পরিযায়ী পাখি ছবি: নিজস্ব চিত্র
শীত এলেই ওরা চলে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। আসে একেবারে দল বেঁধে হাজারে হাজারে। গত প্রায় এক দশক ধরে এটাই রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁকুড়ার শহরতলীর ছোট্ট একটি ঝিলে আসা পরিযায়ী পাখিদের। শীত পেরলে ফের নিজের নিজের দেশে উড়ে যায় এই পরিযায়ী পাখিরা। শীতের অতিথিদের আপ্যায়নের কসুর করেন না স্থানীয় মানুষ। পাখিদের নিরাপত্তা দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয় ঝিলের রক্ষণাবেক্ষণকারী স্থানীয় একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষও ।
গত এক দশক আগেও বাঁকুড়া শহরের অদূরে থাকা পুয়াবাগান এলাকার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ঝিল পড়ে থাকত অনাদরে। সেখানে কালেভদ্রে স্থানীয় দু’-একটি মাছরাঙা অথবা বক নামলেও পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলত না। কিন্তু গত এক দশকে একান্তে পড়ে থাকা সেই ঝিলের চেহারা ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছে। এখন নভেম্বর মাস পড়লেই এই ঝিলে আসতে শুরু করে সরাল জাতীয় পরিযায়ী পাখিরা। প্রথম দিকে সংখ্যায় কম এলেও ধীরে ধীরে সংখ্যাটা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, দাবি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষের।
বেসরকারি ওই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের রেজিস্ট্রার রামানন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন,“আমাদের কলেজ চত্বরের এক দিকে থাকা এই ঝিল অত্যন্ত নিরিবিলি। কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে শিক্ষক শিক্ষিকারা খুব একটা এ দিকে আসেন না । গত এক দশক আগে এই ঝিলে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে। এই ঝিল পাখিগুলির কাছে নিরাপদ মনে হওয়ায় ক্রমশ তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাখিরা এলে তাদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। মোতায়েন করা হয় নিরাপত্তারক্ষীও।’’
কলেজের অধ্যাপক তাপস সনগিরি বলেন, “কলেজ খোলা থাকলে শীতের সময়ে দুপুরে পড়ুয়া ও শিক্ষক ও শিক্ষিকারা ঝিলের ধারে এসে বসে থাকি। তন্ময় হয়ে ঝিলের জলে একসঙ্গে হাজার হাজার পাখির ভেসে বেড়ানো ও খেলা দেখি। ঝিলের ধারে শীতের রোদে পিঠ লাগিয়ে পাখির কিচির মিচির শব্দ শুনতে শুনতে সময় পেরিয়ে যায় অনায়াসেই।’’
গত এক দশকে বাঁকুড়া শহরের কলেবর যেমন বেড়েছে তেমনই বৃদ্ধি পেয়েছে লোকসংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানবাহন । সব মিলিয়ে বাঁকুড়া শহরের দূষণ এখন সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারে যে কোনও শিল্প শহরকেও। আর এই দূষণের প্রভাবেই আর পাঁচটা শহরের মতো বাঁকুড়া শহরেও মুখ লুকিয়েছে চড়াই , বুলবুলি, শালিকেরা। বাঁকুড়া শহরের যে সব মানুষ পাখি ভালোবাসেন, তাঁরা এখন অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন শহরতলীর ওই ঝিলে। ভিড় জমছে ফটো শিকারীদেরও।
বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ চন্দ বলেন,“এখন বাঁকুড়া শহরে পাখিদের দেখা পাওয়া দায়। শহর থেকে একটু দূরে হাজার হাজার পাখি দেখার এমন ঠিকানার খোঁজ পেলে সুযোগ হাতছাড়া করতে পারবেন না অনেকেই। তবে যাতে পাখিরা ওই ঝিলে কোনও ভাবে বিরক্ত না হয় সে ব্যাপারে সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।”