Wrestling Federation of India suspended

পদ্মশ্রী ফেলে এসেছিলেন ৪১ ঘণ্টা আগে, কুস্তি কমিটি সাসপেন্ড হতেই সেই পদক ফেরত পেতে চান বজরং

ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নতুন কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পরে সংসদের সামনের রাস্তায় পদ্মশ্রী ফেলে এসেছিলেন বজরং পুনিয়া। কমিটি সাসপেন্ড হতেই পদক ফেরত চাইছেন অলিম্পিক্সে পদকজয়ী কুস্তিগির।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৪
wrestling

বজরং পুনিয়া। —ফাইল চিত্র

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা থেকে রবিবার বেলা দেড়টা। মাঝে ৪১ ঘণ্টার তফাতে বদলে গেল ছবিটা। যে পদ্মশ্রী তিনি রাস্তায় ফেলে দিয়ে এসেছিলেন, সেই পদ্মশ্রীই এ বার ফেরত চাইছেন অলিম্পিক্সে পদকজয়ী কুস্তিগির বজরং পুনিয়া। নেপথ্যে একটাই কারণ। জাতীয় কুস্তি সংস্থার সদ্য নির্বাচিত কমিটিকে সাসপেন্ড করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক। সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে নিজের কথা বলেছেন বজরং।

Advertisement

কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের পরে বজরং বলেন, ‘‘ক্রীড়া মন্ত্রক একেবারে ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। আমরা অভিযোগ করেছিলোম যে নতুন কমিটির উপর রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। ওরা বলে আমরা হরিয়ানা বনাম উত্তরপ্রদেশের বিভাজন করছি। সেটা সত্যি কথা নয়। আমরা দেশের হয়ে পদক জিতেছি। আমরা কমিটিতে রাজনীতি চাই না। আমরা মুখ খোলায় আমাদের ভয় দেখিয়েছে। ব্রিজভূষণ (শরণ সিংহ) কি সরকারের থেকেও বড়?’’

বজরংয়ের অভিযোগ, দেশের সব রাজ্যের কুস্তি ব্রিজভূষণের নির্দেশেই চলে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দাবি একই আছে। ভারতীয় কুস্তি সংস্থায় ব্রিজভূষণ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ঢুকতে দেওয়া যাবে না। সব রাজ্যে ওর লোক আছে। ওরাই সব চালায়। এতে দেশের কুস্তির ক্ষতি হচ্ছে।’’

নতুন কমিটি যদি সাসপেন্ড থাকে তা হলে নিজের ফেলে দেওয়া পদ্মশ্রী আবার ফিরিয়ে নিতে রাজি বজরং। তিনি জানিয়েছেন, হতাশা ও রাগ থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বজরং বলেন, ‘‘আমরা কিছু করেছি বলেই সরকার আমাদের পুরস্কার দিয়েছে। আমরা দেশদ্রোহী নই। অবশ্যই পদক ফিরিয়ে নেব। দেশের জন্য নিজেদের ঘাম, রক্ত দিয়েছি। এই দেশের সম্মান আমাদের কাছে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’

বৃহস্পতিবার ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সঞ্জয়। তিনি যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত কুস্তিকর্তা ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তার পরেই প্রতিবাদে কুস্তি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সাক্ষী মালিক। সেই সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন অলিম্পিক্স পদকজয়ী কুস্তিগির। আর এক পদকজয়ী কুস্তিগির বজরং ‘পদ্মশ্রী’ ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে সংসদে যান তিনি। কিন্তু সেখানে যাওয়ার আগেই তাঁকে পুলিশ আটকায়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বজরং। পরে সংসদের সামনের রাস্তায় (কর্তব্যপথ) সেই পদক ফেলে দিয়ে আসেন।

বজরং পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আগেই বলেছিলাম, আমি আমার মেয়ে এবং বোনেদের বাঁচানোর জন্য লড়াই করছি। ওদের ন্যায়বিচার এখনও দিতে পারিনি। তাই আমার মনে হয় আর এই সম্মানের যোগ্য নই আমি। এখানে এসেছি নিজের সম্মান ফিরিয়ে দিতে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারিনি কারণ আগে থেকে কিছু জানিয়ে আসিনি। প্রধানমন্ত্রীর ব্যস্ত সূচি রয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি লিখেছি, তার উপরেই পদকটা রেখে দিচ্ছি। এই পদক আর বাড়ি নিয়ে যেতে চাই না।”

শুক্রবার বিকালে বজরং সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে জানান যে, তিনি পদ্মশ্রী ফিরিয়ে দিচ্ছেন। বজরং তাঁর বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখেন, “আমি আমার পদ্মশ্রী সম্মান ফিরিয়ে দিচ্ছি। আপনি নিশ্চয়ই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, তবুও আপনাকে লিখতে বাধ্য হচ্ছি। কারণ দেশের কুস্তিগিরদের সঙ্গে এমন অনেক কিছু ঘটছে যার প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি।”

বজরং তাঁর চিঠিতে এই বছর জানুয়ারি থেকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তাঁরা শুরু করেছিলেন, সেটার উল্লেখ করেন। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ছিল কুস্তিগিরদের। দিল্লির যন্তর মন্তরের সামনে ধর্না দিয়েছিলেন বজরংরা। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবাদ বন্ধ করেছিলাম, কারণ সরকার আমাদের কথা দিয়েছিল ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তিন মাস কেটে গেলেও এফআইআর হয়নি। আমরা আবার প্রতিবাদ শুরু করি। কিন্তু জানুয়ারিতে ১৯টি অভিযোগ থাকলেও তা কমে আসে সাতে। এটা প্রমাণ করে যে ব্রিজভূষণ কতটা প্রভাবশালী। ১২ জন কুস্তিগির প্রতিবাদ করা বন্ধ করে দেন।”

এ দিকে, রিও অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ জয়ী সাক্ষী বৃহস্পতিবার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমাকে আর কেউ কখনও কুস্তি লড়তে দেখবে না।” তাঁর পাশে ছিলেন বজরং পুনিয়া। তিনি বলেন, “আমরা আর কুস্তি লড়তে পারব কি না জানি না। রাজনীতি কী ভাবে কাজ করে জানি না।”

রবিবার সকালে কুস্তি সংস্থার নতুন কমিটি সাসপেন্ড করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নির্বাচিত হওয়ার পরেই জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-২০ স্তরের প্রতিযোগিতার কথা ঘোষণা করেন সঞ্জয়। তিনি জানান, চলতি মাসের শেষে উত্তরপ্রদেশের গোন্ডাতে সেই প্রতিযোগিতা হবে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রকের মনে হয়েছে, কোনও পরিকল্পনা না করেই সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার ফলে অংশ নিতে চাওয়া কুস্তিগিরেরা নিজেদের তৈরি করার পর্যাপ্ত সময় পাবেন না।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই আরও জানিয়েছে ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সংবিধান অনুযায়ী, যুব বা সিনিয়র স্তরের কোনও প্রতিযোগিতার আয়োজন করার আগে এগজ়িকিউটিভ কমিটির বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পরে প্রতিযোগিতার সূচি প্রকাশ করা হয়। প্রত্যেকটি প্রতিযোগিতার আগে কুস্তিগিরদের প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে হয়। সব থেকে কম ১৫ দিন সময় দিতে হয় প্রস্তুতির। সেই সব কোনও নিয়মের তোয়াক্কা করেননি সঞ্জয়। নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সেই কারণে নতুন কমিটি সাসপেন্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রীড়া মন্ত্রক। তবে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়নি। পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement