গোলের পর দিয়ামানতাকোস। ছবি: সমাজমাধ্যম।
আইএসএলে টানা ছ’টা হারের পর দুমড়ে গিয়েছিল দলের মনোবল। সেই সময় এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ইস্টবেঙ্গল খেলতে যাওয়ার আগে সমর্থক থেকে বিশেষজ্ঞেরা ভেবেছিলেন, বিদেশের মাটিতেও হয়তো লজ্জার মুখে পড়তে হবে। তা তো হয়ইনি। উল্টে গ্রুপের তিনটি ম্যাচেই অপরাজিত থেকে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। এশীয় মঞ্চে আরও একবার ভাল পারফরম্যান্স লাল-হলুদের। কোচ অস্কার ব্রুজ়ো চাইছেন, এই প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাস এ বার কাজে লাগাতে হবে আইএসএলে।
এই জয় দলকে আইএসএলেও দলকে উদ্বুদ্ধ করবে কি? ব্রুজ়োর জবাব, “অবশ্যই। এই প্রতিযোগিতার পরের পর্ব মার্চ-এপ্রিলে হবে। তার আগে আবার এটা নিয়ে ভাবব। তবে এই পারফরম্যান্স নিঃসন্দেহে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। হয়তো এক-দু’দিন উচ্ছ্বাস করব। কিন্তু দেশে ফিরেই আইএসএল নিয়ে ভাবতে হবে। আমাদের কাছে আরামের কোনও সময় নেই। পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবনা শুরু করে দিতে হবে।”
জিতলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট হওয়ার মানুষ নন ব্রুজ়ো। সে কারণেই বলেছেন, “সত্যি বলতে ওদের উপর খুশি হতে পারিনি। ও ভাবে দু’গোল খাওয়া মানা যায় না। আমরা তৃতীয় গোলের সুযোগ হারিয়েছি। কিন্তু প্রতি আক্রমণে গোল খাওয়া উচিত হয়নি। রক্ষণের ভূমিকা নিয়ে আবারও খুশি হতে পারিনি। বিরতিতে ওদের বলেছিলাম, খেলাটা ৯০ মিনিটের। ধরে নাও এখন ০-০ রয়েছে। এই ম্যাচটা না জিতলেও আমরা হয়তো ছিটকে যেতাম না। তখন অনেক অঙ্ক কষতে হত। সেটা করতে চাইনি। আমরা দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম ২০ মিনিট ভাল খেলিনি। তবে পরের দিকে ফিরে এসেছি।”
শেষ পর্যন্ত তিন পয়েন্ট এবং কোয়ার্টারের যোগ্যতা অর্জন খুশি করেছে ব্রুজ়োকে। স্পেনীয় কোচের কথায়, “এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে আমাদের যে লক্ষ্য ছিল তা পূরণ করতে পেরেছি। ঘরোয়া লিগে সমস্যায় রয়েছি। তাই এই জয় আমাদের কাছে টাটকা বাতাসের মতো। দল বুঝেছিল যে আমাদের ধারাবাহিক হতে হবে, লড়াই করতে হবে। ৯০ মিনিট ধরে শাসন করা সম্ভব নয়। কিন্তু কঠিন মুহূর্তে ভাল খেলতে হবে। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে ভুল করার কোনও জায়গা নেই। এএফসি-র ফরম্যাটটাই সে রকম। কঠিন ম্যাচ ছিল। আমরা প্রত্যাবর্তন করতে পেরেছি। বিপক্ষ ভাল ফুটবল খেলার পরেও আমরা পিছিয়ে থাকিনি। শেষ ২০ মিনিট আমরা ভাল খেলেছি।”
ব্রুজ়োর সংযোজন, “কোচ হওয়ার সময়ই আমি জানতাম ইস্টবেঙ্গল কী অবস্থায় রয়েছে। সমর্থকদের জন্য খুব ভাল লাগছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে নিজেদের প্রতি বিশ্বাসটা ঢুকিয়ে দিয়েছি। ম্যানেজমেন্টকেও ধন্যবাদ আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য। খেলোয়াড়দেরও ধন্যবাদ। প্রায় তিন সপ্তাহ কাজ করেও ওরা নিজেদের পরিবর্তন করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। নতুন ভাবনাচিন্তার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছে। ওদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
ম্যাচের জোড়া গোলদাতা দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস বলেছেন, “আমরা ম্যাচটা জিততেই চেয়েছিলাম। আর কোনও বিকল্প ছিল না। ড্র হলে হয়তো ছিটকে যেতে পারতাম। সেটা ম্যাচের আগে জানতাম বলেই জেতার ইচ্ছা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। দু’গোল করে দলকে জেতাতে পেরে খুশি। আশা করি আরও এগিয়ে যেতে পারব।”
ইস্টবেঙ্গলের জয়ে খুশি কর্তা দেবব্রত সরকারও। তাঁর কথায়, “যে কোনও জয়ই আনন্দের। আমরা ইদানীং সমস্যায় ছিলাম। তবে বিদেশের মাঠে ইস্টবেঙ্গলের জার্সি সব সময়েই দাপায়। আশা করছিলাম যে ভাল সময় আসবে। সেটা সমর্থকদের ভালবাসা, শুভেচ্ছা নিয়ে আমাদের দল সাফল্য পেয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে। আশা করি কোচ, ফুটবলারেরা সেটা বুঝবেন। খারাপ সময়টা চলে গিয়েছে কি না জানি না। সেটা যাতে আর না আসে তার জন্য সবাইকে সময় দিতে হবে।”