Mitchell Starc

৪৮ বলে কেকেআরের খসল ৩ কোটির বেশি, পয়সা উসুল হল না! স্টার্ককে নেওয়া কি ভুল হল?

অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসারকে নেওয়ার জন্য এত বড় অঙ্ক খরচ করা ভুল হল কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কেকেআর খুশি ছিল দলে মিচেল স্টার্কের মতো এক জন পেসারকে পেয়ে। কিন্তু প্রথম দু’ম্যাচের পর কলকাতার কর্তারাও হয়তো ভাববেন আদৌ ওই টাকা খরচ করা উচিত হয়েছে কি না।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৯
Mitchell Starc

মিচেল স্টার্ক। —ফাইল চিত্র।

দু’ম্যাচ। আট ওভার। ৪৮টি বল। খরচ হয়ে গেল ৩ কোটি ৫৩ লক্ষ ৫৭ হাজার ১৩৬ টাকা। বদলে একটি উইকেটও এল না। ১০০ রান যদিও দিয়ে দিয়েছেন ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার মিচেল স্টার্ক।

Advertisement

নিলামে চমকে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। স্টার্কের জন্য খরচ করেছিল ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। আইপিএলের ইতিহাসে এত টাকা দিয়ে কখনও কোনও ক্রিকেটারকে কেনা হয়নি। এক দিনের বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসারকে নেওয়ার জন্য এত বড় অঙ্ক খরচ করা ভুল হল কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কেকেআর খুশি ছিল দলে স্টার্কের মতো এক জন পেসারকে পেয়ে। কিন্তু প্রথম দু’ম্যাচের পর কলকাতার কর্তারাও হয়তো ভাববেন আদৌ ওই টাকা খরচ করা উচিত হয়েছে কি না।

নিলামে স্টার্ককে নেওয়ার জন্য প্রথম দিকে দিল্লি এবং মুম্বইয়ের লড়াইয়ের পর গুজরাত এবং কলকাতা যোগ দেয়। শেষ পর্যন্ত শাহরুখ খানের দলে নিয়ে নেয় স্টার্ককে। যদি আইপিএলে প্রতিটি ম্যাচে চার ওভার করেই বল করেন স্টার্ক, তা হলে বল পিছু ৭ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬০৭ টাকা করে পাবেন তিনি। আইপিএলে এখনও পর্যন্ত দু’টি ম্যাচে চার ওভার করে বল করেছেন স্টার্ক। অর্থাৎ ৪৮টি বল করেছেন তিনি। রান দিয়েছেন ১০০। উইকেট একটিও পাননি। স্টার্কের মতো বোলারকে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটারেরাও বাউন্ডারির বাইরে ফেলেছেন। যা অবাক করে দিয়েছে সকলকে।

এমন যে হতে পারে সেই আশঙ্কা নিলামের পরেই করেছিলেন সুনীল গাওস্কর। তিনি বলেছিলেন, “খোলাখুলিই বলছি, প্রয়োজনের বেশি খরচ করা হয়েছে। আমার মনে হয় না কেউ এত টাকা পাওয়ার যোগ্য। কেকেআর যদি ১৪টার মধ্যে চারটে ম্যাচ জেতে, তা হলে স্টার্কের জন্য এত টাকা খরচ করার অর্থ কী? ও যদি প্রতিটা ম্যাচেই দারুণ কিছু করতে পারে, তা হলে একটা যুক্তি থাকতে পারে।” তিনি আরও বলেছেন, ‘‘অন্তত চারটি ম্যাচে কি স্টার্ক ম্যাচ জেতানোর মতো বল করতে পারবে? বিশেষ করে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, চেন্নাই সুপার কিংস বা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের মতো দলগুলোর বিরুদ্ধে। এই তিনটে দলের ব্যাটিং লাইন আপ সব থেকে ভাল। এই দলগুলোর বিরুদ্ধে বল হাতে ম্যাচ জেতাতে পারলে এত টাকা খরচের একটা অর্থ হবে।’’ গাওস্করের বক্তব্য, ক্রিকেট দলগত খেলা। এক জনের উপর নির্ভর করে জেতা যায় না। তা হলে কেন এক জনের জন্য বিপুল টাকা খরচ করা হবে। এই ধরনের খরচ তাঁর কাছে সম্পূর্ণ যুক্তিহীন।

