ডিং লিরেনকে হারানোর পর ভারতের ডি গুকেশ। দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে। ছবি: পিটিআই।
চলছে দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। সেখানে প্রথম ম্যাচে হার ও দ্বিতীয় ম্যাচে ড্রয়ের পর তৃতীয় ম্যাচ জিতেছেন ভারতের ডি গুকেশ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ডিং লিরেনকে হারিয়ে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা পেয়েছেন তিনি। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারলে কত টাকা পাবেন ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার।
বিশ্ব দাবার নিয়ামক সংস্থা ফিডে-র নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মোট পুরস্কার মূল্য ২১ কোটি টাকা। কিন্তু প্রতিযোগিতা শেষে সেই টাকা দেওয়া হয় না। প্রতিটি ম্যাচ জিতলে ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা করে পান সেই প্রতিযোগী। ড্র করলে সেই টাকা দু’জনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, প্রথম ম্যাচ জিতে লিরেনও ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। দ্বিতীয় ম্যাচ ড্র হওয়ায় সেই টাকা দু’জনের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সাধারণত ১৪টি ম্যাচ হয়। সেখানে কোনও প্রতিযোগী যদি ৭.৫-৬.৫ বা ৮-৬ ব্যবধানে জেতেন তা হলেও টাকার অঙ্কে প্রতিপক্ষের থেকে খুব বেশি পান না তিনি। অর্থাৎ, পুরো ১৪ রাউন্ড খেলা হওয়ার পরে গুকেশ জিতলে তিনি ১১ কোটি টাকা পাবেন। অপর দিকে লিরেন পাবেন ১০ কোটি টাকা।
তবে যদি ১৪টি ম্যাচের আগে কেউ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে যান, তা হলে হিসাব একটু অন্য রকম হবে। সে রকম হলে যে ক’টি ম্যাচ হবে সেই ম্যাচের টাকা দেওয়ার পরে ২১ কোটির মধ্যে যা টাকা বাকি থাকবে তা দু’জনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, যদি পরের ছ’টি ম্যাচ জিতে গুকেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে যান, তা হলে সেই ছ’টি ম্যাচের প্রতিটির জন্য ১ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা করে পাবেন তিনি। ২১ কোটির মধ্যে বাকি যা টাকা থাকবে তা গুকেশ ও লিরেনের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে।
সিঙ্গাপুরে হচ্ছে দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। প্রথম দু’টি গেমে তেমন সুবিধা করতে পারেননি গুকেশ। বুধবার তিনি প্রথম থেকেই আগ্রাসী ছিলেন। লিরেন অবশ্য সহজে হার মানেননি। দুই দাবাড়ুই প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার চেষ্টা করে গিয়েছেন গোটা গেমে। বেশ উত্তেজক খেলা হয়েছে। এক পর্যায়ে এসে সময়ের চাপে পড়ে যান চিনের বিশ্বজয়ী গ্র্যান্ডমাস্টার। সেই সুযোগ কাজে লাগতে ভুল করেননি ১৮ বছরের ভারতীয়। শেষ পর্যন্ত সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলার সুবিধা কাজে লাগিয়ে ৩৭ চালে জয় ছিনিয়ে নেন গুকেশ।
গুকেশের কৌশলের সামনে কিছুটা চাপে পড়ে যান লিরেন। ৩০ চালের পর তাঁর হাতে ছিল মাত্র ৬ মিনিট। খেলার পরিস্থিতি অনুযায়ী, সে সময় চিনা গ্র্যান্ডমাস্টারকে অন্তত ন’-দশটি চাল দিতে হত। সেই চাপই আর শেষ পর্যন্ত সামলাতে পারেননি তিনি। তার আগেই ২৮ চালের পর সুবিধাজনক জায়গায় চলে গিয়েছিলেন গুকেশ। ফলে লিরেন আরও চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। ১৮তম চালে একটি ভুল করে ফেলেন লিরেন। ভুল সামাল দিতে অনেকটা সময় নিয়ে নেন তিনি। ২০ চালের পর দেখা যায় তাঁর হাতে রয়েছে ২২ মিনিট। অন্য দিকে, গুকেশের হাতে সে সময় ছিল প্রায় এক ঘণ্টা সময়। লিরেনের ভুলের সুযোগও কাজে লাগান গুকেশ। তৃতীয় গেম জিতে ১৪ ম্যাচের সিরিজ়ে ১.৫-১.৫ করলেন গুকেশ। বৃহস্পতিবার বিরতি। শুক্রবার হবে চতুর্থ রাউন্ডের খেলা।
জয়ের পর গুকেশ বলেছেন, ‘‘এই জয় একটা দারুণ অনুভূতি। আগের দু’দিনও নিজের পারফরম্যান্সে খুশি ছিলাম। তৃতীয় গেমটা অনেক ভাল খেলতে পেরেছি। খেলা চলার সময়ই মনে হচ্ছিল, ভাল কিছু হতে পারে। প্রতিপক্ষকে অনেকটা দাপটের সঙ্গে হারাতে পেরেছি। সাদা ঘুঁটি নিয়ে খেলার একটা সুবিধা থাকে। সেটা এ দিন কাজে লাগাতে পেরেছি। প্রতিপক্ষের তুলনায় ভাল খেলেছি বলেই জিতেছি। এটাই ইতিবাচক।’’