মোহনবাগান বনাম কসমস ম্যাচে পেলের বিরুদ্ধে খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল প্রসূনের। ফাইল ছবি
শুক্রবার ভোর রাতে প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বিশ্ব। শোকবার্তা ভেসে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কলকাতার ময়দানেও শোকের ছায়া। আরও বেশি শোকাতুর তাঁরা, যাঁরা শুধু চোখের সামনে পেলে দেখেনইনি, তাঁর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগও হয়েছে।
তাঁদেরই একজন প্রাক্তন ফুটবলার এবং সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৭৭ সালে মোহনবাগান বনাম কসমস ম্যাচে পেলের বিরুদ্ধে খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল প্রসূনের। গভীর রাতে পেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর সারা রাত ঘুমোতে পারেননি। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “সে দিন বৃষ্টি হয়েছিল খুব। খেলা হয়েছিল ইডেনে। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বিমানবন্দর থেকে ইডেন পর্যন্ত লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল পেলেকে দেখার জন্য। ইডেনের মাঠ বৃষ্টির জন্য কাদাময় হয়ে গিয়েছিল। সেই মাঠে খেলতে গেলে আহত হতে পারতেন ফুটবলসম্রাট। তাই বিমা সংস্থা খেলার অনুমতি দিতে চায়নি। কারণ, সেই সময়ে পেলের পায়ের বিমা ছিল দু’কোটি ডলার। কিন্তু বিমা সংস্থার আপত্তি উড়িয়ে ৯০ মিনিটই খেলেছিলেন।”
কথা বলতে বলতেই প্রসূন আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তার মাঝেই বলে চলেন, “দারুণ ম্যাচ হয়েছিল। প্রথমে মোহনবাগান শ্যাম থাপা ও হাবিবের গোলে এগিয়ে গেলেও পরে কসমস ক্লাব দু’গোল দিয়ে ম্যাচ ড্র করে ফেলে। পেলের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচ এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমি ভুলতে পারব না। সে দিন মাঠে একটি পেনাল্টি নিয়ে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে আমাদের খেলোয়াড়রা। কিন্তু পেলে ছুটে এসে তাঁদের বিরত করে বলেন, রেফারি হলেন মাঠের আসল লোক। তাঁর উপর খারাপ ব্যবহার করতে নেই। মাঠে কোনও রকম মাতব্বরি না করে, কোনও ফাউল না করে কী ভাবে ভাল ফুটবল খেলা যায়, সে দিন শিখিয়েছিলেন পেলে।”
খেলার পর প্রসূন এবং গৌতম সরকার হোটেলে পেলের অটোগ্রাফ নিতে যান। সেখানে পেলে লেখেন, “প্লে দ্য ফুটবল, সি দ্য ওয়ার্ল্ড, বি আ জেন্টেলম্যান, ফ্লাই দ্য ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ।” প্রসূন জানান, ২০১৬ সালে পেলে আবার কলকাতায় আসার সময় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তখন পেলেকে বলা হয়েছিল, প্রসূন এক জন সাংসদ। শুনে পেলে খুশি হয়েছিলেন। পেলের মৃত্যুর পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রসূন বলেছেন, “ফুটবলে রাজপুত্র অনেক এসেছে এবং আসবে। কিন্তু রাজা একজনই ছিল, আছে এবং থাকবে। তিনি হলেন পেলে।”