Amit Mondal

মারা গিয়েও নিঃস্ব বাবা-মায়ের ভরণপোষণ করে চলেছেন ইউটিউবার অমিত

বকখালি বেড়াতে যাওয়ার পথে গত ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি মৃত্যু হয় জনপ্রিয় ইউটিউবার অমিত মণ্ডলের। এখনও তাঁর তৈরি করা ভিডিয়োগুলি সমান জনপ্রিয়।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
ফ্রেজারগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩ ১৮:৪০
Deceased YouTuber Amit Mondal’s parents running family from the earning of son

মারা গিয়েও বাবা-মায়ের ভরণপোষণ করে চলেছেন সেই অমিত। ছবি: সংগৃহীত।

ইউটিউবে ভিডিয়ো করেই অর্থসঙ্কটে ভরা পরিবারকে একটু একটু ছন্দে ফেরাচ্ছিল শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী অমিত মণ্ডল। সোমবার ২০ দিন হল ছেলে গত হয়েছেন। এই কয়েক দিনে ধুলো জমেছে অমিতের ঘরে। ভিডিয়ো তৈরির জন্য ব্যবহার করা আলো, ক্যামেরা, ক্যামেরার স্ট্যান্ড— সব কিছুতেই ধুলো জমছে। তবে ছেলের করে যাওয়া সেই সব ইউটিউব ভিডিয়ো নেটাগরিকদের কাছে এখনও সমান জনপ্রিয়। ইউটিউব থেকে এখনও টাকা পাচ্ছেন অমিতের দুঃস্থ বাবা-মা। মারা গিয়েও বাবা-মায়ের ভরণপোষণ করে চলেছেন বরাবর দায়িত্ব-কর্তব্যে অবিচল সেই অমিত।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনও তাঁর জীবনীশক্তিকে হার মানাতে পারেনি। দারিদ্রও টলাতে পারেনি অমিতের বড় হওয়ার ইচ্ছেকে। দুঃস্থ বাবা-মায়ের প্রতিবন্ধী ছেলেটি পড়াশোনা করতেন কলেজে। প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সেই সঙ্গে নেশা এবং পেশা ছিল নিত্যনতুন ভিডিয়ো বানানোর। তাঁর হাসিমুখে জীবনজয়ের কথা, নানা অনুপ্রেরণামূলক ভিডিয়ো খুব অল্প সময়ের মধ্যে নেটাগরিকদের মন পেয়েছিল। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। এক দিন তখন আচমকাই ঝটকা। মাত্র ২২ বছরের যুবকের প্রাণ কাড়ে একটি পথ দুর্ঘটনা। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বকখালি বেড়াতে গিয়ে বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় অমিতের।

Advertisement

অমিতের বাবা চিত্ত এবং মা সন্ধ্যা মণ্ডলের এখন দিন কাটছে ছেলের স্মৃতিগুলো নিয়ে। তাঁরা দু’জনেই শারীরিক ভাবে অক্ষম। বৃদ্ধ বয়সে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে অসহায় ওই দম্পতি। ছেলের তৈরি করা ভিডিয়ো দিয়ে আর কত দিন তাঁরা টাকা পাবেন তা নিজেরাও জানেন না। তবে ছেলের মৃত্যুর পর অনেকেই তাঁদের খোঁজ নিচ্ছেন বলে জানান চিত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘কত জায়গা থেকে লোকজন আসছে।’’ অমিতের পোট্রেট এঁকে দিয়েছেন তাঁর এক ভক্ত। সেটাই টিনের ঘরের কোণে একটি টেবিলে পড়ে। শাড়ির আঁচল দিয়ে তা পরম যত্নে মুছে চোখ ছলছল করে ওঠে বৃদ্ধা মায়ের। বলেন, ‘‘সোনা ছেলে ছিল আমার।’’

অমিতের বাবা-মায়ের নিয়মিত খোঁজখবর নেন তাঁর দুই বন্ধু। তাঁরা অমিতকে ইউটিউবের কাজে সাহায্য করতেন। তাঁরাও সাধ্যমতো অর্থসাহায্য করছেন। সরকারি ভাতারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যে ঘরে সারা ক্ষণ ছেলে কাজে মজে থাকত, তা আর খুলতে মন চায় না বাবা-মায়ের। অমিতের ছোট্ট ঘরটা তাই তালাবন্ধ হয়ে পড়ে থাকে। ছেলের স্মৃতি মনে বন্দি করেই বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান চিত্ত ও সন্ধ্যা।

আরও পড়ুন
Advertisement