শীতের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন কলকাতার ৫ মিউজ়িয়াম থেকে। ছবি: সংগৃহীত।
বেড়ানো মানে নিছক আনন্দ উপভোগ নয়। বাইরে বেরোনো, ট্রামে-বাসে চড়া, প্রকৃতি দেখা, নতুন জায়গায় যাওয়া— সমস্ত কিছুর সঙ্গেই জুড়ে থাকে শিশুর শিক্ষা। শীতের চিড়িয়াখানায় খুদের জন্য নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। কিন্তু তার বাইরে? আর কোথায় গেলে সন্তান আনন্দ যেমন পাবে, তেমনই অনেক কিছু শিখবে?
নেহরু চিলড্রেনস মিউজ়িয়াম: নামেই অনুমেয়, এই মিউজ়িয়াম তৈরি হয়েছে শিশুদের কথা মাথায় রেখে। শুধু নতুন কিছু শেখানো নয়, সেই শিক্ষা যাতে আনন্দের সঙ্গে হয় সেটাই লক্ষ্য কর্তৃপক্ষের। খুদের মনোরঞ্জনে পুতুল এবং রকমারি গাড়ি দিয়ে তৈরি হয়েছে প্রদর্শনী। হরেক দেশের রকমারি পুতুল। বৈচিত্র তাদের সাজপোশাকে। গাড়ির রকমফেরও খুদেরা দেখতে পাবে এখানে এসে। রামায়ণ, মহাভারতের কাহিনিও এখানে তুলে ধরা হয়েছে মডেলের মাধ্যমে। মডেলের পাশেই ছোট্ট বোর্ডে সহজ বাক্যে মহাকাব্যের কাহিনি বর্ণিত রয়েছে। আর রয়েছে গণেশ গ্যালারি। ছোট, বড়, লম্বা, খাটো বিভিন্ন আকারে-আকৃতির গণেশের দেখা মিলবে এখানে।
সময়: সোম এবং মঙ্গলবার মিউজ়িয়াম বন্ধ থাকে। সপ্তাহের অন্য দিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিউজ়িয়াম ঘোরা যায়। শিশুদের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা, বড়দের ২০টাকা।
কোথায় মিউজ়িয়াম: ৯৪/১ চৌরঙ্গি রোডে এই মিউজ়িয়াম। বাসে এলে নামতে হবে থিয়েটার রোডে। রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশন থেকে হেঁটেও যাওয়া যায়।
মহাকাশ মিউজ়িয়াম: ইএম বাইপাসে মুকুন্দপুরে ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্স-এর নবনির্মিত ভবনে তৈরি হয়েছে মহাকাশ মিউজ়িয়াম। নাম দেওয়া হয়েছে, মিউজ়িয়াম ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড স্পেস সায়েন্স।
বায়ুমণ্ডল ফুঁড়ে পৃথিবীতে এসে পড়া উল্কাপিণ্ডের অংশবিশেষ, রাইট ব্রাদার্সের উড়োজাহাজের অবিকল প্রতিরূপ, চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষের পদার্পণ ঘটানো মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১-র প্রতিরূপ-সহ অনেক কিছুই চাক্ষুষ করা যায় এখানে। চাঁদ এবং মঙ্গলের পাথরের দেখা মিলবে মিউজ়িয়ামে। এখনও পর্যন্ত যত বিজ্ঞানী মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণায় বিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তাঁদের সই এবং স্মারক গ্রন্থ রয়েছে এখানে। ২০২৩ সালে মিউজ়িয়ামটির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা।
সময়: বুধবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন সকাল ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে মহাকাশ মিউজ়িয়াম।
কোথায় মিউজ়িয়াম: মিউজ়িয়ামটি রয়েছে ইএম বাইপাসে মুকুন্দপুরে। জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী মেট্রো স্টেশন থেকে হাঁটা পথে মিউজ়িয়ামটি।
এয়ারক্র্যাফট মিউজ়িয়াম: সত্যিকারের যুদ্ধবিমান ঘুরে দেখতে গেলে যেতে হবে নিউ টাউনের এয়ারক্র্যাফট মিউজ়িয়ামে। দেশে এই ধরনের সংগ্রহশালা রয়েছে দু’টি। প্রথমটি বিশাখাপত্তনমে, দ্বিতীয়টি কলকাতায়। এখানে রাখা হয়েছে ২৯ বছরের পুরনো অবসরপ্রাপ্ত যুদ্ধবিমান, টি-ইউ ১৪২। দৈর্ঘ্যে ৫৩ মিটার এবং প্রস্থে ৫০ মিটার বিমানটির ওজন ১৮৫ টন। ভারতীয় নৌসেনার তত্ত্বাবধানে সেটি তামিলনাড়ু থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। সংগ্রহশালাটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব রয়েছে হিডকো।
সময়: সোমবার বন্ধ। শনি এবং রবিবার দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মিউজ়িয়াম খোলা থাকে। অন্যান্য দিন দুপুর আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মিউজিয়াম ঘুরে দেখা যায়।
কোথায় মিউজ়িয়াম: নিউটাউন থানার পাশে ডিজে ব্লকে রয়েছে মিউজ়িয়ামটি। ১ নম্বর এয়ারপোর্ট থেকে অথবা সেক্টর ফাইভ থেকে বাসে আসতে পারেন এই মিউজ়িয়ামে।
হাওড়া রেল মিউজ়িয়াম: পুরনো দিনের রেল ইঞ্জিন, কোচের মডেলে সেজে উঠেছে হাওড়া রেল মিউজ়িয়াম। পুরনো দিনের সিনেমায় দেখা সেলুন কারেরও দেখা মিলবে এখানে। রয়েছে ভারতের প্রথম ব্রডগেজ় ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ, হারিয়ে যাওয়া স্টিম ইঞ্জিন, টয় ট্রেন থেকে দুষ্প্রাপ্য বিভিন্ন ছবি। এক কথায়, ভারতীয় রেলের বিবর্তনের সাক্ষী হাওড়ার স্টেশন লাগোয়া এই রেল মিউজিয়াম। এখানেই রাখা রয়েছে, প্রায় দেড় শতাব্দীর পুরনো ভারতীয় রেলের টুকরো টুকরো ইতিহাস! টয়ট্রেন থেকে টিকিট কাউন্টার কেমন হয়, সবই খুদেরা দেখতে পাবে এখানে এলে। সংলগ্ন চত্বরে রেল কোচেই রয়েছে রেস্তরাঁ।
সময়: সোমবার ছাড়া প্রতি দিন সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রেস্তরাঁ যে হেতু অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, তাই সেখানে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলে। রেস্তরাঁয় গেলে ভিতরের চত্বরেও ঢুঁ মেরে আসা যায়।
কোথায় মিউজ়িয়াম: হাওড়া স্টেশন থেকে হাঁটা পথে মিনিট দশেক।
ট্রাম মিউজ়িয়াম: কলকাতায় ট্রামের ভবিষ্যৎ কী, তার উত্তর দেবে সময়। তবে ট্রামের বিবর্তন, ইতিহাস জানতে গেলে যেতে হবে ট্রাম মিউজ়িয়ামে। এর নাম ‘স্মরণিকা’। ধর্মতলা ট্রাম ডিপোয় দুই কামরার ট্রামের একটিতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা। কলকাতায় এই ট্রাম পরিষেবা প্রথম চালু হয় ১৮৭৩ সালে। প্রথমে ঘোড়ায় টানা ট্রাম চালানো হত। ১৯০২ সালে বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়। শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ট্রামের বিবর্তন, ছবি তুলে ধরা হয়েছে ছোট্ট মিউজ়িয়ামে। খুদেকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন এখানে।
সময়: বৃহস্পতিবার ছাড়া প্রতিদিন বেলা ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ট্রাম মিউজ়য়াম।
কোথায় মিউজ়িয়াম: ধর্মতলা ট্রাম ডিপোতেই রয়েছে মিউজ়িয়াম। বাস অথবা মেট্রোয় ধর্মতলায় নেমে হেঁটে যাওয়া যাবে সেখানে।