সম্প্রতি নবান্নের সভাঘরে প্রশাসনিক বৈঠকে স্বাস্থ্যে রেফার বন্ধ না হওয়া নিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং রোগী হয়রানি প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথাও বলেছেন।
যত দিন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের পক্ষে অত্যাধুনিক চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা দুঃসাধ্য হয়ে উঠছে। সে ক্ষেত্রে এঁদের একটা বড় অংশ এখনও সরকারি হাসপাতালের উপরে নির্ভরশীল। এরই মধ্যে, রোগী ‘রেফার করা’ এক স্বাভাবিক চিত্র। সেখান থেকে রেহাই দিতে সেন্ট্রাল রেফারাল সিস্টেম চালু হয়। নিয়মানুযায়ী, যে কোনও সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীকে যদি উপযুক্ত কারণে ‘রেফার’ করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে কোন হাসপাতালে পাঠালে উপযুক্ত চিকিৎসা মিলবে, তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেখানে বেড খালি আছে কি না, তাও দেখে নিতে পারবেন ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার। কোথাও বেড খালি থাকলে সেখানে তিনি চিকিৎসার কাগজপত্র অনলাইনে পাঠিয়ে দিলে সেই হাসপাতালের চিকিৎসক কাগজ দেখে পরিকাঠামো অনুযায়ী সম্মতি দিলে তৎক্ষণাৎ রোগীকে সেখানে পাঠাতে হবে। উক্ত হাসপাতালই তখন বেডের ব্যবস্থা করে চিকিৎসা শুরু করবে। নির্দিষ্ট পরিকাঠামোর অনুপস্থিতিতে অন্য হাসপাতালে সেই কাগজ পাঠাতে হবে। রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসন আধুনিকীকরণের মাধ্যমে নীচের তলার এই গ্রামীণ হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পরিষেবা চালু করার সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককেও দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ রোগীদের, এমনকি কোথাও কোথাও অর্ধেক শল্য চিকিৎসা করে ক্ষতস্থান কোনও ক্রমে ঢেকে ‘এই রোগের চিকিৎসা এখানে হয় না’ জানিয়ে অস্বাস্থ্যকর ভাবে জেলা হাসপাতালে রোগীদের রেফারাল সিস্টেম মারফত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে রোগীর ক্ষতি হচ্ছে, জীবনহানিরও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোন ধরনের রোগী বেশি রেফার হচ্ছেন— প্রতি মাসে সে তথ্য খতিয়ে দেখা প্রয়োজনীয় বলে জানানো হলেও সঠিক তথ্য রাজ্যের কাছে পেশ করা হয় না। ফলে পরিষেবা একমুখী হচ্ছে। অর্থাৎ, নিচু তলার হাসপাতালে উক্ত পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও তারা রোগী রেফার করিয়ে অন্য হাসপাতালে চাপ বৃদ্ধি করছে, এতে রোগীদের হয়রানি বাড়ছে, যথাযথ পরিষেবা থেকে বহু মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। একই দৃশ্য বহু মেডিক্যাল কলেজেও দেখা যায়, অর্থাৎ কেন্দ্রীয় রেফারাল সিস্টেম-এর অপব্যবহার করে সমগ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে কিছু অসাধু চক্র। অথচ, রেফারাল সিস্টেমের ভিত্তি মূলত পরিকাঠামো অনুযায়ী সবার জন্য সকল রোগের চিকিৎসা সুনির্দিষ্ট করা।
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এই মর্মে নির্দেশের পরে কঠোর পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারি নেতা-মন্ত্রী, সংগঠক, জনপ্রতিনিধিদের সকলের জন্য নির্দেশিকা পেশ করা প্রয়োজন যে, তাঁরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজ-সহ মহকুমা, জেলা, গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিসরেই চিকিৎসা করাতে বাধ্য থাকবেন, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলে তার পুরো খতিয়ান বিষয়ে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। এতে সরকারি স্বাস্থ্য পরিসরের ত্রুটিগুলো সামনে আসবে, এবং তার মূল্যায়ন করে বরাদ্দ অর্থ, পরিকাঠামোর হিসাব সম্পর্কেও স্বাস্থ্য প্রশাসন সুস্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে সমর্থ হবে।
শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০
নির্যাতন নয়
‘সাইবার বুলিয়িং’ বা ডিজিটাল নিপীড়ন সমাজমাধ্যমে ইদানীং ভয়ানক বেড়েছে। অতিমারি-পরবর্তী সময়ে মানুষের জীবন আরও বেশি ইন্টারনেট-নির্ভর হয়ে পড়ায় দুষ্কৃতী ও নিপীড়কেরা স্বাভাবিক ভাবেই বেছে নিয়েছে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে। তবে এই ডিজিটাল নির্যাতন যে শুধু জনসাধারণে আটকে নেই, পৌঁছে গিয়েছে সর্বোচ্চ পরিসরেও, সম্প্রতি তা ফুটে উঠল ধনকুবের ব্যবসায়ী ইলন মাস্কের একটি মন্তব্যে। কানাডার সদ্যপ্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর একটি ‘এক্স’ পোস্টের প্রত্যুত্তরে তিনি লিখলেন “গার্ল, তুমি আর কানাডার গভর্নর নও, তাই তোমার মন্তব্যেরও আর কোনও গুরুত্ব নেই।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার ইচ্ছা প্রকাশের বিরোধিতা করতে গিয়ে ট্রুডো তাঁর ‘এক্স’ পোস্টে লিখেছিলেন, “কানাডা কখনওই আমেরিকার ৫১তম রাজ্য হবে না।” এর উত্তরেই ইলন মাস্ক এই মন্তব্যটি করেন, যার সর্বাঙ্গে নারীবিদ্বেষ। জাস্টিন ট্রুডো এলজিবিটি মানুষের অধিকারের দাবিতে কথা বলেছেন, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্বর তুলেছেন বরাবর, বিরোধিতা করেছেন উগ্র জাতীয়তাবাদেরও। ট্রুডো সমকামী নন, কিন্তু সমকামীদের প্রতি তাঁর সহানুভূতি থাকার কারণে অনেক সময় তিনি সমাজমাধ্যমে বিদ্রুপের শিকার হয়েছেন এর আগে। তবে ইলন মাস্ক এ বার যা বললেন, তা ডিজিটাল-সহবত ও সভ্যতার চরম লঙ্ঘন— বললে ভুল বলা হয় কি?
সমাজতাত্ত্বিকরা বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কমবেশি নারী ও পুরুষের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। পরিবেশ ও পরিস্থিতির বিচারে তার আলাদা আলাদা প্রকাশ হয়ে থাকে। মাস্কের ‘গার্ল’ শব্দ প্রয়োগ ট্রুডোর প্রতি যে অশোভন শ্রেণি/লিঙ্গভিত্তিক ধারণা ও উপহাস-প্রবণতাকে প্রকাশ করেছে, তা অতি কুরুচিকর ও অশোভন। এটি কেবলমাত্র ট্রুডোকেই অসম্মান নয়, নারীসত্তার ধারণাকেও অবমাননা করার একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এক জন বিশ্বনেতার প্রতি এ ধরনের বাচিক হিংসা গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজে কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ কথাও মনে রাখার, সমাজমাধ্যমে ‘জনপ্রিয়’ ব্যক্তিদের মন্তব্যের প্রভাব কেবল রাজনৈতিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে না, সাধারণ মানুষের মনোভাবেও তা প্রতিফলিত হয়।
ইলন মাস্ক কোনও ‘সাধারণ’ মানুষ নন। ‘এক্স’ কোম্পানির মালিক তিনি। জানা নেই, তাঁকে এই মন্তব্য মুছতে বাধ্য করা হবে কি না, বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইন আদৌ বলবৎ হবে কি না। জাস্টিন ট্রুডোও হয়তো শেষ পর্যন্ত এ ঘটনা এড়িয়ে যাবেন। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে মানুষ দেখলেন মাস্কের এই অন্যায়। আমাদের দেশে এখনও বাড়ির মেয়ে অন্য ধর্মে-বর্ণে বিবাহ করলে চরম ঝুঁকি এমনকি জীবনাশঙ্কারও সম্মুখীন হয়, প্রিয়জনদের হাতেই। ইলন মাস্কের আচরণও সেই সর্বনিয়ন্তা ‘জ্যাঠামশাই’দের মতো। তাঁর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে এক সময় অতিমানব বলে ভাবা শুরু হয়েছিল। অথচ, তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করে দিলেন, মানুষ হিসেবে একুশ শতকে আমরা এতটুকু এগোইনি। আশঙ্কা, এর ফলে বিশ্বের নির্যাতনকারী পুরুষতন্ত্রের ধারক-বাহকেরা আরও সাহস পেয়ে যাবে। ফলে, আরও বাড়বে ডিজিটাল নির্যাতন, ডিজিটাল হয়রানি।
নীলোৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৫১
বানান বিপর্যয়
‘নামফলক-হোর্ডিং লিখতে হবে বাংলায়, বিজ্ঞপ্তি পুরসভার’ (১-১২) প্রতিবেদন সূত্রে কলকাতা পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হয়। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের সর্বত্রই এটা চালু করা দরকার। আশা করব পুরসভার অনেক ব্যর্থ উদ্যোগের মতো এটাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে না। কিন্তু একটা সমস্যা আছে। ‘কৃশ্ন টী ষ্টল’ বা ‘শারদিয়া দূর্গাপুজা’ জাতীয় বানান-বিপর্যয় রোধে কী ব্যবস্থার কথা কর্তৃপক্ষ ভাবছেন বা আদৌ ভেবেছেন কি না, জানতে ইচ্ছে হয়।
সৈকত রুদ্র, কলকাতা-১১০
বাস চাই
নাগেরবাজার থেকে যশোর রোড, দত্তবাগান, শ্যামবাজার, উল্টোডাঙা হয়ে সল্ট লেক যাওয়ার জন্য কোনও সরকারি বাস পরিষেবা নেই। সেটা চালু হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ইন্দ্রনীল ঘোষ, কলকাতা-৩৭