ফরাসি ওপেনের সেমিফাইনালে নাদালের মুখোমুখি জেরেভ ফাইল চিত্র
‘‘ওদের আগেও হারিয়েছি’’।
কে বলছেন? আলেকজান্ডার জেরেভ।
কখন বলছেন? ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে কার্লোস আলকারাজকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠার পর।
কাদের নিয়ে বলছেন? রাফায়েল নাদাল ও নোভাক জোকোভিচ। তখনও তিনি জানতেন না যে ৪ ঘণ্টা ১২ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস কোয়ার্টার ফাইনালে নোভাককে হারিয়ে সেমিফাইনালে জেরেভের প্রতিপক্ষ হবেন নাদাল।
প্রতিপক্ষ যেই হোন না কেন, জার্মানির ৬ ফুট ৬ ইঞ্চির টেনিস তারকার কথায় ভয়ের লেশ মাত্র নেই। সম্মান রয়েছে। জানেন, নাদাল ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। জানেন, নাদালকে কোনও দিন গ্র্যান্ড স্ল্যামে হারাতে পারেননি। তবে পারবেন, সেই প্রত্যয় রয়েছে পুরুষদের তৃতীয় বাছাই জেরেভের।
তখন সবে ৬-৪, ৬-৪, ৪-৬, ৭-৬ (৯-৭) গেমে পুরুষদের ষষ্ঠ বাছাই স্পেনের আলকারাজকে হারিয়েছেন তিনি। ৩ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ধরে চলা ম্যাচে আলকারাজের তারুণ্যকে রুখেছেন নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে। চার সেটে ম্যাচ জেতায় স্বস্তিতে জেরেভ। প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘‘আমি চাইনি ম্যাচটা পাঁচ সেটে যাক। তা হলে আলকারাজকে হারানো কঠিন হত। কারণ ওর বয়স ১৯। আমার কিন্তু ২৫।’’
তখনই তাঁর দিকে প্রশ্ন ধেয়ে আসে, সেমিফাইনালে নাদাল বা জোকোভিচ, যেই তাঁর প্রতিপক্ষ হন না কেন, তাঁরা তো বয়সে জেরেভের থেকে অনেকটা বড়। তা হলে কি অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন জার্মান টেনিস খেলোয়াড়? জবাবে জেরেভ বলেন, ‘‘ওরা কেন বিশ্বের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড়, তার একটা কারণ রয়েছে। নাদাল ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। নোভাকের কাছে রয়েছে ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। গত ১৫-২০ বছর ধরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসে ওরা সফল।’’ পর ক্ষণেই আবার জেরেভের গলায় প্রত্যয়। তিনি বলেন, ‘‘হতে পারে ওদের আমি গ্র্যান্ড স্ল্যামে হারাতে পারিনি। কিন্তু হারানোর খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলাম। অন্য প্রতিযোগিতায় ওদের হারিয়েছি। ওদের বিরুদ্ধে খেলা নিঃসন্দেহে কঠিন। আশা করছি কোয়ার্টার ফাইনালে যে খেলা খেললাম সেটাই শুক্রবার খেলতে পারব।’’
পরিসংখ্যান বলছে, নাদালের বিরুদ্ধে ন’বার মুখোমুখি হয়েছেন জেরেভ। জিতেছেন তিন বার। ২০১৯ সালে মাস্টার্স কাপ, ২০২০ সালে প্যারিস মাস্টার্সের সেমিফাইনাল ও ২০২১ সালে মাদ্রিদ মাস্টার্সের কোয়ার্টার ফাইনালে নাদালকে হারিয়েছেন জেরেভ। বাকি ছ’বার বাজিমাত করেছেন নাদাল। গ্র্যান্ড স্ল্যামে দু’জন এক বারই মুখোমুখি হয়েছিলেন। ২০১৭ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডের খেলায় জেরেভকে হারিয়েছিলেন নাদাল। তবে সেই খেলাও গিয়েছিল পাঁচ সেটে।
রোলা গাঁরোয় এ বার খুব ভাল ছন্দে রয়েছেন জেরেভ। গতিময় সার্ভিস, কোর্টের মধ্যে ক্ষিপ্রতা তাঁর বড় শক্তি। গোটা কোর্ট জুড়ে খেলেন এই ডান হাতি খেলোয়াড়। বেসলাইনের মতো নেটলাইনেও সমান স্বচ্ছন্দ তিনি। আলকারাজের বিরুদ্ধে ম্যাচ পয়েন্টে তাঁর ব্যাক হ্যান্ডের জোরালো রিটার্ন চিন্তায় রাখবে নাদালকে। কারণ ১৯ বছরের আলকারাজের খুব কাছ দিয়ে বল গেলেও তিনি তা ফেরাতে পারেননি। ম্যাচ শেষে সেই শট নিয়ে জেরেভ বলেছেন, ‘‘আমি এই শট আগেও অনেক খেলেছি। এ ক্ষেত্রে দু’টো ফল হতে পারে। হয় বল বেসলাইনের অনেক বাইরে গিয়ে পড়বে। নয়তো প্রতিপক্ষ সেই শট ফেরাতে পারবে না।’’
নোভাকের বিরুদ্ধে পাঁচ সেটের ম্যারাথন লড়াইয়ে নিজের সবটা নিংড়ে দিয়েছেন নাদাল। জীবনের শেষ ম্যাচ ভেবেই খেলেছেন হয়তো। অন্য দিকে চার সেটে আলকারাজকে হারিয়ে শারীরিক ভাবে কিছুটা হলেও তরতাজা হয়ে নামতে পারবেন জেরেভ। বয়সও নাদালের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। জেরেভের থেকে ১০ বছর বড় নাদাল। তা হলে কি বিশ্বের এক নম্বর জোকোভিচকে হারিয়ে তিন নম্বরের কাছে হারতে পারেন নাদাল? হতেই পারে। কিন্তু নাদাল লাল সুরকির রাজা। বার বার সেটা প্রমাণ করেছেন। ফিলিপে শাতিয়ের কোর্ট যে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন সেটা কোয়ার্টার ফাইনালে ফেভারিট জোকারকে দেখিয়েছেন। ম্যাচ হেরে জোকোভিচ তা স্বীকারও করে নিয়েছেন। ফরাসি ওপেনে নিজের রাজত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমেছেন নাদাল। চোট-আঘাত থেকে বয়স, কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে স্বপ্নের টেনিস খেলছেন। প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। সেই ঝড়ে কি উড়ে যাবেন দীর্ঘদেহী জেরেভ? উত্তর মিলবে শুক্রবার।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।