IPL 2023

১৬, ১৮, ২০! তিন ওভারে ১২ রান, কেকেআর স্পিনারের সাফল্যের রহস্য ফাঁস করল আনন্দবাজার অনলাইন

ডেথ ওভার হোক বা পাওয়ার প্লে, কলকাতার অধিনায়কের ভরসার জায়গা হয়ে উঠছেন বরুণ। গত বার দল থেকে বাদ পড়া স্পিনার কী ভাবে বদলে গেলেন এই বছর?

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ ১৩:৫৯
Varun Chakravarthy

ইনিংসের শেষের দিকে বল করা বরুণের কাছে নতুন নয়। —ফাইল চিত্র

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শেষ ওভারে স্পিনার বল করানোর সাহস দেখিয়েছিলেন নীতীশ রানা। কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়কের সেই ভরসার দাম রাখেন বরুণ চক্রবর্তী। হায়দরাবাদে হালকা বৃষ্টি পড়ছিল ম্যাচের শেষ দিকে। ভেজা বলটা শুকনো করার জন্য নীতীশ বার বার তোয়েলেতে মুছতে থাকেন। বরুণও তেমন ভাবেই সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জয়ের আশা মুছে দেন।

ম্যাচ শেষে নীতীশ বলেছিলেন, “দলের যে স্পিনার সে দিন ভাল বল করছে, আমি তাঁর উপরেই কঠিন পরিস্থিতিতে ভরসা করি। সেটা সুনীল নারাইন হতে পারে, বরুণ চক্রবর্তী হতে পারে বা সুযশ শর্মাও হতে পারে।” পরিসংখ্যান বলছে এ বারের আইপিএলে নীতীশ কঠিন সময়ে বার বার বরুণের শরণাপন্নই হয়েছেন। পাওয়ার প্লে হোক বা ডেথ ওভার, সব জায়গাতেই বরুণের হাতে বল তুলে দিয়েছেন নীতীশ। হতাশ করেননি বরুণও। পাওয়ার প্লে-তে ৯ ওভার বল করে তাঁর ইকোনমি ৮.০০। ডেথ ওভারে ৮.৪ ওভার বল করে বরুণের ইকোনমি ৮.৭৬। তিনটি উইকেটও আছে তাঁর ডেথ ওভারে।

Advertisement

ইনিংসের শেষের দিকে বল করা বরুণের কাছে নতুন নয়। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি, তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে ডেথ ওভারে নিয়মিত বল করতে দেখা যেত বরুণকে। সেটা আইপিএলেও করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার যদিও বল পিছলে যাচ্ছিল হাত থেকে। সেই জন্যই কাজটা কঠিন ছিল বরুণের জন্য। নীতীশ বার বার বল শুকনো করার চেষ্টা করছিলেন। তার উপর আইপিএলে এর আগে কোনও স্পিনার শেষ ওভারে এত কম রান হাতে নিয়ে ম্যাচ জেতাতে পারেননি। ২০১৯ সালে নাইট রাইডার্সের কুলদীপ যাদব দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে ছ’রান দিয়ে ম্যাচ সুপার ওভার পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা ছাড়া স্পিনারদের শেষ ওভারে তেমন সাফল্য নেই। ২০১৭ সালে দিল্লি বনাম বেঙ্গালুরু ম্যাচে ১৩ রান বাঁচাতে পারেননি পবন নেগি। অর্থাৎ, বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি এবং ইতিহাস বরুণের অনুকূলে ছিল না।

এক সময় বরুণকে বিস্ময় স্পিনার বলা হত। ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গত বারের আইপিএলে এমনই বোলিং করেন যে প্রতিযোগিতার মাঝপথে দল থেকে বাদ পড়েন। সেই বরুণ এ বারের আইপিএলে অনেক বেশি কার্যকর। ১০ ম্যাচে ইতিমধ্যেই ১৪টি উইকেট নিয়েছেন। ইকোনমি ৮-এর নীচে। গত বার যে বোলার ১১ ম্যাচে মাত্র ৬ উইকেট পেয়েছিলেন, তিনিই এ বার এক বদলে যাওয়া ক্রিকেটার। কী ভাবে বদলে গেলেন বরুণ?

বরুণের গত বছরের সঙ্গে এ বারের তফাতটা মানসিকতার বলে মনে করছেন বাংলার প্রাক্তন স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ী। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “গত বারের থেকে এ বারে বরুণের মানসিকতায় অনেকটা বদল দেখা যাচ্ছে। বলে গতি ওর ছিল। সেটা আরও বাড়িয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটারকে গতিতে বল করলে ফ্লাইট বুঝতে অসুবিধা হয়। সেটাই করছে বরুণ।”

বৃহস্পতিবার ১২তম ওভারে বল করতে এসে ১২ রান দেন বরুণ। পরের তিন ওভারে তিনি দেন ১২ রান। এর মধ্যে চার রান লেগ বাই হিসাবে পায় হায়দরাবাদ। অর্থাৎ বরুণ নিজের শেষ তিন ওভারে দেন আট রান। চার ওভারে ২০ রান দিয়ে একটি উইকেট বরুণের। ম্যাচের সেরাও তিনি। বরুণ বলেন, “আমার হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে ২০০ হয়ে গিয়েছিল মনে হয়। চেষ্টা করছিলাম শেষ ওভারে কী ভাবে লেগ সাইডে বল করে মাঠের বড় দিকটাতে মারতে বাধ্য করা যায়। মারতে হলে ওই দিক দিয়েই বাউন্ডারি মারতে হবে ওদের। সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছিলাম আমি।”

KKR

গত বারের থেকে বরুণ বদলে গেলেন কী ভাবে? —ফাইল চিত্র

শেষ ওভারে ব্যাট করছিলেন আব্দুল সামাদ এবং ভুবনেশ্বর কুমার। তাঁরা দু’জনেই ডানহাতি ব্যাটার। ডিপ মিডউইকেট বাউন্ডারি তাদের জন্য ছিল ৭৫ মিটার আর উল্টো দিকটা ছিল ৭১ মিটার। বরুণ রাউন্ড দ্য উইকেট বল করতে এসে পা লক্ষ্য করে বল করে যান। প্রথম দু’টি বলে এক রান করে হয়। তৃতীয় বলটি বরুণ গুড লেংথে না রেখে একটি পিছনে ফেলেছিলেন। সামাদ পুল করতে যান মিডউইকেটের উপর দিয়ে। কিন্তু সে দিকটা ছিল চার মিটার বেশি বড়। বাউন্ডারিতে ক্যাচ ধরেন অনুকূল রায়। সামাদ আউট হলে নামেন মায়াঙ্ক মারকান্ডে। তিনি নামার সময় কোচ ব্রায়ান লারা কিছু একটা বলেন তাঁকে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কাজে লাগেনি। কারণ ওভারের শেষ তিন বলে মাত্র এক রান দেন বরুণ। ম্যাচ জিতে নেয় কলকাতা।

গত বারের থেকে বরুণ বদলে গেলেন কী ভাবে? কলকাতার ‘বিস্ময়’ স্পিনার বলেন, “গত বছর আমি প্রতি ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার গতিতে বল করছিলাম। আমার গতি কোনও ভাবে কমে গিয়েছিল। তাই অনুশীলনে অনেক কিছু করতে থাকি। একটা সময় বুঝতে পারি বল কম ঘুরছে তাই গতি কমেছে। তাই বল ঘোরানোর দিকে মন দিই। তাতেই গতি বেড়ে যায়।” বৃহস্পতিবার বরুণের শেষ ওভারে করা ছ’টি বলের গতি ছিল ১০৮.৯, ৮৮.৬, ৯৭.২, ৯৩.৩, ৯৬.৩ এবং ১০৭.৮ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। শেষ বলটি ব্যাটার ভুবনেশ্বর কুমার যেমন ফস্কান, তেমনই উইকেটরক্ষক রহমানুল্লা গুরবাজও ধরতে পারেননি। তাঁর কোমরে গিয়ে লাগে বলটি।

আরও পড়ুন
Advertisement