Jyotipriya Mallick

ভাইয়ের খুনের তদন্তভার সিবিআই নিলেই বেরোবে বালুর ভূমিকা, বলছেন সেই বরুণ বিশ্বাসের দাদা

জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির দিনেই মুখ খুললেন সুটিয়ার প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাসের দাদা অসিত। তাঁর দাবি, ভাইয়ের খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। এ বার সেই অপরাধেরও বিচার হোক।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ২২:০১
file image

বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। — ফাইল ছবি।

খুন হয়েছিলেন এক দশকেরও বেশি সময় আগে। কিন্তু রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারির প্রেক্ষিতে শুক্রবার আচমকাই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন সুটিয়ার প্রতিবাদী তথা শিয়ালদহ মিত্র ইন্সস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। ২০১২ সালের জুলাই মাসের গোড়ায় বরুণকে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় বরুণের বাবা এবং দাদা অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে। অন্য মামলায় হলেও বৃহস্পতিবার জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতার হয়েছেন। এই আবহে আবারও অভিযোগের সেই আঙুল তুলছেন বরুণের দাদা, বাবা। তাঁদের একটাই আশা, এ বার হয়তো বরুণের অপমৃত্যুর সুবিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে অন্তত।

Advertisement

২০১২ সালের ৫ জুলাই। আর পাঁচটা দিনের মতোই উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেছিলেন বরুণ। প্ল্যাটফর্ম থেকে নামতেই স্টেশন চত্বরে তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়। ২০০০ সালে গাইঘাটার সুটিয়ায় একাধিক মহিলাকে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল। সেই ঘটনায় সুবিচারের দাবিতে প্রতিবাদী মঞ্চ গড়ে তুলেছিলেন বরুণ। পুলিশ গণধর্ষণ মামলার তদন্তে নেমে সুশান্ত চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করে। দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে তিনিই বরুণকে খুনের ছক কষেছিলেন বলে উঠে এসেছিল পুলিশি তদন্তে। বরুণের পরিবার সেই সময় থেকেই উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের এক সময়ের ‘শেষ কথা’ জ্যোতিপ্রিয়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছিলেন। এখন যখন গ্রেফতার হয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়, তখন মুখ খুলছেন বরুণের পরিজনেরা। যদিও কণ্ঠে রয়েছে সংশয়।

শুক্রবার বরুণের দাদা অসিত বিশ্বাস আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই যে গ্রেফতারি হল, তা কত দিনের জন্য? স্থায়ী ব্যবস্থা তো হল না। তদন্তকারী সংস্থা যে ভাবে তদন্ত করবে, আদালতকে তো তার উপরেই নির্ভর করতে হবে। সমস্যা তো তদন্ত নিয়েই। প্রহসন হচ্ছে না তো? সুবিচার কবে পাব, সেই অপেক্ষায় বসে আছি।’’ এর পরেই অসিতের কণ্ঠে একরাশ অভিমান উঠে আসে। উঠে আসে গ্রেফতার হওয়া জ্যোতিপ্রিয়ের প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘‘এক দিন যিনি উত্তর ২৪ পরগনা শাসন করতেন, আজ তিনি গ্রেফতার। এ জন্যই কিছুটা সাহস পেয়েছি। সেই সাহস থেকেই কথাগুলো বলছি। বরুণের চলে যাওয়ার পিছনে ওঁর হাত ছিল, এটা নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। এমনকি, বরুণের কাছে মন্ত্রীর মোবাইল থেকেও ফোন আসত। রোজই হুমকি দেওয়া হত। বলা হত, বসে যেতে। কিন্তু ভাই সে সব কোনও দিনই পাত্তা দেয়নি। বরুণকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা করার চেষ্টাও করে গিয়েছেন বালু (জ্যোতিপ্রিয়ের ডাক নাম)।’’

প্রসঙ্গত, বরুণের মৃত্যুর পিছনে জ্যোতিপ্রিয়কে দায়ী করে তাঁর পরিবার। যদিও সেই বালুর গ্রেফতারিও স্বস্তি দিতে পারেনি বরুণের বাবা, দাদাকে। তবে ভয় কাটিয়ে এ বার প্রকাশ্যে বলার সাহসটুকু পেয়েছেন বলেই দাবি অসিতের। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তাঁর দাবি, জ্যোতিপ্রিয়ের প্রভাবের কারণেই বরুণ-হত্যার তদন্ত এগোয়নি এক ছটাকও। তিনি বলছেন, ‘‘গ্রেফতারি নিয়ে স্বস্তির কারণ নেই। সত্যি সত্যি যদি বিচার হয়, তা হলেই একমাত্র সুবিচার পাব। অপরাধীর অপরাধের সাজা না হলে আর কিসের স্বস্তি!’’ জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেফতারির পর তাঁর আবেদন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলছেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো সততার প্রতীক। তাঁর কাছে আর্জি, এ বার ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিন। একমাত্র তা হলেই সত্যি বেরিয়ে আসবে। জ্যোতিপ্রিয়ের ভূমিকাও দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

অসিতের দাবি, ২০১১ নাগাদ পরিবর্তনের স্লোগানেও গলা মিলিয়েছিলেন বরুণ। অসিতের আক্ষেপ, ‘‘বরুণ পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু পরিবর্তনের এক সেনানীর (জ্যোতিপ্রিয়) ষড়যন্ত্রেই বরুণকে চলে যেতে হল। আমার মাকেও ওঁরাই খুন করেছে। সুবিচারের অপেক্ষায় বসে আছি।’’

যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে। তাতে স্বস্তি না পেলেও খানিকটা হলেও আশার আলো দেখার চেষ্টা করছেন অসিতরা। তাঁদের আশা, এ বার হয়তো গতি পাবে ভাইয়ের খুনের তদন্ত। প্রকাশ্যে আসবে অভিযুক্তদের ভূমিকা।

Advertisement
আরও পড়ুন