ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার অভিযোগ উঠল বজরং, সাক্ষীদের বিরুদ্ধে। ছবি: পিটিআই
ভারতের কুস্তি নিয়ে বিতর্ক শেষ হয়েও হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর আশ্বাসের পরে নয়াদিল্লির যন্তরমন্তর থেকে আপাতত বিক্ষোভ উঠিয়ে নিলেও কুস্তিগিররা এ বার নতুন সমস্যার সামনে পড়লেন। যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত সভাপতি ব্রিজভূষণ শরন সিংহের পাশেই দাঁড়িয়েছে জাতীয় কুস্তি সংস্থা। তারা শনিবার আট পাতার একটি চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া এবং যুবকল্যাণ মন্ত্রককে। সেখানে জানানো হয়েছে, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন কিছু কুস্তিগির।
জাতীয় কুস্তি সংস্থা তাদের চিঠিতে জানিয়েছে, ধর্নার মাধ্যমে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়ার মতো কুস্তিগিররা। ব্রিজভূষণকে কলঙ্কিত করাই তাঁদের উদ্দেশ্য। আপাতত সভাপতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় কুস্তি সংস্থার হয়ে চিঠি লেখা সদস্যেরা। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার যে অভিযোগ উঠেছে, তা-ও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার গভীর রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে অনুরাগ জানান, তিনি ৭ ঘণ্টা ধরে কুস্তিগিরদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তদন্ত করে যথাযথ পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। অনুরাগের আশ্বাস পাওয়ার পরেই নিজেদের বিক্ষোভ আপাতত তুলে নেন কুস্তিগিররা।
একই দিনে নয়াদিল্লিতে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছে ভারতীয় অলিম্পিক্স কমিটি। পিটি ঊষার নেতৃত্বাধীন কমিটি বৈঠকের পরে একটি সাত সদস্যের কমিটি তৈরি করেছে। সেই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন বক্সিংয়ে ছ’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মেরি কম, বাংলার প্রাক্তন অলিম্পিয়ান দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়, অলকানন্দা অশোক, যোগেশ্বর দত্ত, সহদেব যাদব প্রমুখ। কী ভাবে তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন, তা অবশ্য বিস্তারিত জানানো হয়নি।
এর মাঝেই বেসুরো গেয়েছেন প্রাক্তন অলিম্পিয়ান নরসিংহ যাদব। তাঁর প্রশ্ন, যদি ব্রিজভূষণ সত্যিই দোষী হতেন, তা হলে কেন শুধু একটি রাজ্যের কুস্তিগিররাই অভিযোগ করতেন? তিনি বলেছেন, ‘‘কেন শুধু একটা রাজ্যের কুস্তিগিররাই বিক্ষোভ করছিল। কেন বাকি রাজ্যের কুস্তিগিররা কোনও অভিযোগ করেনি। কারণ, ব্রিজভূষণের জন্য একটা রাজ্যের কুস্তিগিরদেরই সমস্যা হচ্ছে।’’
নিজের অভিযোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দিয়েছেন নরসিংহ। তিনি বলেছেন, ‘‘ব্রিজভূষণ সভাপতি হওয়ার পরে ভারতের কুস্তি আরও উন্নত হয়েছে। যারা বিক্ষোভ করছিল তারাই আগে ব্রিজভূষণের প্রশংসা করেছে। হরিয়ানার কুস্তিগিরদের জন্য উত্তরপ্রদেশ ও অন্য রাজ্যের কুস্তিগিরদের সমস্যা হয়। তারা ভাল খেললেও হরিয়ানার কুস্তিগিররাই সব আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যায়। তারা বেশি সুযোগ-সুবিধা পায়। এরই বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন ব্রিজভূষণ। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁকে।’’
হরিয়ানার কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বিশ্বকাপে একমাত্র পদকজয়ী কুস্তিগির সন্দীপ যাদবও। তিনি উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। সন্দীপের অভিযোগ, ‘‘আমরা অনেক পরিশ্রম করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় হরিয়ানার কুস্তিগিররাই সুযোগ পায়। আমি বিশ্বকাপে একমাত্র পদকজয়ী কুস্তিগির। তার পরেও আমি বলছি, কুস্তিতে অনেক বৈষম্য রয়েছে। ব্রিজভূষণ অন্য রাজ্যের কুস্তিগিরদেরও সুযোগ দিচ্ছিলেন। সেই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সবাই অভিযোগ করেছে।’’