জল, জঙ্গল আর পাহাড়ের অপূর্ব মিশেল শীতের মুকুটমনিপুর বাঙালি পর্যটকদের কাছে গত কয়েক বছরে উঠে এসেছে আদর্শ গন্তব্য হিসেবে।
কথায় আছে বাঙালির পায়ের নীচে সর্ষে । শীত পড়লেই আম বাঙালির মন উড়ু উড়ু । ওমিক্রন সংক্রমণের আশঙ্কা যখন দরজায় কড়া নাড়ছে তখন দূরে কোথাও না হোক কাছেপিঠে কয়েক দিনের জন্য ঘুরে আসার জন্য মন আনচান করছে আম বাঙালির। সে ক্ষেত্রে আদর্শ ঠিকানা হতে পারে বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর। জল, জঙ্গল আর পাহাড়ের অপূর্ব মিশেল শীতের মুকুটমনিপুর বাঙালি পর্যটকদের কাছে গত কয়েক বছরে উঠে এসেছে আদর্শ গন্তব্য হিসেবে।
কী দেখবেন
মুকুটমণিপুরের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য তাকে রাঢ় বঙ্গের রানি বলা হয়। বাঁকুড়ার একেবারে দক্ষিনে কংসাবতী ও কুমারী নদী যেখানে মিলেছে সেখানেই আদিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি নিয়ে গড়ে উঠেছে মুকুটমণিপুর জলাধার। ঘন নীল জলের মাঝেমাঝে উঁকি দিচ্ছে অসংখ্য ডুবো পাহাড়। জলাধারের চারিদিকে যে দিকে চোখ ফেরানো যায় সে দিকেই রয়েছে সবুজে ঢাকা ছোট ছোট পাহাড় আর টিলা। ইচ্ছে হলে মুকুটমনিপুর জলাধারের পাড় ধরে হেঁটে অথবা ভ্যান রিক্সায় চড়ে সোজা চলে যেতে পারেন জলাধারের গায়ে থাকা পরেশনাথ পাহাড়ে। কথিত আছে এখন থেকে হাজার বছর আগে দক্ষিণ বাঁকুড়ায় জৈন ধর্ম প্রভাব ফেললে এই পরেশনাথ পাহাড় হয়ে ওঠে জৈন তীর্থ ক্ষেত্র। পাহাড়ের গায়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথরের জৈন তীর্থঙ্করদের একাধিক মূর্তি সেই সাক্ষ্য এখনও বয়ে চলেছে।
পরেশনাথ পাহাড়ে যাওয়ার সময় ঢুঁ দিতে পারেন মুসাফিরানায়। মুসাফিরানা আসলে জলাধারের গায়ে থাকা একটি সাজানো পাহাড়। এই পাহাড়ের গায়ে বাঁধানো সিঁড়ি বেয়ে মুসাফিরানার চুড়ায় উঠলে এক ঝলকেই চেখে নিতে পারবেন মুকুটমণিপুরের যাবতীয় নৈসর্গিক শোভা। হাতে সময় ও ইচ্ছে থাকলে নৌকায় চড়ে মুকুটমণিপুরের গভীর জলে ভাসতে ভাসতে পৌঁছে যাওয়া যায় জলাধারের অন্য পাড়ে থাকা ডিয়ার পার্কে।
হাতে একটু বেশি সময় থাকলে মুকুটমণিপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় ঝিলিমিলির জঙ্গল ও সুতান। ভাগ্য প্রসন্ন হলে দু’পাশের ঘন শাল পিয়ালের জঙ্গল পেরিয়ে ঝিলিমিলি ও সুতানের রাস্তার ধারে চোখে পড়তে পারে জংলি ময়ূর, শেয়াল বা ছোটখাটো বন্য প্রানীদের চলাফেরা। রাস্তার ধারে থাকা একাধিক ভিউ পয়েন্ট থেকে ঘন শাল, পিয়াল, মহুয়ার জঙ্গলে ঢাকা সারি দেওয়া পাহাড়ের উপত্যকায় চোখ রাখলে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন আরণ্যক জীবনে।
ইচ্ছে হলে উঁকি দেওয়া যায় জঙ্গলে ঘেরা ছোট ছোট আদিবাসী পল্লিতেও । হলফ করে বলা যায় ছোট ছোট এই গ্রামগুলির সাঁওতাল বাসিন্দাদের নিস্তরঙ্গ জীবন যাত্রা দেখলে আপনি ভুলে যেতে বাধ্য নাগরিক সভ্যতার ব্যস্ত জীবন। জঙ্গলের নিস্তব্ধতা, পাখির কলতান বা দিনের বেলাতেও ঝিঝি পোকার ডাক যদি বহু দিন শোনা না হয়ে থাকে, তবে এক বার ঘুরে আসতে পারেন মুকুটমণিপুর থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে থাকা সুতানে। সময় যেন যুগ যুগান্ত ধরে থমকে দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র আপনারই অপেক্ষায়।
কোথায় থাকবেন
রাত্রিবাসের জন্য মুকুটমণিপুর জলাধারের পাড়ে একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হোটেল রয়েছে। ইচ্ছে ও প্রয়োজনমতো হোটেলে দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘর ভাড়া পড়বে। তবে আগে থেকে বুকিং করে মুকুটমণিপুরে যাওয়াই সুবিধাজনক। অধিকাংশ হোটেলই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বুকিং করা যায়। অরণ্যের দিনরাত্রি কাটাতে চাইলে ঝিলিমিলিতেও থাকতে পারেন। সেখানে বেসরকারি হোটেলে ট্রি-হাউজ বা তাঁবুতেও রাত্রিবাসের সুযোগ রয়েছে। ঝিলিমিলির হোটেলও বুকিং করতে পারেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ।
কলকাতা থেকে কীভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস ও সাঁতরাগাছি থেকে রুপসী বাংলা ট্রেন ধরে বাঁকুড়া স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাঁড়া করে মুকুটমণিপুর যাওয়া যায়। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার বাস ধরেও সরাসরি কলকাতা থেকে মুকুটমণিপুর যাওয়া যায়। এ ছাড়া কলকাতা থেকে ট্রেন বা বাসে চড়ে দুর্গাপুর পৌঁছে সেখান থেকেও গাড়ি ভাঁড়া করে মুকুটমণিপুরে পৌঁছনো যায় ।