নিশানায়: ইটালির দ্বিতীয় গোল করার পথে পেসিনা। শনিবার। রয়টার্স
ইউরো ২০২০
ইটালি ২ অস্ট্রিয়া ১
ইউরো ২০২০-তে প্রথম ম্যাচ থেকেই ইটালির ফুটবল মুগ্ধ করছে। রবের্তো মানচিনি ৪-৩-৩ ছকে দলকে খেলাচ্ছেন। ইটালি মানেই রক্ষণাত্মক ফুটবল, এই ধারণাটা সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছেন। পাওলো রোসি, রবের্তো বাজ্জোদের আমলেও এত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে কখনও দেখিনি। শনিবার রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে অস্ট্রিয়াকে হারিয়ে শেষ আটে উঠল ইটালি। নেপথ্যে কোচ মানচিনির
দুরন্ত চাল।
আমি নিজে রক্ষণে খেলতাম। তাই বরাবরই আমার ইটালির খেলা ভাল লাগত। কারণ, রক্ষণাত্মক ফুটবলকে ওরা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। শনিবার রাতে ইউরো ২০২০-তে শেষ ষোলোয় অস্ট্রিয়ার খেলায় পুরনো ইটালির ছায়া দেখা গেল।
ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে শনিবার ইটালির প্রথম একাদশে দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম। ম্যানুয়েল লোকাতেল্লিকে বাদ দিয়ে দল সাজিয়েছেন মানচিনি। প্রত্যাশা মতোই অস্ট্রিয়ার কোচ ফ্রাঙ্কো ফোদা ৪-২-৩-১ ছকে দল সাজিয়েছিলেন। অঙ্কটা পরিষ্কার, এক) রক্ষণ মজবুত করে খেলতে হবে। কোনও অবস্থাতেই যাতে গোল করতে না পারে ইটালি। দুই) প্রতিআক্রমণে গোল করা চেষ্টা করা। ডেভিড আলাবার নেতৃত্বে ম্যাচের শুরু থেকেই অস্ট্রিয়া এই রণকৌশল নিয়েছিল। ইটালি আক্রমণে উঠলে দেখছিলাম, অস্ট্রিয়ার অন্তত আট-নয় জন ফুটবলার নেমে যাচ্ছে। নিজেদের পেনাল্টি বক্সের সামনে অদৃশ্য প্রাচীর তৈরি করছে।
গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচেই দেখেছিলাম, দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠছে ইটালি। এই ম্যাচে অস্ট্রিয়ার জার্মান কোচ চিয়ো ইমমোবিলেদের ডানা দু’টিই যেন কেটে দিয়েছিল। সমস্যা আরও বাড়ল লোকাতেল্লি না থাকায়। মাঝমাঠ থেকে ইটালির খেলাটা তৈরি করে। শুধু তা-ই নয়। নিজেও গতি বাড়িয়ে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে ঢুকে পড়ে। দূর পাল্লার শটে গোলও করতে পারে।
প্রথমার্ধ গোলশূন্য ভাবে শেষ হওয়ায় বারবার মনে হচ্ছিল, প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করতে না পারলে সমস্যা পড়বে ইটালি। কারণ, অস্ট্রিয়া এক ইঞ্চিও জমি ছাড়বে না ইমমোবিলেদের। ৬৫ মিনিটে মার্কো আরনাউতোভিচ গোল করে এগিয়ে দেয় অস্ট্রিয়াকে। ভিডিয়ো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অফসাইডের কারণে তা বাতিল করে দেন রেফারি। এর পরে এর আর মানচিনি ঝুঁকি নেননি। ভেরাত্তির জায়গায় লোকাতেল্লি ও বারেল্লার পরিবর্তে মাতেয়ো পেসিনাকে নামান তিনি। আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ে ইটালির। তবে সেরা চাল অবশ্যই নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে বেরার্দির পরিবর্তে ফেডেরিকো কিয়েসা ও ইমমোবিলের জায়গায় আন্দ্রেয়া বেলোত্তিকে মাঠে নামানো। তবুও নির্ধারিত সময়ে গোল হয়নি।
অতিরিক্ত সময় শুরু হওয়ার আগে দেখলাম মাঠের মধ্যে ফুটবলারদের নিয়ো গোল হয়ে দাঁড়িয়ে মানচিনি বোঝাচ্ছিলেন। টানা নব্বই মিনিট খেলে ফুটবলারেরা ক্লান্ত থাকে। ওদের উজ্জীবিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। সেই কাজটাই ইটালি কোচ করলেন দুর্দান্ত ভাবে। তাই খেলা শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই স্পিনাজ়োলার পাস বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সে বল ধরে বাঁ-পায়ের শটে জালে জড়িয়ে দেয় কিয়েসা। ১০৬ মিনিটে ২-০ করে পরিবর্ত হিসেবে নামা আর এক তারকা পেসিনা।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে অস্ট্রিয়া ০-২ পিছিয়ে পড়ার পরেও লড়াই ছাড়েনি। সাসা কালাজদজ়িচ ১১৪ মিনিটে ব্যবধান কমালেও দলের হার বাঁচাতে পারেনি।