(বাঁ দিক থেকে) মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, ঋষভ পন্থ এবং শাহরুখ খান। —ফাইল চিত্র।
আইপিএলের নিলাম মানেই বিভিন্ন ক্রিকেটারের কোটিপতি হওয়া। আগামী আইপিএলের জন্য নিলামে সবচেয়ে বেশি কাড়াকাড়ি হবে ঋষভ পন্থকে নিয়ে। তাঁকে অধিনায়ক করার জন্য ঝাঁপাবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। পন্থের জন্য টাকার থলি নিয়ে ঝাঁপাতে পারে চেন্নাই সুপার কিংসও। ইতিমধ্যেই মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে দেখা করেছেন পন্থ। নিলামে পন্থের জন্য কলকাতা বনাম চেন্নাই লড়াই হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। ছেড়ে দেবে না রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুও।
কেন কলকাতার প্রয়োজন পন্থকে
গত বারের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারকে ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা। যে ছ’জন ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে, সেই তালিকায় কোনও উইকেটরক্ষক নেই। জানা গেল, নিলামে তাই অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষকের জন্য ঝাঁপাবে কলকাতা। কেকেআরের যুক্তি, পন্থকে পেলে একসঙ্গে এই দু’টি প্রয়োজন মিটে যাবে শাহরুখ খানের দলের। সেই সঙ্গে মিডল অর্ডারে ঝোড়ো ব্যাটিং করার কাজটাও করে দিতে পারবেন পন্থ। তাঁকে পেলে কেকেআর যে শক্তিশালী হবে বলাই যায়। কলকাতা ধরে রেখেছে সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, বরুণ চক্রবর্তী, রিঙ্কু সিংহ, রমনদীপ সিংহ এবং হর্ষিত রানাকে। তাঁদের মধ্যে রাসেল এবং নারাইনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু দু’জনেই কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে। কলকাতা চাইছে এক জন দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়ক।
কী ভাবে আসরে ঢুকল চেন্নাই
দিল্লিতে ধোনির সঙ্গে দেখা করেছেন পন্থ। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন সুরেশ রায়নাও। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলতেন তিনি। ধোনিকে রেখে দিয়েছে চেন্নাই। এমন দু’জনের সঙ্গে পন্থের সাক্ষাৎ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রায়না বলেন, “দিল্লিতে আমি ধোনির সঙ্গে দেখা করি। সেখানে আমাদের সঙ্গে পন্থও ছিল। কেউ এক জন খুব তাড়াতাড়ি হলুদ জার্সি পরবে।” ধোনি এত দিন চেন্নাইয়েই রয়েছেন। ফলে তাঁর নতুন করে হলুদ জার্সি পরার কোনও ব্যাপার নেই। তাই মনে করা হচ্ছে পন্থের কথাই বলেছেন রায়না।
কেন চেন্নাইয়ের প্রয়োজন পন্থকে
চেন্নাই দলে উইকেটরক্ষক হিসাবে ধোনি রয়েছেন। কিন্তু ৪৩ বছরের ধোনির হাঁটুতে চোট রয়েছে। গত দু’টি মরসুমে সেই চোট নিয়েই খেলেছেন তিনি। এ বারে তাই সব ম্যাচে তাঁকে খেলতে দেখা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তার উপর উইকেটরক্ষা করার ধকল সবচেয়ে বেশি। তাই এখন থেকেই ধোনির পরিবর্ত খুঁজে নিতে চাইছে চেন্নাই। সেই জায়গায় তাদেরও পছন্দ নাকি পন্থ। চেন্নাই গত মরসুমে রুতুরাজ গায়কোয়াড়কে অধিনায়ক করেছে। এ বারেও তাঁকে রিটেন করেছে। ফলে এই মরসুমে তাঁকেই অধিনায়ক হিসাবে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু চেন্নাই এক জন অভিজ্ঞ অধিনায়ককে দলে রাখতে চাইবে। সেই জায়গা নিতে পারেন পন্থ। সঙ্গে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং তো আছেই।
