স্বামী সত্যানন্দ সরস্বতী। ছবি: সংগৃহীত।
অপ্রত্যাশিত ভাবে সুযোগ এসে গিয়েছিল ভারতের বাস্কেটবল দলের সামনে। আমেরিকা এবং তার সহযোগী দেশগুলি বয়কট করায় মস্কো অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিল ভারত। সেই দলের সদস্য ছিলেন অমরনাথ নাগরাজন। দেশের হাতে গোনা কয়েক জন বাস্কেটবল অলিম্পিয়ানের অন্যতম নাগরাজনের বর্তমান পরিচয় স্বামী সত্যানন্দ সরস্বতী।
নাগরাজনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ২ এপ্রিল। তামিলনাড়ুর পেরিয়াকুলাম শহরের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। খেলাধুলায় আগ্রহ ছিল ছোট থেকেই। প্রথমে অ্যাথলেটিক্স করতেন। পরে শুরু করেন হকি। কয়েক বছর হকি খেলার পর নাগরাজন বাস্কেটবলের প্রেমে পড়ে যান। আর পরিবর্তন করেননি। বাস্কেটবলকে সঙ্গী করে এগিয়েছিলেন খেলোয়াড়জীবন। জেলা, রাজ্যস্তর অতিক্রম করে জায়গা করে নেন জাতীয় দলেও। নিজের সময় দেশের অন্যতম সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন নাগরাজন। শুধু তাই নয়, দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড় হিসাবেও বিবেচিত হয় নাগরাজনের নাম।
খেলার সূত্রে চাকরি পেয়েছিলেন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। অবসর নিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার পদে কাজ করে। অবসরজীবনে ছন্দপতন হয় ২০১৯ সালে। নাগরাজনের স্ত্রী প্রয়াত হন। তার পর তাঁর জীবনে বড় পরিবর্তন আসে। একাকিত্ব থেকে মুক্তি খুঁজতে ঈশ্বরের দ্বারস্থ হন নাগরাজন। শুরু করেন সাধুসঙ্গ। ক্রমে আধ্যাত্মিক জীবন বেছে নেন নাগরাজন। সন্ন্যাস গ্রহণ করার পর তিনিই এখন সত্যানন্দ।
১৯৮০ থেকে ২০২৪। ৪৪ বছরে ভারতীয় বাস্কেটবল তেমন এগোয়নি। অলিম্পিক্স খেলার সুযোগও আর হয়নি কখনও। এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রমতালিকায় ভারতের পুরুষ দলের স্থান ৮২। অলিম্পিক্স তো দূর, ছ’বার এশিয়ান গেমস এবং ২৬ বার এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেও কোনও পদক নেই ভারতের বাস্কেটবল দলের।
সংসার ত্যাগী সত্যানন্দ নিয়মিত বাস্কেটবলের খবর রাখেন না। এক দম রাখেন না তাও নয়। ঈশ্বর আরাধনার মতো খেলাধুলাও তাঁর কাছে সাধনা। বছরের পর বছর কেটে যায়। অলিম্পিক্সের পর অলিম্পিক্স চলে যায়। অথচ টিকিট জোটে না ভারতীয় দলের। সত্যানন্দ মুখ খুলতে চান না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগও নেই। তবে দ্বিতীয় কোনও ভারতীয় বাস্কেটবল দল অলিম্পিক্সে যেতে না পারার কষ্ট তাঁর রয়েছে। প্যারিসও দুঃখ মুছতে পারছে না। এই সত্যে আনন্দ নেই সত্যানন্দের!