কার্লেস কুয়াদ্রাত। —ফাইল চিত্র।
আইএসএলে প্রথম ছয় দলের মধ্যে শেষ করার জন্য পঞ্জাব এফসির বিরুদ্ধে জিততেই হবে ইস্টবেঙ্গলকে। এ রকম হিসাব মাথায় নিয়ে খেলতে নামা দলের ফুটবল যে মানের হওয়া উচিত, বুধবার তার ধারেকাছেও পৌঁছল না লাল-হলুদের খেলা। পঞ্জাবের কাছে ১-৪ ব্যবধানে হেরে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে এ বারের মতো শেষ হয়ে গেল ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল অভিযান।
খেলার শুরু থেকেই কার্লেস কুয়াদ্রাতের দল ছিল অগোছালো, পরিকল্পনাহীন। বল দখলের লড়াইয়ে পঞ্জাবের ফুটবলারদের কাছে বার বার হার মেনেছেন ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারেরা। পর পর চার-পাঁচটা সঠিক পাসও দিতে পারছিলেন না তাঁরা। শুরু থেকে মাঝমাঠের দখল নেওয়ার চেষ্টা করে পঞ্জাব। সেই লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারছিলেন না সাউল ক্রোসপো, মহেশ সিংহরা। কিছুটা খেলার গতির বিপরীতে ৭ মিনিটে নিশু কুমার গোল করার সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। এর পরেই একের পর এক আক্রমণ তুলে আনতে শুরু করে পঞ্জাব। তালাল এবং জর্ডনের জুটি চাপে ফেলে দেয় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে। ১৯ মিনিটে আগ্রাসী ফুটবলের সুফল পায় পঞ্জাব এফসি। দলকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন জর্ডন। ইস্টবেঙ্গল অবশ্য বেশি ক্ষণ পিছিয়ে থাকেনি। ২৫ মিনিটে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় দুরন্ত গোল করে লাল-হলুদকে সমতায় ফেরান সায়ন বন্দোপাধ্যায়। তাতে অবশ্য লাভের লাভ হয়নি। খেলার বয়সের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পঞ্জাবের দাপট। একই সঙ্গে চোখে পড়েছে ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের বোঝাপড়ার অভাব। তারই সুযোগ নিয়ে ৪৩ মিনিটে পঞ্জাবকে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন তালাল। তাঁর দৌড়ে ছন্নছাড়া অবস্থা হয় লাল-হলুদ রক্ষণের। গোল করতে ভুল করেননি ফরাসি মিডফিল্ডার। এই গোলের ক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারেন না ইস্টবেঙ্গল গোলরক্ষক কমলজিৎ সিংহ। বলের নাগাল পেয়েও দলের পতন রুখতে পারেননি। প্রথমার্ধের শেষ বেলায় আরও একটি গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন তালাল। অল্পের জন্য বাইরে চলে যায় তাঁর শট।
১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নামা কুয়াদ্রাতের দলকে আরও ছন্নছাড়া দেখিয়েছে। লাল-হলুদ ফুটবলারদের খেলা দেখে কখনও মনে হয়নি, তাঁদের মধ্যে জেতার চেষ্টা রয়েছে। পঞ্জাবের তৃতীয় গোলও তালাল-জর্ডন যুগলবন্দির ফসল। ৬১ মিনিটে ডান দিক থেকে তালালের সেন্টার ইস্টবেঙ্গলের গোলের সামনে পেয়ে যান কার্যত অরক্ষিত জর্ডন। পা ছুঁইয়ে গোল করতে ভুল করেননি তিনি। ১-৩ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার খেলা থেকে প্রায় হারিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। ৭০ মিনিটে তালালের আরও একটি বিপজ্জনক দৌড় ছন্নছাড়া করে দেয় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে। লাল-হলুদের ফাইনাল থার্ডে উঠে আসা ফরাসি ফুটবলার ঠান্ডা মাথায় বল দেন মাজেনকে। দলকে ৪-১ ব্যবধানে এগিয়ে দেন তিনি। ৭২ মিনিটে জোড়া পরিবর্তন করেন কুয়াদ্রাত। প্যান্টিক এবং মহিতোষকে নামান ভাসকোয়েজ় এবং মহেশকে তুলে নিয়ে। তাতেও লাভ কিছু হয়নি। কারণ তত ক্ষণে পয়েন্ট পাওয়ার আর কোনও আশা ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। দ্বিতীয়ার্ধে গোল করার মতো একটাও তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেননি লাল-হলুদ ফুটবলারেরা।
ইস্টবেঙ্গলের হারের ব্যবধান আরও বৃদ্ধি পেতে পারত। গোলের একাধিক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন পঞ্জাবের ফুটবলারেরা। শেষ ম্যাচ জিতে ইস্টবেঙ্গল শেষ ছয়ে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রাখবে মনে করেছিলেন সদস্য, সমর্থকেরা। কিন্তু কুয়াদ্রাতের দল তাঁদের বাংলা নতুন বছরের আগে উপহার দিলেন একরাশ লজ্জা। তবে এটাই আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের সেরা ফল।