Rafael Nadal

Rafael Nadal: জবাব দিচ্ছে পা, অনিশ্চয়তার অস্ত্রোপচারের আগে উইম্বলডন জিততে চান নাদাল

অস্ত্রোপচার অনিশ্চিত করতে পারে নাদালের স্বাভাবিক জীবন। কোর্টে ফেরার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ। এখন চিকিৎসকদের অস্ত্র রেডিয়ো-ফ্রিকোয়েন্সি ইঞ্জেকশন।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২২ ১৪:১৫
রাফায়েল নাদাল।

রাফায়েল নাদাল। ছবি: এএফপি

রাফায়েল নাদাল। টেনিস তাঁকে দিয়েছে ১৪টি ফরাসি ওপেন-সহ ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম। অলিম্পিক্স সিঙ্গলসে সোনা। সঙ্গে দিয়েছে বাঁ-পায়ের মারাত্মক চোট!

তিন বছর বয়সে শুরু হওয়া টেনিসজীবন কি শেষ লগ্নে? গোটা বিষয়টাই নির্ভর করছে নাদালের পায়ের চোটের উপর। পেশাদার টেনিস জীবনের শুরুর দিকেই বাঁ-পায়ের পাতায় চোট পান নাদাল। তা নিয়েই খেলে চলেছেন বছরের পর বছর, প্রতিযোগিতার পর প্রতিযোগিতা। জিতেছেন একের পর এক খেতাব।

Advertisement

চিকিৎসার পরিভাষায় নাদালের চোটের নাম ‘মুলার-ওয়েইস সিনড্রোম’। ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রে এই চোট বেশ বিরল। এই চোটের ফলে পায়ের পাতার মাঝামাঝি অংশের হাড়ে ‘অস্টিওনেক্রাসিস’ হয়। অর্থাৎ, ঠিক মতো রক্ত সঞ্চালন হয় না। পরের হাড়ে রক্ত পৌঁছতে পারে না। ফলে পায়ের ওই অংশে সব সময় যন্ত্রণা হয়। সেই যন্ত্রণা কখনও কখনও এতটাই বেড়ে যায় যে, মাটিতে পা রাখাই দায় হয়ে ওঠে। এমনই মারাত্মক চোট নিয়ে পেশাদার টেনিস খেলে চলেছেন নাদাল।

মুশকিল হল, অস্ত্রোপচার না করিয়ে এই চোট থেকে পুরোপুরি মুক্তির কোনও উপায় নেই। যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসা চালাতে হয় সব সময়। কখনও চিকিৎসায় সাড়া দেয় পা, কখনও দেয় না। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, অস্ত্রোপচার করলে চোট থেকে মুক্তি মিলতে পারে। যদিও জটিল অস্ত্রোপচারের সাফল্য সম্পর্কে নিশ্চিত নন তাঁরা। হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তেমন হলে স্বাভাবিক হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে যেতে পারে।

সেই আশঙ্কা থেকেই নাদালের চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের টেবিলে নিয়ে যাননি ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিককে। বরং নিয়মিত চিকিৎসায় নাদালের চোট সামলানোর চেষ্টা করেছেন। সেই চেষ্টা সব সময় নাদালকে স্বস্তি দিতে পারেনি। টেনিস কোর্টে মাঝেমধ্যেই পায়ের পাতার চোট ভুগিয়েছে। কিন্তু স্পেনীয় তারকা হাল ছাড়েননি। প্রতিপক্ষের মতো লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন চোটের বিরুদ্ধেও।

তিন সপ্তাহ আগেও নাদাল নিশ্চিত ছিলেন না যে, ফরাসি ওপেন খেলতে পারবেন। পায়ের ব্যথা অসহ্য হয়ে উঠেছিল। শুধুমাত্র প্রিয় সুরকির কোর্টে গ্র্যান্ড স্ল্যাম বলেই মনের জোর সম্বল করে নেমে পড়েছিলেন। প্যারিসে সঙ্গে এনেছিলেন ব্যক্তিগত চিকিৎসককেও। দ্বিতীয় রাউন্ডে জেতার পর যন্ত্রণা আরও বাড়ে। ওষুধে কাজ না হওয়ায় অন্য পরিকল্পনা করেন নাদালের চিকিৎসক। ইঞ্জেকশন দিয়ে অসাড় করে দেন নাদালের বাঁ পায়ের চোটের সেই অংশ। যাতে চোটের জায়গা থেকে ব্যথার তরঙ্গটাই না ওঠে। সেই নিয়েই ১৪তম ফরাসি ওপেন জয়।

