R G Kar Hospital Incident

সমাজমাধ্যমে মুখ খুলছে পুলিশ, বিতর্ক

রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের বহু আধিকারিক সমাজমাধ্যমে নিজস্ব মতামত, স্লোগান লিখতে শুরু করেছেন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৪৬
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক-ছাত্রীকে খুন-ধর্ষণ কাণ্ডের পরে বিচার চেয়ে আন্দোলন ছড়িয়েছে সারা পৃথিবীতে। নানা স্লোগান উঠছে জনতার মাঝে। জনমানসে আন্দোলনের স্থায়িত্ব বাড়িয়েছে এই স্লোগান। নানা মহলেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে এ বার সমাজমাধ্যমে সরব পুলিশের একাংশ।

Advertisement

পুলিশকে লক্ষ্য করে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, ‘পুলিশ তুমি চিন্তা করো, তোমার মেয়েও হচ্ছে বড়’। এই স্লোগানকে ঘিরেই মূলত সরগরম সমাজমাধ্যম। আর জি কর-কাণ্ডে প্রথম থেকেই কাঠগড়ায় কলকাতা পুলিশ। সিবিআই তদন্ত ভার নিলেও ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থামেনি। বিভিন্ন প্রতিবাদ মিছিল থেকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ শোনা গিয়েছে। এ বার পুলিশও পাল্টা স্লোগান দিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করল। রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের বহু আধিকারিক সমাজমাধ্যমে নিজস্ব মতামত, স্লোগান লিখতে শুরু করেছেন। সংগঠিত বাহিনীর উপরমহলের নির্দেশ ছাড়া এমনটা হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট নানা মহল।

বনগাঁর এসডিপিও অর্ক পাঁজা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘পুলিশের মেয়ের চিন্তা ছাড়ো, সে লড়াই করে হচ্ছে বড়।’ এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘‌আমরাও এই সমাজের মানুষ। আমাদের ঘরেও মেয়ে আছে। কিন্তু নির্দিষ্ট একটি পেশার মানুষের প্রতি এমন আক্রমণ, হুমকি আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। এতে আমাদের পরিবারের উপরে খুবই মানসিক চাপ পড়ছে।’’ সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের কিছু কর্মী সমাজমাধ্যমে এক ধাপ এগিয়ে লেখেন, ‘হচ্ছে বড় ছেলেও তোমার, তার দায়ও কি পুলিশের একার?’ সম্প্রতি নবান্ন অভিযানে জখম পুলিশ কর্মীর ছবিও সমাজমাধ্যমে ডিপি করেছেন অনেক পুলিশ কর্মী-আধিকারিক।

পুলিশ-বিরোধী মনোভাবাপন্ন অনেককে সমাজমাধ্যমে নিজের বন্ধু-তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন অনেকে, এমনও শোনা গেল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্যানিং থানার এক আধিকারিক বলেন, “বরাবর পুলিশকেই টার্গেট করা হয়। অথচ, পুলিশ সর্বদা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিজের ও নিজের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করে। দুর্গা পুজো হোক বা কোনও আনন্দ অনুষ্ঠান, পুলিশ থাকে রাস্তায়। যাতে সকলে ঠিক মতো আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।”

পুলিশের পোস্ট শেয়ার নিয়ে শুক্রবার সমাজমাধ্যমেই অভিযোগ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, পুলিশের এক বড় কর্তার নির্দেশেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওই পোস্ট শেয়ার করছেন পুলিশ কর্মীরা। ৪৮ ঘণ্টা পোস্ট রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি তাঁর।

পুলিশ অবশ্য এই বক্তব্য মানছে না। বারুইপুর পুলিশ জেলার এক কর্তা বৃহস্পতিবার একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এর পিছনে কোনও নির্দেশ নেই। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ভাবেই এই পোস্ট শেয়ার করেছি।’’ কলকাতা পুলিশের উপরে ক্ষোভের আঁচ জেলাস্তরেও এসে পড়ছে বলে দাবি পুলিশের একাংশের। পোস্ট শেয়ার করা বারুইপুর পুলিশ জেলার একটি থানার ওসি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের সুরক্ষা দেওয়া পুলিশের কাজ। পুলিশ সেই কাজ করে চলেছে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসন্তী থানার এক সাব ইন্সপেক্টর বলেন, “পুলিশ আসলে শাসক-বিরোধীদের রাজনীতির শিকার। তাঁদের জাঁতাকলে পড়ে সাধারণ মানুষের কাছে ভিলেন হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ কখনওই পুলিশকে টার্গেট করে গালাগাল করে না। আর জি করের গণ আন্দোলনের পিছনে রাজনৈতিক লাভের জন্য পুলিশকেও টার্গেট করা হচ্ছে।”

কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ট্রাফিক গার্ডের এক অফিসারের কথায়, ‘‘কেউ দুর্ঘটনায় জখম হলে তাঁকে রক্তমাখা অবস্থায় কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাই আমরা। আমরা মানুষের নিরাপত্তার জন্যই কাজ করি। কিন্তু নানা ভাবে আমাদের সমালোচিত হতে হয়। আমাদের এক সহকর্মী ডিউটি করতে গিয়ে যে ভাবে আহত হলেন, চোখটা নষ্ট হয়ে গেল, সে জন্য তো কারও কোনও প্রতিবাদ নেই! সাধারণ মানুষ একটা মোমবাতি মিছিল করছে না! আমরা পুলিশ বলেই কি এই সহমর্মিতা পেতে পারি না?’’

আরও পড়ুন
Advertisement