করিনা কপূর খান, সইফ আলি খান আর অমৃতা সিংহ যেন এক সুতোয় গাঁথা! গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বাবাকে ছ’বার ছুরি দিয়ে কোপানো হয়েছে। খবর জেনেই হাসপাতালে দৌড়েছেন সারা আলি খান, আব্রাহিম আলি খান। বাবাকে বাঁচাতে একরত্তি তৈমুর আলি খান সে দিন সইফ আলি খানের ঢাল। অভিনেতার হাত ধরে অটোয় করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে বছর আটেকের ছোট ছেলেটি। নিজেকে সামলে সইফের ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন করিনা কপূর খান। প্রত্যেকে প্রত্যেকের মতো করে বিপদে সইফের পাশে।
কেবল নীরব অমৃতা সিংহ, অভিনেতার প্রাক্তন স্ত্রী। যেন লক্ষ যোজন দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক নীরব দর্শক। যিনি কেবলই দ্রষ্টা, বক্তা নন! বলিউড বলছে, তার পরেও তিনি এবং করিনা সমান্তরাল ভাবে উপস্থিত সইফের জীবনে। হয়তো পারস্পরিক বাক্যালাপ নেই। কাদা ছোড়াছুড়িও নেই। আলাদা বলয়ে বাস তাঁদের। অথচ তাঁরা সমান গুরুত্বপূর্ণ সইফের জীবনে।
অভিনেতা যেন প্রাক্তন আর বর্তমানের মধ্যেকার সেতুবন্ধ! কী ভাবে?
উত্তর খোঁজার আগে বরং আরও এক বার দেখে নেওয়া যাক উভয়ের অবস্থান। আশি এবং নব্বই দশক জুড়ে হিন্দি বিনোদন দুনিয়ায় অমৃতার আধিপত্য। ‘বেতাব’ ছবিতে প্রথম উপস্থিতি। প্রথম ছবিতেই জনপ্রিয় তিনি। অমৃতা এমন এক অভিনেত্রী যিনি পর্দায় রূপের জৌলুস ছড়ানোর পাশাপাশি অভিনয়েও সমান দক্ষ। ১৯৯১ সালে যখন তিনি সইফকে বিয়ে করেন তখনও তিনি অভিনেতা কম, শর্মিলা ঠাকুর-মনসুর আলি খান পটৌদীর বড় ছেলে।
বিয়ের পর অভিনেত্রীর দূরত্ব বাড়ে স্পটলাইট থেকে। একটা সময়ের পর তিনি কেবলই নবাব-ঘরনি। দুই সন্তান সারা, ইব্রাহিমের জন্ম। একটা সময়ের পর বিচ্ছেদ। অমৃতা তখন বিনোদন জগৎ থেকে অনেক দূরে। তার মানে তিনি অভিনয় ভুলে গিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। বরং ‘টু স্টেটস’ বা ‘হিন্দি মিডিয়াম’ ছবিতে ফের নিজেকে প্রমাণ করেছেন। করিনা এই প্রজন্মের অভিনেত্রী। সাল ২০০০-এ তাঁর প্রথম ছবি ‘রিফিউজি’। ‘অশোকা’, ‘চামেলি’, ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘জব উই মেট’-এর মতো ছবিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। সঙ্গে বড় বড় বিজ্ঞাপনী ছবি, কপূর বংশের ঐতিহ্য।
দুই প্রান্তে থেকেও তাঁদের সইফ-যোগ উভয়ের সন্তানেরা। অমৃতা নিজে উপস্থিত থাকেন না। সইফকে নিয়ে বা করিনাকে নিয়ে কোনও মন্তব্যও করেন না। সারা-ইব্রাহিমকে তাঁদের বাবার কাছে যেতে আটকানও না। যেমন, আটকাননি গত বৃহস্পতিবার, সইফের ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর। একই ভাবে করিনাও অমৃতাকে নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও কুকথা বলেননি। উল্টে করিনাকে ‘ভাল মা’-এর তকমা দিয়েছেন সারা। দু’জনে দু’জনের সঙ্গে সময়ও কাটান।
আরবসাগরের লোনা জল অনেক বিরহগাথা, অনেক যন্ত্রণার অশ্রুতে লবণাক্ত। তার মধ্যেও সহাবস্থান রয়েছে। যার জোরে সইফ আগামীতে উঁচু গলায় বলতে পারবেন, “আমার পাশে আমার চার সন্তান আছে।”