মিরা আন্দ্রিভা। ছবি: রয়টার্স
এ বারের উইম্বলডনে এখনও পর্যন্ত বড় কোনও অঘটন হয়নি। মহিলা বা পুরুষ, দু’টি বিভাগেই প্রথম দিকে থাকা খেলোয়াড়েরা পরের রাউন্ডে উঠেছেন। দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরুর আগে বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই প্রতিযোগিতায় টিকে। তার মাঝে আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছেন মিরা আন্দ্রিভা। রাশিয়ার এই খেলোয়াড় এ বার লড়ছেন কোনও পতাকা ছাড়াই। কিন্তু স্বদেশি আনাস্তাসিয়া পোটাপোভাকে হারিয়ে চতুর্থ রাউন্ডে উঠে গিয়েছেন। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, মিরার বয়স মাত্র ১৬। দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠেছেন তিনি।
এ বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে জুনিয়র বিভাগে খেলেছেন তিনি। ফরাসি ওপেনে প্রথম বার গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেলেন। শুরু থেকেই প্রতিভাবান এবং উঠতি তারকার হওয়ার আশা জাগিয়েছেন। রাশিয়া থেকে নিয়মিত ভাবেই প্রতিভাবান খেলোয়াড়েরা উঠে আসেন। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন মিরা। তিনি ফ্রান্সের যে অ্যাকাডেমিতে এখন টেনিস শেখেন, সেই অ্যাকাডেমিতেই অনুশীলন করেন ডানিল মেদভেদেভ। বিশ্বের তিন নম্বর পুরুষ খেলোয়াড়ের থেকে সব সময়েই কোনও না কোনও পরামর্শ পান মিরা।
রাশিয়ার এই খেলোয়াড়ের জন্ম ২০০৭-এর ২৯ এপ্রিল। জুনিয়র পর্যায়ের টেনিস খেলতে খেলতে উঠে এসেছেন তিনি। ২০২২-এর জেসমিন ওপেনে প্রথম বার সিনিয়র পর্যায়ে খেলা। ওয়াইল্ড কার্ড হিসাবে সুযোগ পেলেও বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারেননি। ২০২৩-এর জুনিয়র অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ডাবলস সতীর্থ আলিনা কর্নিভার কাছে হেরে যান তিনি। তার পরেই ওয়াইল্ড কার্ড হিসাবে মাদ্রিদ ওপেনে খেলার সুযোগ পান। তখনও তাঁর বয়স ১৫। বিশ্বের ১৯৪তম খেলোয়াড় ছিলেন।
সেই প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দেন লেইলা ফের্নান্দেসকে। সেই সঙ্গেই ডব্লিউটিএ ১০০০ মানের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে কোনও ম্যাচ জেতেন। এর আগে কোকো গফ এবং সিসি বেলিস এই কাজ করে দেখিয়েছিলেন। পাশাপাশি, ১৫ বছর বয়সী দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ৫০-এ থাকা কোনও খেলোয়াড়কে হারান। বেলিস আগে এই কাজ করেছিলেন ২০১৫ সালে। এর পর ১৩তম বাছাই বিয়াত্রিজ হাদ্দাদ মাইয়াকে হারান মিরা। প্রথম ২০-তে থাকা খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে তাঁর প্রথম জয়। তৃতীয় রাউন্ডে ওঠেন মিরা।
"I was out of breath almost every point"
— Wimbledon (@Wimbledon) July 9, 2023
Mirra Andreeva didn't have the energy to show emotion on court 😂#Wimbledon pic.twitter.com/ZjgoAGBhIT
১৬তম জন্মদিনে পেশাদার টেনিসজীবনের ১৬তম জয় পান মিরা। প্রথম ২০-তে থাকা আর এক খেলোয়াড় মাগডা লিনেটকে হারিয়ে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন। এর পর এরিনা সাবালেঙ্কার কাছে হেরে যান। এক লাফে ৫০ ধাপ এগিয়ে প্রথম দেড়শোয় চলে আসেন।
ফরাসি ওপেনের মূল পর্বে জায়গা পান মিরা। প্রথম রাউন্ডে অ্যালিসন রিস্কে অমৃতরাজকে হারিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যামের প্রথম জয়। এর পর ওয়াইল্ড কার্ড পাওয়া ডায়ান প্যারিকে হারান। ২০০৫- ১৫ বছরের সেসিল কারাতানচেভা প্রথম খেলোয়াড় হিসাবে আবির্ভাবেই কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের তৃতীয় রাউন্ডে উঠেছিলেন। মিরা দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবে ওঠেন। তৃতীয় রাউন্ডে গফের কাছে হেরে যান মিরা। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার সুবাদে র্যাঙ্কিংয়ে ৪০ ধাপ এগিয়ে ১০১ নম্বরে চলে আসেন।
উইম্বলডনের প্রথম রাউন্ডে চিনের ওয়াং শিউকে হারিয়েছেন মিরা। দ্বিতীয় রাউন্ডে দশম বাছাই বার্বোরা ক্রেজিকোভার বিরুদ্ধে ওয়াকওভার পান। তৃতীয় রাউন্ডে হারিয়ে দেন পোটাপোভাকে। চতুর্থ রাউন্ডে ম্যাডিসন কিসের বিরুদ্ধে খেলবেন তিনি। প্রথম একশোয় চলে আসা নিশ্চিত।
বয়স কম হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই মিরার চালচলনে একটু জড়তা রয়েছে। এখনও তিনি উঠতি তারকা তকমার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। উইম্বলডনে কিছু দিন আগেই দেখা হয়েছিল আদর্শ টেনিস খেলোয়াড় অ্যান্ডি মারের সঙ্গে। আবেগের বশে কথাই বলতে পারেননি ভাল করে। মিরা বলেছেন, “খুব লজ্জা লাগছিল। ওঁকে প্রথম বার দেখার পর খুব চেষ্টা করেছিলাম কথা বলা। কিন্তু লজ্জা লাগছিল বলে পারিনি।” মিরার মতে, গ্র্যান্ড স্ল্যামের মতো প্রতিযোগিতায় খেলতে পারলে নিজের আদর্শ খেলোয়াড়দের আরও বেশি কাছ থেকে দেখা যায়। তাই প্রতিটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে চান।
মিরার বোন এরিকাও টেনিস খেলোয়াড়। দু’জনেই আগে রাশিয়ার সোচিতে অনুশীলন করতেন। এখন ফ্রান্সের অ্যাকাডেমিতে জাঁ রেনে লিসনার্দ এবং জাঁ ক্রিস্টোফ ফরেলের অধীনে অনুশীলন করেন। ১৬ বছর হলেও, আগামী দিনের তারকা হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা রয়েছে মিরার খেলায়।