ইতিহাস বলছে, নাদাল ১৪তম ফরাসি ওপেন জিতেছেন। আসলে জিতেছে তাঁর মনের জোর। নাদাল বলেছেন, ‘‘শেষ দু’সপ্তাহ চরম পরিস্থিতির মধ্যে খেলতে হয়েছে। ইঞ্জেকশন দিয়ে পায়ের শিরা অসাড় করে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। সে জন্যই খেলতে পেরেছি। আমার পায়ে কোনও অনুভূতি নেই।’’ টুর্নামেন্ট চলাকালীন প্রতিদিন ইঞ্জেকশন নিতে হত তাঁকে।

প্রতিযোগিতার মাঝেই নাদাল বলেছিলেন, প্রতিটি ম্যাচ খেলছেন শেষ ম্যাচ মনে করে। যে কোনও মুহূর্তে যন্ত্রণা ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল। বস্তুত, নাদালও জানতেন, এ ভাবে বেশি দিন খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সে জন্যই হয়তো আরও বেশি করে এ বারের ফরাসি ওপেন জিততে চেয়েছিলেন।

এই চোট নিয়ে উইম্বলডন খেলার সম্ভাবনা কম। তা-ও চেষ্টা করতে চান নাদাল। বলেছেন, ‘‘শরীর উইম্বলডন খেলার মতো পরিস্থিতিতে থাকলে খেলব। উইম্বলডনের মতো প্রতিযোগিতার বাইরে থাকা যায় না। এখন প্রশ্ন করলে পরিষ্কার উত্তর দিতে পারব না। চিকিৎসার পর কেমন থাকব জানি না। তবে আর এক বার উইম্বলডন জিততে চাই।’’

চিকিৎসকরা নাদালকে দ্রুত চিকিৎসা শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। না হলে বড় ক্ষতি হতে পারে। অস্ত্রোপচার নয়। প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত শিরা দু’টিতে রেডিয়ো-ফ্রিকোয়েন্সি ইঞ্জেকশন দেবেন তাঁরা। এই ইঞ্জেকশন বেশ কষ্টদায়ক। ইঞ্জেকশনের প্রভাবে শিরার মধ্যে জ্বলুনি হয়। কাজ হলে আরও কিছু দিন খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন নাদাল। নইলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ, যা অনিশ্চয়তায় ভরা। শুধু টেনিস খেলাই নয়, অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও।

চিকিৎসকরা নাদালকে বিষয়টি জানিয়েছেন। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক বলেছেন, ‘‘রেডিয়ো-ফ্রিকোয়েন্সি ইঞ্জেকশন নিয়ে একটা চেষ্টা করব। কাজ করলে ভাল। আরও কিছু দিন খেলব। কাজ না করলে অন্য কিছু ভাবব। নিজের জীবনের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফল অনিশ্চিত জেনেও একটা বড় সিদ্ধান্ত নেব। সেই সময় নিজেকে আবার প্রশ্ন করব।’’

অস্ত্রোপচার হলে দীর্ঘদিন কোর্টের বাইরে থাকতেও হবে নাদালকে। কোর্টে ফিরলেও কী অবস্থায় থাকবেন, তাতেও রয়েছে ধোঁয়াশা। তাই সে পথে এখনই হাঁটতে মন সায় দিচ্ছে না তাঁর। নাদালের কাছে টেনিস কোর্টের বাইরে থাকা পায়ের অসহ্য যন্ত্রণার থেকেও কষ্টের। প্রায় গোটা পেশাদার জীবনই তো খেললেন ‘মুলার-ওয়েইস সিনড্রোম’ সঙ্গী করেই। না হয় আরও কিছুটা পথ এগোলেন আহত বাঁ পা নিয়েই।

ফরাসি ওপেনের ট্রফি নিয়ে নাদাল।

ফরাসি ওপেনের ট্রফি নিয়ে নাদাল। ছবি: এএফপি

নাদাল চাইছেন। বোধহয় টেনিসও তা-ই চাইছে। নাদাল অবসরের গ্রহে পা রাখা মানেই তো বিরাট শূন্যতা!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আরও পড়ুন
Advertisement