পন্থের জন্য ঝাঁপাতে পারে বেঙ্গালুরুও
বেঙ্গালুরুর এক জন উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়ক প্রয়োজন। গত বারের উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক অবসর নিয়েছেন। গত বারের অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসিকেও দলে রাখেনি বেঙ্গালুরু। জানা গেল, উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়ক হিসাবে পন্থের কথা ভাবছে তারাও। যদিও বিরাট কোহলির নাম অধিনায়ক হিসাবে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু অনেকেই বলছেন, এক বার নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়া বিরাট আবার সেই দায়িত্ব নেবেন না। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়া বিরাটকে ২১ কোটি টাকা দিয়ে রেখেছে বেঙ্গালুরু। কিন্তু তিনি নিজের ব্যাটিংয়েই বেশি মন দিতে চান। সেই কারণে অন্য কোনও অধিনায়ক খুঁজতে পারে বেঙ্গালুরু। পন্থ হতে পারেন সেই বিকল্প। অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক একসঙ্গে পেতে হলে তাঁকে নিতেই পারে বেঙ্গালুরু। যদিও লখনউ সুপার জায়ান্টস লোকেশ রাহুলকে ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি পুরনো দলে ফিরতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু পন্থ এবং রাহুলের মধ্যে এক জনকে নেবে।
টাকার লড়াইয়ে কে কোথায়?
নিলামে বেঙ্গালুরুর হাতে থাকছে ৮৩ কোটি টাকা। ফলে পন্থকে নেওয়ার জন্য দর বাড়লে তারা লড়াইয়ে থাকবে। টাকার লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়তে পারে চেন্নাই এবং কলকাতা। ধোনির দলের হাতে রয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। কলকাতার হাতে ৫১ কোটি টাকা। সেখানে বেঙ্গালুরুর হাতে অনেকটাই বেশি টাকা রয়েছে। যদিও পঞ্জাব কিংস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, পন্থকে দলে নিতে তারা ৩০ কোটি টাকা দিতেও রাজি। তাদের হাতে ১১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা থাকায় তারা এই সাহস দেখাতেই পারে। প্রীতি জ়িন্টার দলও ছেড়ে দিয়েছে তাদের অধিনায়ক শিখর ধাওয়ানকে। সেই সঙ্গে দলে কোনও উইকেটরক্ষকও রাখেনি পঞ্জাব। ফলে পন্থকে নেওয়ার জন্য ঝাঁপাতেই পারে তারা। পন্থের দাম ৩০ কোটি টাকা উঠলে তখন কিন্তু পঞ্জাব ছাড়া বাকি কোনও দলের পক্ষে তা দেওয়া কঠিন হবে।
কেন দিল্লির প্রয়োজন নেই পন্থকে?
পন্থকে যে দিল্লি রাখবে না তা রিটেনশনের আগেই বোঝা যাচ্ছিল। নিলামে উঠলে পন্থ অনেক বেশি টাকা পেতে পারেন বলে মত। সেই কারণেই দিল্লিতে থাকতে রাজি হননি তিনি। পঞ্জাব রিটেনশনের আগেই পন্থকে ৩০ কোটি টাকা দিয়ে নেওয়ার কথা শুনিয়ে রেখেছিল। দিল্লির পক্ষে অত টাকা দিয়ে পন্থকে রেখে দেওয়া সম্ভব হত না। সে ক্ষেত্রে নিলামে অনেক কম টাকা নিয়ে নামতে হত তাদের। সেটা করতে রাজি ছিল না দিল্লি। সেই কারণেই পন্থকে ছেড়ে দিয়েছে তারা। রেখে দিয়েছে তরুণ উইকেটরক্ষক অভিষেক পোড়েলকে। ফলে দিল্লির উইকেটরক্ষক নেওয়ার জন্য বিশেষ না ভাবলেও চলবে। তবে নিলামে কত দর উঠছে সেটা বুঝে আরটিএম ব্যবহারে করে পন্থকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকছে দিল্লির কাছে। তাদের হাতে রয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। উইকেটরক্ষকের প্রয়োজন না হলেও দিল্লিরও এক জন অধিনায়ক প্রয়োজন।