—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অনলাইনে নাগরিক পরিচয়পত্র-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আবেদন করার আড়ালে প্রতিবেশী ব্যক্তিটি যে বাংলাদেশিদের জাল নথি ও পাসপোর্ট তৈরি করে দিত, তা জানার পরে উদ্বিগ্ন দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়া পঞ্চায়েতের বামনগাছির বাসিন্দারা।
গত সপ্তাহে ভুয়ো পাসপোর্ট চক্রে জড়িত সন্দেহে কলকাতা পুলিশ বারাসতের কাজিপাড়া থেকে গ্রেফতার করেছিল সমরেশ বিশ্বাস ও তাঁর ছেলে লিটনকে। তাদের জেরা করেই উঠে আসে মোক্তার আলমের নাম। বুধবার কাকভোরে কলকাতা পুলিশের একটি দল অভিযান চালায় বামনগাছির মোক্তার আলমের বাড়িতে। ঘণ্টা চারেক ধরে জেরা করে জাল পাসপোর্ট চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মোক্তার আলমকেও গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু ভুয়ো আধার, ভোটার কার্ড-সহ জাল পাসপোর্টও উদ্ধার হয়েছে। মোক্তার এবং তার স্ত্রীর আধার, প্যান কার্ড এবং ব্যাঙ্কের পাসবই বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। আট দিনের পুলিশি হেফাজত হয় তার।
তদন্তকারীরা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রফতানির ব্যবসা আছে মোক্তারের। ব্যবসা সূত্রে বাংলাদেশে যাতায়াতও ছিল। টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে আসা নাগরিকদের নিজের বাড়ি ও অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করে দিত সে। এলাকার মানুষদের আধার, ভোটার কার্ড ও বিভিন্ন ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে নেওয়া নথি দিয়েই বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট তৈরি করত।
এই তথ্য সামনে আসার পরেই শঙ্কিত স্থানীয় অনেকে। এলাকার বহু জনের নথি জাল করে ভুয়ো নাগরিক পরিচয়পত্র তৈরি করে মোটা টাকার বিনিময়ে তা বিক্রি করেছে মোক্তার— এমনটাই মনে করছেন তাঁর প্রতিবেশীরা। অনেকেই জানালেন, বিধবা ও বার্ধক্য ভাতা-সহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মোক্তারের সাহায্য নিয়েছেন আবেদনপত্র পূরণের সময়ে। তখন যাবতীয় নথি নেয় মোক্তার। চিন্তা বেড়েছে তাতেই। ২০২১ সালে মোক্তারকে চন্দননগর থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছিল ভুয়ো নাগরিক পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগে। জামিনে ছাড়া পেয়ে মোক্তার ফের ভুয়ো পরিচয়পত্র বিক্রি করতে থাকে বলে অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিব আলি, রবিউল ইসলাম মহম্মদ সাবির উদ্দিনেরা বলেন, ‘‘এই করেই বিলাসবহুল জীবন কাটাতে শুরু করেছিল মোক্তার। আধার, প্যান কার্ড তৈরির আড়ালে যে জালিয়াতি করছিল, তা প্রথম বার গ্রেফতার হওয়ার পরে জেনে আমরা সাবধান হলেও অনেকের কাছ থেকে তারপরেও নথি নিয়েছে। এই নথিগুলি দিয়েই বাংলাদেশিদের এ দেশের পরিচয়পত্র করে দেওয়া হয়েছে বলে ভয় পাচ্ছি।’’