প্রথম ম্যাচেই হার এটিকে মোহনবাগানের। ছবি টুইটার
ইস্টবেঙ্গলের মতোই আইএসএলের প্রথম ম্যাচে হার দিয়ে শুরু করল এটিকে মোহনবাগান। সোমবার চেন্নাইয়িন এফসি-র কাছে ১-২ ব্যবধানে হেরে গেল তারা। মনবীর সিংহ গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দিলেও লাভ হল না। হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরতে হল সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। পরিবর্ত হিসাবে নেমে দুরন্ত খেলে দিলেন চেন্নাইয়িনের কোয়ামে কারিকারি। নিজে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করলেন। আর একটি গোলের পাস বাড়ালেন। তবে মোহনবাগানের স্বপ্নভঙ্গ হল এক বাঙালির গোলে। তিনি রহিম আলি। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে খেলা এই ফুটবলারের গোলেই হেরে গেল সবুজ-মেরুন।
এত দিন ধরে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেটা আরও এক বার দেখা গেল সোমবার। মোহনবাগানে গোল করার লোকের অভাব। কোচ জুয়ান ফেরান্দো যতই বিষয়টিকে পাত্তা না দিন, প্রত্যেক ম্যাচে তাঁর আক্রমণভাগই ডোবাচ্ছে। সঠিক কোনও স্ট্রাইকার নেই যিনি বক্সে বল পেলে গোলটি করতে পারেন। গত মরসুম পর্যন্তও সেই কাজটি করেছিলেন রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামস। কিন্তু তাঁর ‘কৌশলের’ সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবেন না বলে দু’জনকেই ছেড়ে দিয়েছেন ফেরান্দো। স্বাভাবিক ভাবেই ফল ভুগতে হচ্ছে।
আইএসএলে অংশ নিতে শুরু করার পর প্রথম বার যুবভারতীতে খেলতে নেমেছিল এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু গ্যালারিতে সে রকম দর্শক চোখে পড়ল কই! মেরেকেটে হাজার কুড়ি দর্শক এসেছিলেন ম্যাচ দেখতে। অথচ স্টেডিয়ামের বাইরে টিকিটের জন্য হুড়োহুড়ি। অনেকেই ভেবেছিলেন ম্যাচের দিন অফলাইনে টিকিট বিক্রি হবে। সে সবের ব্যবস্থা ছিল না। যাঁরা অনলাইনে টিকিট কেটেছিলেন তাঁরাই ম্যাচ দেখতে পেলেন।
ম্যাচের রাশ অবশ্য প্রথম থেকে ছিল মোহনবাগানের হাতেই। শুরু থেকেই সবুজ-মেরুনের ফুটবলাররা একের পর এক আক্রমণ করছিলেন। তা সামলে দিচ্ছিলেন চেন্নাইয়িনের ডিফেন্ডাররা। ম্যাচের শুরুতেই সুযোগ পেয়ে যান মোহনবাগানের নতুন স্ট্রাইকার দিমিত্রি পেত্রাতোস। চেন্নাইয়িনের বাঙালি গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদার তা বাঁচিয়ে দেন। চেন্নাইয়িন পাল্টা আঘাত হানে চার মিনিট পরে। তবে এ বার অনিরুদ্ধ থাপার শট আটকে দেন মোহনবাগানের ডিফেন্ডার। আশিক কুরুনিয়ানের গড়ানো নীচু শট আটকে দেন দেবজিৎ। ব্রেন্ডন হ্যামিলের ফ্রিকিক থেকে সুযোগ নষ্ট করেন শুভাশিস বসুও।
২৭ মিনিটে গোল করে মোহনবাগান। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রতি আক্রমণের প্রশংসা করতেই হবে। গোলের লক্ষ্যে চেন্নাইয়িনের বেশির ভাগ ফুটবলারই মোহনবাগানের অর্ধে উঠে এসেছিলেন। মাঝমাঠ থেকে হঠাৎই পাস পেয়ে যান পেত্রাতোস। বাঁ দিকে ফাঁকায় থাকা অরক্ষিত মনবীর সিংহকে পাস দেন তিনি। অনায়াসে দেবজিৎকে পরাস্ত করে গোল করে যান পঞ্জাবি ফুটবলার। কিছু ক্ষণের জন্য ঝিমিয়ে থাকা যুবভারতীর গ্যালারি হঠাৎই জেগে ওঠে।
বরাবরের মতো এই ম্যাচেও মোহনবাগানের চালিকাশক্তি ছিলেন সেই হুগো বুমোস। ফরাসি ফুটবলার কখনও ডান দিক, কখনও বাঁ দিক, কখনও মাঝখান থেকে সতীর্থদের অবিরাম বল বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। চেন্নাইয়িন ফুটবলারকে তাঁকে মরিয়া হয়ে আটকানোর চেষ্টা করছিলেন। ফাউল হচ্ছিল বার বার। মোহনবাগানের উচিত ছিল প্রথমার্ধেই ম্যাচ শেষ করে দেওয়া। একাধিক সুযোগ তারা পেয়েছিল। কাজে লাগাতে পারলে দু’-তিন গোলে এগিয়ে থাকার কথা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বিপত্তি। খেলা শুরুর কয়েক মিনিট পরেই নিভে যায় যুবভারতীর ফ্লাডলাইটের একাংশ। ম্যাচ বন্ধ থাকে প্রায় ১০ মিনিট। মাঠে আলো ফিরলেও হঠাৎই অন্ধকার নেমে আসে মোহনবাগানে। খেলা শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই পেনাল্টি পায় চেন্নাইয়িন। জুলিয়াস ডুকারের পাস পেয়ে মোহন-ডিফেন্ডারদের টপকে বক্সে ঢুকে পড়েন কোয়ামে কারিকারি। সামনে একা গোলকিপার। তাঁকে কাটিয়ে গোল করতে যেতেই কারিকারিকে ফাউল করেন বিশাল কাইথ। রেফারি ক্রিস্টাল জন সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। বাঁ পায়ের শটে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি কারিকারি।
এর পরেই মোহনবাগান ম্যাচের থেকে কার্যত হারিয়ে গেল। ধীরে ধীরে দখল নিতে শুরু করল চেন্নাইয়িন। আক্রমণ শক্তিশালী করার লক্ষ্যে লিস্টন কোলাসো, কার্ল ম্যাকহিউকে নামান মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো। তবে এতই দেরিতে নামালেন, যে ম্যাচে তার প্রভাবই পড়ল না। উল্টে গোল পেয়ে গেল চেন্নাইয়িন। বক্সের ডান দিকে বল পেয়ে বাঁ দিকে পাস বাড়িয়েছিলেন কারিকারি। ছুটে আসা রহিম আলি চলতি বলে শট নিয়ে অনায়াসে পরাস্ত করলেন বিশালকে। ম্যাচের বাকি সময়ে দু’-একটা সুযোগ পেলেও সমতা ফেরাতে পারেনি মোহনবাগান।