Paris Olympics 2024

পদক না পেলেও যেন বিনেশকে না ভুলি, অনুরোধ নীরজের

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আবেদন জানিয়েছেন বিনেশ যে, তাঁর রুপোর পদক প্রাপ্য। সেই শুনানি শেষ হতে পারে রবিবার। নীরজের আবেদন অন্য। যদি আদালতের রায়ে বিনেশ পদক না-ও পান, যেন ভুলে না যাওয়া হয় তাঁকে।

Advertisement
সুমিত ঘোষ
প্যারিস শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২৪ ১০:১৯
নীরজ চোপড়া।

নীরজ চোপড়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

বিনেশ ফোগত পদক পান বা না পান, তাঁর লড়াইকে যেন ভুলে না যায় দেশবাসী। প্যারিস অলিম্পিক্স শেষ হওয়ার লগ্নে দাঁড়িয়ে এই আর্জি জানালেন এমন দু’জন, যাঁরা ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে অন্যতম সেরা মহাতারকা। নীরজ চোপড়া এবং পি আর সৃজেশ। দু’জনেই প্যারিসে পদকের স্বাদ পেয়েছে। সৃজেশ তাঁর বিদায়ী প্রতিযোগিতায় দলগত ব্রোঞ্জ জিতেছেন। নীরজ টোকিয়োর মতো সোনা না জিততে পারলেও রুপো নিয়ে ফিরছেন।

Advertisement

এ দিন প্যারিসে রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশনের তৈরি ইন্ডিয়া হাউজ়ে এসে নীরজ বলে গেলেন, ‘‘বিনেশের পদক হলে তো সকলেই খুশি হবে, বলার অপেক্ষা রাখে না। যদি না পায় তা হলেও সকলের মনে রাখা উচিত, হঠাৎ করে কোন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য নিশ্চিত পদক হাতছাড়া হল।’’ পদক জেতা আর না জেতা যে সম্পূর্ণ দুটো পৃথিবী তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই তাঁর। মনে গেঁথে থাকার মতো একটা কথা বলে গেলেন নীরজ, ‘‘আমার মনে হয় গলায় মেডেল থাকা আর না থাকার মধ্যে তফাত আছে। লোকে কিছু দিন মনে রাখে। সেই সময়কার মতো বলে ঠিকই যে, তুমি আমাদের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু পোডিয়ামে না উঠলে দ্রুত ভুলেও যায়। আমার শুধু এটাই ভয় হচ্ছে। লোকে যদি মনে রাখে, তা হলে বিনেশ এই পদকটা পেল কি পেল না, তা নিয়ে কিছু এসে-যাবে না। কিন্তু যদি না পায়, ভুলে যাবে না তো?’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রিলায়্যান্স সংস্থার কর্ত্রী নীতা অম্বানী।

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে আবেদন জানিয়েছেন বিনেশ যে, তাঁর রুপোর পদক প্রাপ্য। সেই শুনানি শেষ হতে পারে রবিবার। নীরজের আবেদন অন্য। যদি আদালতের রায়ে বিনেশ পদক না-ও পান, যেন ভুলে না যাওয়া হয় তাঁকে। ‘‘সকলের কাছে আমার এটাই প্রার্থনা যে, বিনেশ যা করেছে, সেটা যেন দেশের মানুষ ভুলে না যায়,’’ যখন বলছেন তিনি, মনে হচ্ছিল সব কিছুঠিকঠাক চললে এই দিনটাই আরও কত আলো ঝলমলে হতে পারত। বিনেশ ফাইনাল জিতলে সোনা আসত। হারলেও গলায় রুপো থাকত। পাশাপাশি ইন্ডিয়া হাউজ়ের মঞ্চে বসে থাকতেন নীরজ, বিনেশ ও সৃজেশ। ভারতীয় অলিম্পিক্স অভিযানের তিন সেরা মুখ। তা হলে ভারতও পদক তালিকায় আরও উপরে উঠতে পারত অন্তত দু’টো রুপো পেয়ে। এ দিন যাঁরা জয়ধ্বনি দিচ্ছিলেন দেশের নামে, তাঁদের গলার জোর আরও বাড়ত। দেশের নানা প্রদেশের খাবার বিক্রি হচ্ছে সেখানে। ছোলে বাটুরে, ইডলি-ধোসা, বাটার চিকেন। সেগুলো আরও সুস্বাদু মনে হতে পারত।

তখন গেমসের ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি পদক নিয়েও শেষ করা যেত। লন্ডনে ভারত জিতেছিল ছ’টি পদক। টোকিয়োয় সাতটি। প্যারিসে এখনও পর্যন্ত পদকের সংখ্যা ছয়। রুপো একটি, ব্রোঞ্জ পাঁচটি। শুরু থেকে যে দুই অঙ্কের পদক সংখ্যার আশা করা হয়েছিল, তা এখনও দূরের গ্রহ। টোকিয়োয় নীরজ সোনা জিতেছিলেন, প্যারিসে সেই সোনাও নিয়েগিয়েছে পাকিস্তান।

পদক খরার মাঝে বিনেশকে নিয়ে বিলাপ আরও বাড়বে, তাতে আশ্চর্যের কী। তবে যেটা চোখে পড়ার মতো, তা হল মাঠের বাইরে বিনেশের যে বৃহত্তর লড়াই সেটা এমন মঞ্চে স্বীকৃতি পাচ্ছে। সৃজেশ যেমন বললেন, ‘‘গত এক বছর ওর সঙ্গে যা হয়েছে, তার পরেও কী অসামান্য লড়াই করেছে বিনেশ। একই দিনে তিন জনকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছে।’’ যন্তর মন্তরের সামনে কুস্তির প্রভাবশালী কর্তা ব্রিজভূষণের অপসারণের দাবিতে টানা চল্লিশ দিন ধরে ধর্নায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিনেশ। সেই লড়াই কোথাও যেন অদৃশ্য পদক জিতে নিচ্ছে। সৃজেশ আরও বললেন, ‘‘সকলে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল বিনেশের খবর শুনে। ফাইনালে পৌঁছনোর পরের দিন যদি কাউকে বলা হয়, তুমি পদক পাবে না, কেমন লাগতে পারে? আমি প্রার্থনা করি যেন ঈশ্বর ওঁকে এই পদকটা দেন।’’ এর পরে কি ভারতীয় দলের কোচ হচ্ছেন? সদ্য অবসৃত ভারতীয় হকির প্রাচীর বললেন, কোচিংয়ে আসতে পারেন। দেশ থেকে নাকি ইতিমধ্যেই প্রস্তাব এসেছে। বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। বারবার প্রশংসা করলেন সতীর্থদের, ‘‘প্রথম ম্যাচ থেকে আমার জন্য খেলে এসেছে সবাই। গোলকিপিং কঠিন কাজ। সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পদক নিয়ে শেষ করতে পেরেছি বলেআমি খুশি।’’

নীরজকে ফের জিজ্ঞেস করা হল আর্শাদ নাদিমের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে। ইংরেজিতে কথা বলতে গিয়ে অসুবিধা হতে পারে তাঁর। কিন্তু হিন্দিতে এত ভাল কথা বলেন যে, প্রত্যেকটা উক্তি বাঁধিয়ে রাখার মতো। এ দিন যেমন বললেন, ‘‘সীমান্তে কী হচ্ছে, সেটা দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়। খেলার মঞ্চ একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করতে শেখায়। মাধেমধ্যে কিছু ঘটনা ঘটে, তা থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। কিন্তু আমি সব সময় চাই খেলার মঞ্চে শান্তি থাকুক।’’ ভারতীয় অলিম্পিক্সের মশাল জ্বালিয়ে রেখেছে হরিয়ানা। সেখান থেকেই বেশির ভাগ পদকজয়ী বেরোচ্ছে। রহস্য কী? নীরজ বললেন, ‘‘হরিয়ানায় খেলার একটা অন্য রকম সংস্কৃতি আছে। অনেক বাবা-মা উৎসাহ দেয় খেলায় যাওয়ার জন্য। সেটাই তফাত গড়ে দিচ্ছে।’’ ২০২৮ এ কি সোনা ফেরানোর চেষ্টা করবেন? তাঁর জবাব, ‘‘চেষ্টা তো এ বারও করেছিলাম। কিন্তু যার দিন থাকে সে-ই নিয়ে যায়। টোকিয়োয় আমার দিন ছিল, এখানে আর্শাদের।’’ জ্যাভলিন ছোড়ার কোণ ঠিক করতে হবে, জানালেন। থ্রোয়ের উচ্চতাও ঠিক ছিল না। রানওয়ের কথা সে দিনই বলেছিলেন, আজ আবার শোনা গেল। ত্রিপুরার জিমন্যাস্ট প্রোদুনোভা ভল্ট দিয়ে সারা দেশের মন জিতে নেওয়া দীপা কর্মকারের নাম করে বললেন, ‘‘দীপা ভাল করেছিলেন। জ্যাভলিনে এশিয়ান গেমসে আমরা ভাল হয়েছে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের তিন জন প্রথম ছয়ে ছিল। শুধু তারকা খুঁজলে হবে না, প্রতিযোগিতা বাড়তে হবে। তবেই এগোব আমরা।’’ ২০৩৬-এর অলিম্পিক্স ভারতে হবে। দারুণ উন্নতি কি দেখতে পাওয়া যাবে? নীরজের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মানুষ আমাদের খেলা লাইভ দেখছে। ভোরে উঠে দেখছে, রাত জেগে দেখছে। আশা করব, বাবা-মায়েরা অদূর ভবিষ্যতে ছেলেমেয়েদের অলিম্পিক্সের খেলাধুলোয় যাওয়ার জন্য উৎসাহ দেবে। তখনই কিন্তু আমাদের দেশের অলিম্পিক্সে উন্নতিরসম্ভাবনা বাড়বে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement