Afghanistan Crisis

Taliban Rule in Afghanistan: প্রাণ হাতে করে কাবুলে ৪০ দিন, হেঁটে পাকিস্তানে, পালানোর গল্প শোনালেন মেয়ে ফুটবলাররা

পরিবারের লোকেরা এখনও আফগানিস্তানে রয়েছেন। তাঁদের জন্য চিন্তা হয়। তার মধ্যেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন সাবেরিয়ারা।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:০৬
আফগানিস্তানের মহিলা ফুটবলাররা

আফগানিস্তানের মহিলা ফুটবলাররা ছবি: টুইটার থেকে।

সেই ৪০ দিন কী ভাবে কেটেছিল তা মনে করলে এখনও ভয়ে আঁতকে ওঠেন তাঁরা। চোখ বন্ধ করলে এখনও দেখতে পান রাস্তায় অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে তালিব যোদ্ধারা। গায়ের আঘাত মিলিয়ে গেলেও এখনও মনের মধ্যে দগদগে ঘা। সেই নিয়েই বাঁচছেন সাবেরিয়ারা। তাঁরা আফগানিস্তানের মহিলা ফুটবল দলের সদস্য। নিজের দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বর্তমান ঠিকানা ব্রিটেনের এক হোটেল। তালিবান দখল নেওয়ার পরে কী ভাবে কাবুল ছেড়ে পালিয়েছিলেন তাঁরা, সেই গল্পই শোনালেন সাবেরিয়া।

চেলসি ফুটবল দলের ভক্ত সাবেরিয়া জানান, তালিবান যখন কাবুলের দখল নেয় তখনই তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন পালাতে হবে। কিন্তু কী ভাবে পালাবেন তা জানতেন না। সাবেরিয়া বলেন, ‘‘প্রথমে গোটা দল একটি হস্টেলে জড়ো হয়েছিলাম। সেখানে এক ঘরে ৩০ দিন বন্দি ছিলাম। খাবার, জল সব কিছুর অভাব ছিল। বাড়ির লোকেরা কেউ ছিল না। কিন্তু একে অপরকে সাহায্য করতাম। সেখান থেকেই চেষ্টা করতাম কী ভাবে দেশ ছাড়তে পারব।’’

Advertisement

৩০ দিন পরে এক বার বাসে চেপে বিমানবন্দরে যাওয়ার চেষ্টা করেন মেয়ে ফুটবলাররা। কিন্তু রেহাই পাননি। তালিব যোদ্ধারা তাঁদরে চিনে ফেলায় বাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন। ফের ঠিকানা হয় হস্টেল। আরও ১০ দিন সে ভাবেই কেটে যায়।

তাঁদের রক্ষাকর্তা হয়ে আসেন খালিদা পোপাল। তিনি আফগানিস্তানের প্রাক্তন ফুটবলার। ২০১১ সালে দেশ ছেড়ে ব্রিটেনে চলে যান তিনি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন সাবেরিয়ারা। তিনি প্রথমে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে কথা বলেন। পাকিস্তান রাজি হয় তাঁদের সে দেশে ঢুকতে দিতে।

সেখানেও সমস্যা ছিল। পাকিস্তানে যাবেন কী ভাবে? সাবেরিয়ারা ঠিক করেন হেঁটেই যাবেন। কোনও রকমে পাক সীমান্তে পৌঁছে ফের বিপত্তি। সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে তালিবান। সেখানে নিজেদের পরিচয় লুকোতে পারেননি তাঁরা। মেয়ে ফুটবলার জানতে পেরে রেগে যায় তালিবান। সাবেরিয়া বলেন, ‘‘ওরা বলে তোমরা মেয়ে হয়ে মুখ ঢাকোনি কেন? তোমরা এখানে থাকলে তোমাদের মেরে ফেলা হবে। এত গরম ছিল যে আমরা মুখ ঢাকতে পারিনি। সবার সামনেই আমাদের চাবুক দিয়ে মারা হয়। পাকিস্তান আশ্রয় না দিলে হয়তো ওরা আমাদের মেরেই ফেলত।’’

পাকিস্তানে কিছু দিন থাকার পরে সেখান থেকে ব্রিটেন যান সাবেরিয়ারা। সেখানে একটি হোটেলে তাঁদের রাখেন খালিদা। সেখানেই সমস্যা মেটেনি। হোটেলের বাইরে তাঁদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতেন স্থানীয়রা। বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য করতেন। খালিদাকেও অনেক অপমান করা হয়েছে। সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করেছেন। কোনও রকমে প্রাণ বাঁচাতে চেয়েছিলেন তাঁরা।

পরিবারের লোকেরা এখনও আফগানিস্তানে রয়েছেন। তাঁদের জন্য চিন্তা হয়। তার মধ্যেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন সাবেরিয়ারা। লিডস ইউনাইটেড ক্লাবের চেয়ারম্যান আন্দ্রিয়া রাদ্রিজ্জানি ও পাকিস্তানের হয়ে খেলা ফুটবলার কাশিফ সিদ্দিকি তাঁদের সাহায্য করছেন। খেলাধুলোর পাশাপাশি ফের পড়াশোনাও শুরু করবেন তাঁরা। কিন্তু নতুন ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়েও সাবেরিয়াদের চোখের সামনে বার বার ভেসে ওঠে সেই ৪০ দিনের বিভীষিকা।

Advertisement
আরও পড়ুন