Kalej Valley

বর্ষার রূপ দেখতে যাবেন নাকি সবুজ চা-বাগান ঘেরা কালেজ ভ্যালিতে?

যে দিকে তাকানো যায়, শুধু সবুজ চা-বাগান। দিনভর শোনা যায় পাখির ডাক। আর আছে ইন্দ্রেনি ফল্‌স, যাকে লোকে ‘রেনবো ফল্‌স’-ও বলে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৪ ২০:০৪
Let’s go to Kalej valley in this monsoon

বর্ষায় চলুন এই পাহাড়ি গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়,

Advertisement

ব্যাকুল হলে তিস্তা...

মনখারাপ হলে, যাঁরা মেঘ-কুয়াশার পাহাড় দর্শনে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন, তাঁদের জন্য দার্জিলিঙের অদূরেই অপেক্ষা করছে কালেজ ভ্যালি।

মানুষের কোলাহল এখানে নেই, তবে আছে পাখির কলতান। আছে মেঘ-বৃষ্টির খেলা। আর আছে বৃষ্টিভেজা চা-বাগানের অপূর্ব রূপ। আর আছে এক ঝর্না। আছে তার বিশেষত্বও। সূর্যের আলো এই ঝর্নায় বিচ্ছুরিত হয়ে সাতরঙা রামধনু ফুটে ওঠে। স্থানীয়েরা যাকে বলেন ‘ইন্দ্রেনি ফলস’। নেপালি ভাষায় যার অর্থ ‘রামধনু’। অবশ্য ‘রেনবো ওয়াটার ফলস’ বলেই এই ঝর্না এখন পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছে।

বর্ষায় লোকজন বিভিন্ন জলাধার, ঝর্নার ধারে যেতেই পছন্দ করেন। তবে একদল ভ্রমণপিপাসুর প্রেম বর্ষার পাহাড়। মেঘে ঢাকা পাহাড়, যৌবনবতী পাহাড়ি নদী, ঝমঝমিয়ে পড়া বৃষ্টিতে তাঁরা পাহাড়কে নতুন ভাবে আবিষ্কার করেন। তাঁদের জন্যেই যেন অপেক্ষা করছে কালেজ ভ্যালি।

উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জায়গা বলতে সকলের মাথায় আসে হিমালয়ের রানি দার্জিলিঙের কথা। কিন্তু সেই দার্জিলিং এখন কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত। অনেকেই এখন দার্জিলিং ঘুরে, থাকার জন্য কাছাকাছি অন্য রকম জায়গা খুঁজছেন। তাঁদের কাছেও অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠতেই পারে কালেজ ভ্যালি।

দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে চা-বাগান ঘেরা কালেজ ভ্যালি যেন পর্যটকদের কাছে লুকোনো রত্নভান্ডার। নিকটতম বড়সড় লোকালয় বলতে রংবুল। সেখান থেকে জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি রাস্তা নেমেছে নীচে। সেখান থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে এই কালেজ ভ্যালি।

জানা যায়, এখানকার চা-বাগান বহু পুরনো, সেই ব্রিটিশ আমলের। পরে অবশ্য তা হাতবদল হয়। শোনা যায়, এই জায়গার নাম এসেছে ‘কালিজ ফিজ্যান্ট’ পাখির নাম থেকে। ‘কালিজ’ থেকেই নাকি লোকমুখে হয়ে গিয়েছে কালেজ ভ্যালি।

Let’s go to Kalej valley in this monsoon

দার্জিলিং থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে চা-বাগান ঘেরা কালেজ ভ্যালি যেন পর্যটকদের কাছে লুকোনো রত্নভান্ডার। —নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু কেন বর্ষায়?

বর্ষায় বিস্তীর্ণ চা-বাগান জল পেয়ে আরও সবুজ হয়ে ওঠে। আর মুষলধারে বৃষ্টির শেষে যদি ক্ষণিকের রোদ ওঠে, তখন প্রকৃতির ক্যানভাসে ফুটে অন্য রূপ। মেঘ সরে গিয়ে দূরদূরান্ত পর্যন্ত দেখা যায় সবুজ পাহাড়ের বুকে সরু পথের রেখা। চা-বাগানের শেড-ট্রিতে তখন কলতান জুড়ে দেয় পাখিরা। ক্যামেরার লেন্স তাক করলে রকমারি পাখির ছবি বন্দি হতে বাধ্য। পক্ষী পর্যবেক্ষক থেকে ট্রেকার, কিংবা আলসেমিতে মোড়া ছুটির দিন কাটাতে চাওয়া পর্যটক, সকলের কাছেই এ এক স্বপ্নপূরণের ঠিকানা।

কালেজ ভ্যালি থেকে ২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে ইন্দ্রেনি ফলস। সেখান যেতে রীতিমতো ট্রেক করতে হয়। চাইলে কেউ গাড়িতে খানিকটা গেলেও শেষ এক কিলোমিটার ঘন গাছপালায় ঘেরা পাকদণ্ডি বেয়ে হাঁটতেই হয়।

বর্ষায় জল বাড়লে ঝর্নার রূপ তখন অনন্য। পাহাড়ের বুকে তখন সে পূর্ণযৌবনা। আর যদি কোনও ভাবে রোদ ওঠে, তবে সেখানেই দেখা মেলে রামধনুর।

এই অফবিট গ্রামে কিন্তু জিয়োর মোবাইল সংযোগ বেশ কিছু জায়গায় ভাল। তা ছাড়া বিভিন্ন হোম স্টে-র নিজস্ব ওয়াইফাই রয়েছে। ফলে চাইলে কেউ এই সব জায়গাকে ‘ওয়ার্কেশন’ হিসেবে ব্যবহার করতেই পারেন।

থাকার জায়গা

কালেজ ভ্যালিতে নানা মানের হোম স্টে রয়েছে। একেবারে চা-বাগানের ভিতরে ধাপে ধাপে নেমে যাওয়া একটি হোম স্টে ইদানীং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কত দিন লাগবে, কোথায় ঘুরবেন— নির্ভর করবে কী ভাবে ঘুরতে চাইছেন, তার ওপর। কেউ চান এমন সুন্দর নিরিবিলি জায়গায় হোম স্টে-র বারান্দায় বসে মেঘ-কুয়াশার খেলা দেখতে। কেউ চান তার মধ্যেই ঘোরাঘুরি করতে। দু’রাত-তিন দিনের মধ্যেই কালেজ ভ্যালি ঘোরা যায়। চা-বাগান পায়ে হেঁটেই ঘোরা যায়। আকাশ পরিষ্কার থাকলে আশপাশের একটি ভিউ পয়েন্টেও যাওয়া যায়। এ ছাড়া এখান থেকে দার্জিলিং, সোনাদা, তাকদা, রঙ্গারুনও ঘুরে নিতে পারেন চাইলে।

কী ভাবে যাবেন

এনজেপি থেকে কালেজ ভ্যালির দূরত্ব মোটামুটি ৭০ কিলোমিটার। সময় লাগে আড়াই থেকে ৩ ঘণ্টা। সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। দার্জিলিং থেকে দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। সাধারণত রংবুল হয়েই কালেজ ভ্যালি যায় গাড়ি।

শেয়ার গাড়িতে যেতে হলে সোনাদা বা রংবুল গিয়ে সেখান থেকে হোম স্টে-র গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন
Advertisement