একই মত বাংলার এক প্রাক্তন পেসারের। তিনি বললেন, “যে অর্থ দিয়ে স্টার্ককে কেনা হয়েছে, সেই টাকায় অন্তত দু’তিন জন ভারতীয় পেসারকে কিনতে পারত কেকেআর। তাতে এক জন ব্যর্থ হলে অন্য জনকে খেলাতে পারত। এখন তো স্টার্ককে বসাতেও পারবে না, আর বসালেও নতুন কাউকে পাবে না। আমি মনে করি না নিলামে এত টাকা দিয়ে স্টার্ককে কেনার কোনও যুক্তি ছিল বলে।”

বিরাট টাকা নিয়ে আইপিএলে খেলতে আসার ফলে কি স্টার্কের উপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে? বাংলার ওই প্রাক্তন পেসার বললেন, “টাকার কোনও চাপ আছে বলে আমার মনে হয় না। স্টার্ক তো আর বলেনি ওকে কত টাকা দিতে হবে। কোনও দল যদি কেনে তাতে ওর কিছু করার নেই। তাই টাকার চাপ ওর উপর আছে বলে মনে হয় না।” তা হলে উইকেট কেন পাচ্ছেন না স্টার্ক? নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বাংলার ওই প্রাক্তন পেসার বললেন, “স্টার্ক খারাপ বল করছে এমন নয়। কিন্তু ও এখন সকলের কাছেই পরিচিত। তাই খেলতে অসুবিধা হচ্ছে না। ব্যাটারদের কৃতিত্ব দিতে হবে রান করার ক্ষেত্রে। স্টার্ককে খেলার জন্য তৈরি হয়েই মাঠে নামছে তারা। ফলে সুবিধা করতে পারছে না ও। আশা করি আগামী দিনে স্টার্কও নতুন অস্ত্র নিয়ে নামবে। উইকেট পাবে।”

আইপিএলে স্টার্ককে ২৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা দিয়ে নেওয়ার পর কটাক্ষ করেছিলেন হরভজন সিংহও। ভারতের প্রাক্তন স্পিনার একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। সেখানে স্টার্কের মুখ দিয়ে বলানো হয়েছিল, “ভারতে এসে দু’মাস আইপিএল খেলে স্রেফ ২৫-৩০ কোটি কামাও। কোনও কাজবাজ নেই। শুধু বিজ্ঞাপনে এসে হিন্দিতে ডায়লগ বলো। সমাজমাধ্যমে দলের জন্য রিল্ বানাও। এ ছাড়া অল্পস্বল্প জোরে বোলিং করো।” হরভজন সেই ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছিলেন, “স্রেফ হাসির জন্য।”

কেকেআর পর পর দু’টি ম্যাচ জিতলেও স্টার্কের বোলিং অবশ্যই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে কেকেআরের প্রথম ম্যাচে স্টার্ক ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ৫৪ রান। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শুক্রবার তিনি দিয়েছেন ৪৬ রান। সেই ম্যাচেও কোনও উইকেট পাননি। ব্যাটারদের দাপটে কেকেআর ম্যাচ জিতে নিচ্ছে। তাই স্টার্কের ব্যর্থতা ঢেকে যাচ্ছে। কোনও দিন বোলারদের ম্যাচ জেতাতে হলে স্টার্কের এই চার ওভারে ৫০ রান দিয়ে দেওয়াটাই চিন্তার কারণ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন
Advertisement