সতীর্থ মিলি ব্রাইটের সঙ্গে র্যাচেল ডালি (ডান দিকে)। নিজেকে সমকামী বলে জানিয়েছেন ইংল্যান্ডের ফুটবলার র্যাচেল। ছবি: রয়টার্স
গত বছর পুরুষদের ফুটবল বিশ্বকাপের আগে আয়োজক দেশ কাতার ঘোষণা করেছিল, সমকামিতা প্রকাশ্যে দেখানো যাবে না। বিশ্বকাপ চলাকালীন কোনও ফুটবলার প্রকাশ্যে জানাননি যে তিনি সমকামী। কিন্তু মহিলাদের ফুটবল বিশ্বকাপ সেই বেড়াজাল ভেঙে দিল। ফুটবল খেলার পাশাপাশি নিজেদের যৌন পরিচিতি প্রকাশ্যে আনলেন ফুটবলার ও কোচেরা। একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুয়ায়ী, এ বারের মহিলাদের ফুটবল বিশ্বকাপে ১০০ সমকামী ফুটবলার খেলেছেন। রবিবার ফাইনালে ইংল্যান্ড বনাম স্পেন ম্যাচেই নামবেন আট জন সমকামী ফুটবলার।
এ বারের বিশ্বকাপে যে ৩২টি দেশ অংশ নিয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই সমকামী ফুটবলার খেলেছেন। সব থেকে বেশি আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। ২৩ জন ফুটবলারের মধ্যে ১৪ জনই সমকামী। এক বারের জন্যও নিজেদের সমকামিতার কথা জানাতে সঙ্কোচ বোধ করেননি তাঁরা। খেলা শেষে মাঠেই নিজের সঙ্গীকে চুমু খেতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। এ বারের মহিলাদের বিশ্বকাপ যেন একরাশ মুক্ত বাতাস এনে দিয়েছে।
প্রথম বার মহিলাদের বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। ফুটবল বিশ্বকাপে ৫৭ বছরের খরা কাটাতে মরিয়া তারা। সেরিনা উইগম্যানের এই দলে চার জন সমকামী ফুটবলার রয়েছেন। চার জনের সঙ্গীই ফুটবল খেলেন।
র্যাচেল ডালি— দলের স্ট্রাইকার। গত মরসুমে ২২টি গোল করেছেন। ফুটবল খেলার পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও খোলামেলা ডালি। তাঁর সঙ্গী ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ফুটবলার মিলি টার্নার। ২০২১ সালে তাঁদের সম্পর্ক শুরু। সমাজমাধ্যমে একসঙ্গে ছবি দেওয়া থেকে শুরু করে একে অপরের ম্যাচে গ্যালারিতে থেকে সমর্থন, বার বার প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে দুই ফুটবলারকে।
জেস কার্টার— দলের ডিফেন্ডার। ২০১৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলে অভিষেক হয় কার্টারের। তাঁর সঙ্গীও ফুটবলার। জার্মানির ফুটবলার অ্যান কাটরিন বার্গারের সঙ্গে ২০২১ সাল থেকে তাঁর সম্পর্ক। ক্লাব ফুটবলে ইংল্যান্ডের চেলসিতে খেলেন বার্গার।
বেথানি ইংল্যান্ড— ফুটবলের খরচ জোগাতে এক সময় দোকানে মাছ বিক্রি করেছেন। এখন ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। তিনিও সমকামী। চলতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ্য নিজের কথা জানান বেথানি। তাঁর সঙ্গী স্টেফানি উইলিয়ামস অক্সফোর্ড ইউনাইটেডের হয়ে ফুটবল খেলেন।
লরেন হেম্প— ইংল্যান্ডের আর এক ফরোয়ার্ড। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির এই ফুটবলারের সঙ্গী এলি বাটলার। তিনি কভেন্ট্রি ইউনাইটেডের হয়ে ফুটবল খেলেন। ২০২২ সাল থেকে দু’জনের সম্পর্ক। নিজেদের কথা জানাতে কোনও দিন সঙ্কোচ করেননি হেম্প।
ইংল্যান্ডের মতো স্পেনের দলেও চার জন সমকামী ফুটবলার রয়েছেন। তাঁরাও নিজেদের পরিচিতি জানাতে সঙ্কোচ করেননি। প্রকাশ্যে নিজেদের কথা বলেছেন। এই চার জনের সঙ্গীই আবার ফুটবলার নন। কেউ অন্য পেশার সঙ্গেও যুক্ত।
আলবা রেডন্ডো— দলের ফরোয়ার্ড। এ বারের বিশ্বকাপে তিনটি গোল করেছেন ও একটি করিয়েছেন। ছন্দে থাকা ফুটবলারের সঙ্গী ক্রিস্টিনা মনলিয়ন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। ২০২১ সাল থেকে তাঁদের সম্পর্ক। এ বারের প্রতিযোগিতায় জাম্বিয়ার বিরুদ্ধে জয়ের পরে মাঠেই ক্রিস্টিনাকে চুমু খেয়েছেন আলবা।
ইরেন পারেদেস— দলের ডিফেন্ডার। ২০১৯ সালে স্পেনের মহিলা হকি খেলোয়াড় লুসিয়া ইয়াবারার সঙ্গে বিয়ে করেন পারেদেস। ২০২১ সালে তাঁদের এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে।
ইভানা আন্দ্রেস— স্পেনের আর এক ডিফেন্ডার ইভানা দলের অধিনায়ক। ২০২২ সালে পেশায় মডেল অ্যানাবেল মোরেনো বারাগানকে বিয়ে করেন তিনি। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইভানা জানান, তাঁদের প্রথম সন্তান আসতে চলেছে।
টেরেসা আবেলেইরা— দলের মিডফিল্ডার। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার সময় প্যাট্রিসিয়া কারবেলোর সঙ্গে তাঁর আলাপ। তার পরেই প্রেম। কারবেলো অবশ্য স্পেনের জাতীয় দলের হয়ে খেলেন না। তবে টেরেসার খেলা দেখতে মাঠে থাকেন তিনি।