bhaichung bhutia

Bhaichung Bhutia: আসিয়ান জয় মনে পড়ে যাচ্ছে ভাইচুংয়ের 

অন্যতম প্রিয় কোচের প্রয়াণের খবর শুন ভাইচুংয়ের বারবার মনে পড়েছিল আসিয়ান কাপ জিতে ইতিহাস গড়ার নানা কাহিনি।

Advertisement
শুভজিৎ মজুমদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৮:৩১
যুগলবন্দি: ভাইচুংয়ের সঙ্গে গুরু সুভাষ ভৌমিক। ফাইল চিত্র

যুগলবন্দি: ভাইচুংয়ের সঙ্গে গুরু সুভাষ ভৌমিক। ফাইল চিত্র

ফুটবলারদের কাছে তিনি শুধু কোচ নন, ছিলেন পিতার মতো! অনুশীলনে বা খেলার মধ্যে কেউ ভুল করলে প্রচণ্ড বকেছেন। তার পরেই আবার স্নেহশীল বাবার মতো বুকে টেনে নিয়েছেন। কখনও পছন্দের ফুটবলারকে নেওয়ার জন্য ছুটে গিয়েছেন। কখনও আবার মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ফুটবলারকে নিজের বাড়িতে এনে রেখে দিয়েছেন দিনের পর দিন।

শনিবার সকালে আসিয়ান কাপ জয়ী কোচের প্রয়াণের খবর শুনে সিকিম থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে শোকস্তব্ধ ভাইচুং বলছিলেন, ‘‘সুভাষদার সঙ্গে আমার অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। ২০০৩ সালের আসিয়ান কাপ থেকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া— কখনও ভুলতে পারব না।’’ যোগ করলেন, ‘‘সুভাষদা ছিলেন অকুতোভয়। নিজে যা বিশ্বাস করতেন, তা বলতে কখনও ভয় পাননি। এর জন্য বারবার বিতর্কেও জড়িয়েছেন। কিন্তু সুভাষদা নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করেননি। আমার সঙ্গেও বহুবার মতের অমিল হয়েছে। তর্কও করেছি। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে তার কোনও প্রভাব পড়েনি।’’ কেন? ভাইচুং বলছিলেন, ‘‘বাইরে থেকে সুভাষদাকে দেখে অনেকেরই মনে হত খুব বদরাগী ও অহঙ্কারী এক জন মানুষ। কিন্তু ওঁর সঙ্গে যাঁরা ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশেছেন, তাঁরা জানেন সুভাষদার মনটা ছিল খুবই নরম। ওঁর কোচিং শুধু মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ফুটবলাররা কে কী করছে, কী খাচ্ছে, রাতে কখন ঘুমোতে যাচ্ছে, কী সমস্যা হচ্ছে— সব খবরই রাখতেন।’’

Advertisement

অন্যতম প্রিয় কোচের প্রয়াণের খবর শুন ভাইচুংয়ের বারবার মনে পড়েছিল আসিয়ান কাপ জিতে ইতিহাস গড়ার নানা কাহিনি। বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবলে আধুনিকতা আনার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন সুভাষদা। আসিয়ান কাপে খেলতে যাওয়ার আগে আমরা সল্টলেক স্টেডিয়ামের লাগোয়া পাঁচতারা হোটেলে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। বিদেশি ফিজ়িক্যাল ট্রেনার নিয়ে এসেছিলেন উনি। বদলে দিয়েছিলেন ফুটবলারদের খাদ্যাভ্যাসও। এর আগে যা কেউ ভাবতেও পারতেন না।’’ আরও বললেন, ‘‘আসিয়ান কাপ ফাইনালে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল বেকতেরো সাসানা। চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো দূরের কথা, ইস্টবেঙ্গল যে ফাইনালে উঠবে সেটাই কেউ কল্পনা করেননি। ব্যতিক্রম সুভাষদা। প্রথম ম্যাচ থেকেই আমাদের বারবার বলতেন, ইতিহাস গড়ার এই সুযোগ হাতছাড়া করলে, বাকি জীবনটা আক্ষেপ নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। নিজেও বিশ্বাস করতেন চ্যাম্পিয়ন হবেন। এখনও মনে আছে, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে আমরা ট্রফি নিয়ে ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু সুভাষদাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জানতে পারলাম, উনি অনেক আগেই নাকি হোটেলে ফিরে গিয়েছেন। পরে বলেছিলেন, তোমরাই খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছো। তাই উৎসব তোমরাই করবে। আমি কী করব ওখানে।’’

প্রয়াত কোচের আর এক প্রিয় ছাত্র বিজয়নকে যখন ফোনে ধরা হল, শিশুর মতো কাঁদছেন। বললেন, ‘‘আরও একবার পিতৃহীন হলাম। শেষ বার যখন কলকাতায় গিয়েছিলাম, তখনও দেখা হয়েছিল। মজা করে বলেছিলাম, পাপা তুমি তো বুড়ো হয়ে গিয়েছ। শুনে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে গালগাল দিয়ে বলেছিলেন, ‘এক্ষুণি মাঠে চল বল নিয়ে। দেখি তুই আমাকে আটকাতে পারিস কি না।’’ আরও বললেন, ‘‘পাপাকে আমরা যেমন ভয় পেতাম, তেমন শ্রদ্ধাও করতাম। মাঝেমধ্যে খুব রাগ হত, সব ব্যাপারে নাক গলাতেন বলে। পরে উপলব্ধি করেছিলাম, আমাদের ভালবাসতেন বলেই আগলে রাখতেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement