গোল করে তালালের (বাঁ দিকে) সঙ্গে উল্লাস দিয়ামানতাকোসের। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ইস্টবেঙ্গল ৩ (দিয়ামানতাকোস ২, মুসাহ-আত্মঘাতী)
নেজমেহ ২ (ওপারে, মুনজ়ের)
ভুটানের থিম্পুতে স্বপ্নপূরণ ইস্টবেঙ্গলের। আইএসএলের টানা ছ’টি ম্যাচে হারা লাল-হলুদ বিদেশের মাটিতে মুখ উজ্জ্বল করল দেশের। এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেজমেহ এফসি-কে ৩-২ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল তারা। জোড়া গোল করলেন দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস। অপর গোলটি আত্মঘাতী। তিন ম্যাচে সাত পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপের শীর্ষে শেষ করল ইস্টবেঙ্গল।
এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে পশ্চিমাঞ্চল থেকে তিনটি গ্রুপের শীর্ষ স্থানাধিকারীরা কোয়ার্টার ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করবে। গ্রুপ ‘এ’ থেকে ইস্টবেঙ্গল শেষ আটে গিয়েছে। এর পর তারা হোম ও অ্যাওয়ে ফরম্যাটে খেলার সুযোগ পাবে। সেখানে অপেক্ষা করতে পারে আরও কঠিন দল।
জয় এবং কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া ছাড়াও ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল মাদিহ তালাল এবং দিয়ামানতাকোস জুটির ফর্মে ফেরা। এ দিন তিনটি গোলের পিছনেই রয়েছে তালালের অবদান। অন্য দিকে, দিয়ামানতাকোস এএফসি-তে তিনটি ম্যাচেই গোল করলেন। এই ফর্ম তিনি আইএসএলে দেখাতে পারলে ইস্টবেঙ্গল প্রথম পয়েন্ট এবং জয়ের স্বপ্ন দ্রুত দেখতে পারে।
চোটের কারণে হেক্টর ইয়ুস্তের খেলা নিয়ে জল্পনা ছিল। এ দিন ইয়ুস্তেকে প্রথম একাদশেই রেখেছিলেন ব্রুজ়ো। তবে গোটা ম্যাচেই তাঁর মন্থরতা দেখে মনে হয়েছে চোট পুরোপুরি সারেনি। ইস্টবেঙ্গল দু’টি গোলই খেয়েছে তাঁর ভুলে। আরও একটি খেতে পারত নেজমেহর ফুটবলার ভুল না করলে।
মরণবাঁচন ম্যাচে শুরুটা খুবই ভাল করেছিল ইস্টবেঙ্গল। প্রথম থেকেই ফুটবলারদের দেখে মনে হয়েছিল তাঁরা একটা পণ নিয়ে নেমেছেন। আট মিনিটেই এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। মাদিহ তালালের নিখুঁত কর্নার থেকে নেজমেহর বাবা মুসার হেড নিজেদেরই জালে জড়িয়ে যায়।
সেই গোলের পর ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ আরও বাড়ে। ১৫ মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল করে তারা। ডান দিক থেকে পাস দিয়েছিলেন তালাল। কাছ থেকে নিখুঁত ফিনিশে গোল করেন দিয়ামানতাকোস। তিন মিনিট পরেই গোল হজম করে ইস্টবেঙ্গল। মাঝমাঠ থেকে ওপারেকে পাস দিয়েছিলেন আতায়া। ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের ফুটবলারেরা জায়গাতেই ছিলেন না। ওপারেকে আটকানোর চেষ্টা করলেও গতিতে পরাস্ত হন ইয়ুস্তে। প্রভসুখন গিলের পাশ দিয়ে গোল করেন ওপারে।
গোল খেতেই ইস্টবেঙ্গলের আগ্রাসী খেলা হারিয়ে যায়। আচমকাই তারা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে। সেই সুযোগ নেয় নেজমেহ। তার মাঝেই একটি ভাল সুযোগ নষ্ট করেন তালাল। বাঁ দিক থেকে আসা ক্রস প্রথমে দিয়ামানতাকোস পায়ে লাগাতে পারেননি। বক্সে থাকা তালালের কাছে বল এলেও তিনি বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন।
তার পর আরও খোলসে ঢুকে পড়তে থাকে ইস্টবেঙ্গল। বলের নিয়ন্ত্রণই রাখতে পারছিল না তারা। বার বার বল হারাতে থাকে নেজমেহর কাছে। ৪০ মিনিটের মাথায় আতায়ার শট বাঁচান প্রভসুখন। তাতেও কাজ হয়নি। বিরতির আগেই আবার গোল খায় ইস্টবেঙ্গল। বক্সের ঠিক বাইরে অকারণে ওপারেকে ফেলে দেন ইয়ুস্তে। হলুদ কার্ডও দেখতে হয়। সরাসরি ফ্রিকিকে গোল করেন হুসেন মোনজ়ের।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আবার গোল খেতে পারত ইস্টবেঙ্গল। দ্রুত নেওয়া একটি ফ্রিকিক থেকে ইসমাইলি পাস দিয়েছিলেন কৌরানিকে। অল্পের জন্য কৌরানির হেড বাইরে যায়। দু’মিনিট পরেই সুযোগ নষ্ট করেন নন্দকুমার। ডান দিক থেকে নাওরেম মহেশের পাস ধরতে পারেননি তিনি।
এর পর একতরফা খেলা হতে থাকে। নেজমেহর একের পর এক আক্রমণ রুখে দিচ্ছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে যে কোনও মুহূর্তে ভুলভ্রান্তির আশঙ্কাও ছিল। ইস্টবেঙ্গল কিছুটা অক্সিজেন পায় ৭১ মিনিটে। ঠান্ডা এবং উচ্চতার কারণে মাঠে একই সঙ্গে নেজমেহর তিন ফুটবলার অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেই ঘটনার দু’মিনিট পরেই পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে ঢোকার সময় বক্সে তালালকে ফেলে দেন ইসমাইল। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। বিপক্ষের গোলকিপারকে উল্টো দিকে ফেলে গোল করেন দিয়ামানতাকোস।
তখনও বিপদ কাটেনি। নেজমেহর ফুটবলারেরা টানা আক্রমণ করতে থাকেন। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে বাকি সময়টা গোল হজম করতে দেননি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা।