Rishabh Pant

কেন দিল্লিতে থাকতে অরাজি পন্থ? শুধুই টাকা নিয়ে মতভেদ নয়, নেপথ্যে অন্য কারণ

আইপিএলের আগামী মরসুমের আগে দিল্লি ক্যাপিটালস ধরে রাখেনি তাদের অধিনায়ক ঋষভ পন্থকে। কেন দিল্লি ছাড়লেন পন্থ? শুধুই কি টাকার অঙ্ক? না কি নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩২
cricket

ঋষভ পন্থ। —ফাইল চিত্র।

ঋষভ পন্থ যে আর দিল্লি ক্যাপিটালসে থাকতে রাজি নন তা আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। নিলামের আগে ধরে রাখা ক্রিকেটারদের তালিকা প্রকাশ হতে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। দিল্লি ক্যাপিটালস ধরে রাখেনি তাদের অধিনায়ক পন্থকে। অর্থাৎ, এ বার নিলামে নামবেন তিনি। কেন দিল্লি ছাড়লেন পন্থ? শুধুই কি টাকার অঙ্ক? না কি নেপথ্যে অন্য কারণ রয়েছে?

Advertisement

দিল্লির দুই মালিক নীতি

দিল্লি ক্যাপিটালসের মালিক যৌথ ভাবে জিএমআর ও জিএসডব্লিউ গোষ্ঠী। এত দিন যৌথ ভাবেই মালিকানা সামলাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু নতুন মরসুমের আগে নিজেদের নীতিতে বদল করেছে তারা। ঠিক হয়েছে, দিল্লি ক্যাপিটালসের ছেলেদের (আইপিএল) ও মেয়েদের (মহিলাদের আইপিএল) দলের মালিকানা দু’বছর করে দু’টি গোষ্ঠীর হাতে থাকবে। সেই মতো আগামী দু’বছরের জন্য ছেলেদের দলের মালিকানা থাকবে জিএমআর গোষ্ঠীর হাতে। মেয়েদের দলের মালিকানা থাকবে জিএসডব্লিউ গোষ্ঠীর হাতে। ২০২৭ সালে আবার মালিকানা বদলাবে। তখন দু’বছরের জন্য ছেলেদের দলের মালিকানা থাকবে জিএসডব্লিউ গোষ্ঠীর হাতে। মেয়েদের দলের মালিকানা থাকবে জিএমআর গোষ্ঠীর হাতে।

দিল্লির এই দুই মালিক নীতি পন্থের পছন্দ হয়নি। তাঁর মনে হয়েছে এতে দলের খেলার ধরনে সমস্যা হতে পারে। দুই মালিকের চিন্তা যে এক হবে তার নিশ্চয়তা নেই। দু’জন আলাদা ভাবনায় দল চালানোর কথা ভাবতে পারেন। ফলে দু’বছর অন্তর দল বদলে যেতে পারে। তাতে সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

পন্টিং, সৌরভের সরে যাওয়া

মালিকানা আলাদা হয়ে যাওয়ায় বদলে গিয়েছে দিল্লির কোচিং দলও। প্রধান কোচ রিকি পন্টিংকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলের নতুন প্রধান কোচ হেমঙ্গ বাদানি। ডিরেক্টর অফ ক্রিকেটের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেও। তিনি এখন শুধু মহিলাদের দলের দায়িত্ব থাকবেন। নতুন ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট করা হয়েছে বেণুগোপাল রাওকে। পন্টিং ও সৌরভের সঙ্গে পন্থের সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল। নতুন কোচিং দলও পছন্দ নয় পন্থের। তাই থাকতে রাজি হননি তিনি।

নিলামে পন্থের দিকে নজর কম দিল্লির

পন্থকে যে দিল্লি রাখবে না তা রিটেনশনের আগেই বোঝা যাচ্ছিল। নিলামে উঠলে পন্থ অনেক বেশি টাকা পেতে পারেন বলে মত। সেই কারণেই দিল্লিতে থাকতে রাজি হননি তিনি। পঞ্জাব রিটেনশনের আগেই পন্থকে ৩০ কোটি টাকা দিয়ে নেওয়ার কথা শুনিয়ে রেখেছিল। দিল্লির পক্ষে অত টাকা দিয়ে পন্থকে রেখে দেওয়া সম্ভব হত না। সে ক্ষেত্রে নিলামে অনেক কম টাকা নিয়ে নামতে হত তাদের। সেটা করতে রাজি ছিল না দিল্লি। সেই কারণেই পন্থকে ছেড়ে দিয়েছে তারা। রেখে দিয়েছে তরুণ উইকেটরক্ষক অভিষেক পোড়েলকে। ফলে দিল্লির উইকেটরক্ষক নেওয়ার জন্য বিশেষ না ভাবলেও চলবে। তবে নিলামে কত দর উঠছে সেটা বুঝে আরটিএম ব্যবহারে করে পন্থকে ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকছে দিল্লির কাছে। তাদের হাতে রয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। তবে নিলামে পন্থের দাম বেশি উঠলে তাঁর জন্য আরটিএম ব্যবহার করবে না দিল্লি। ফলে পন্থের দিল্লিতে ফেরার সম্ভাবনা অনেক কম।

পন্থের দিকে নজর কলকাতার

গত বারের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারকে ছেড়ে দিয়েছে কলকাতা। যে ছ’জন ক্রিকেটারকে রাখা হয়েছে, সেই তালিকায় কোনও উইকেটরক্ষক নেই। জানা গেল, নিলামে তাই অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষকের জন্য ঝাঁপাবে কলকাতা। কেকেআরের যুক্তি, পন্থকে পেলে একসঙ্গে এই দু’টি প্রয়োজন মিটে যাবে শাহরুখ খানের দলের। সেই সঙ্গে মিডল অর্ডারে ঝোড়ো ব্যাটিং করার কাজটাও করে দিতে পারবেন পন্থ। তাঁকে পেলে কেকেআর যে শক্তিশালী হবে বলাই যায়। কলকাতা ধরে রেখেছে সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেল, বরুণ চক্রবর্তী, রিঙ্কু সিংহ, রমনদীপ সিংহ এবং হর্ষিত রানাকে। তাঁদের মধ্যে রাসেল এবং নারাইনের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু দু’জনেই কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে। কলকাতা চাইছে এক জন দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়ক।

আসরে চেন্নাই

দিল্লিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে দেখা করেছেন পন্থ। সেই সময় উপস্থিত ছিলেন সুরেশ রায়নাও। চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলতেন তিনি। ধোনিকে রেখে দিয়েছে চেন্নাই। এমন দু’জনের সঙ্গে পন্থের সাক্ষাৎ ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রায়না বলেন, “দিল্লিতে আমি ধোনির সঙ্গে দেখা করি। সেখানে আমাদের সঙ্গে পন্থও ছিল। কেউ এক জন খুব তাড়াতাড়ি হলুদ জার্সি পরবে।” ধোনি এত দিন চেন্নাইয়েই রয়েছেন। ফলে তাঁর নতুন করে হলুদ জার্সি পরার কোনও ব্যাপার নেই। তাই মনে করা হচ্ছে পন্থের কথাই বলেছেন রায়না। ফলে কলকাতাই একমাত্র দল নয় যারা পন্থকে নেওয়ার কথা ভাবছে।

পন্থের জন্য ঝাঁপাতে পারে বেঙ্গালুরুও

বেঙ্গালুরুর এক জন উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়ক প্রয়োজন। গত বারের উইকেটরক্ষক দীনেশ কার্তিক অবসর নিয়েছেন। গত বারের অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসিকেও দলে রাখেনি বেঙ্গালুরু। উইকেটরক্ষক এবং অধিনায়ক হিসাবে পন্থের কথা ভাবছে তারাও। যদিও বিরাট কোহলির নাম অধিনায়ক হিসাবে শোনা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেওয়া বিরাটকে ২১ কোটি টাকা দিয়ে রেখেছে বেঙ্গালুরু। কিন্তু তিনি নিজের ব্যাটিংয়েই বেশি মন দিতে চান। সেই কারণে অন্য কোনও অধিনায়ক খুঁজতে পারে বেঙ্গালুরু। পন্থ হতে পারেন সেই বিকল্প। অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক একসঙ্গে পেতে হলে তাঁকে নিতেই পারে বেঙ্গালুরু। যদিও লখনউ সুপার জায়ান্টস লোকেশ রাহুলকে ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি পুরনো দলে ফিরতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু পন্থ এবং রাহুলের মধ্যে এক জনকে নেওয়ার চেষ্টা করবে।

আরও পড়ুন
Advertisement