্রশাসন চাইলেই ওই সব ভেড়ির জলের দূষণ পরীক্ষা করতে পারবে না। সেই সঙ্গে, চিংড়িরচাষ করতে এক সময়ে ওই সব ভেড়িতে নিয়মিত নোনা জল ঢোকানো হয়েছে। যার জেরে বদলে গিয়েছে জমির চরিত্র। বর্তমানে সেই নোনাজল না পাওয়ায় চিংড়ির চাষ ব্যাহত হচ্ছে। তবে বর্ষায় ভেড়িতে জল ঢোকানোর সময়ে দূষণের মাত্রা অনেক কম থাকে বলেই দাবি বিডিও-র দফতরের।

বিডিও অর্ঘ্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারের ভূমি ও মৎস্য দফতর শালি জমিকে ভেড়িতে বদলানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছে। ওই সব জমির রেকর্ড পরিবর্তন করা হলে তখনমাছ চাষের জন্য ঋণ, জলের দূষণ কাটানো-সহ অন্য পরিকাঠামোগত সুযোগ দেওয়া সম্ভব হবে।’’ চিংড়ির চাষের ওই সব জায়গার একটি বড় অংশ পড়ে হাড়োয়া বিধানসভা এলাকায়। স্থানীয় বিধায়ক হাজিনুরুল ইসলামের কথায়, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ তো করা দরকারই। পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে সমাধানসূত্র বার করতে হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement